বুধবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৫ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

পর্ব-১

যে তুমি টলেমির বোন, বধূ

মাত্র একুশটি বছরই তিনি রাজ্য শাসন করেছেন। তার পূর্বপুরুষ ও পূর্ব নারীরা গ্রিস থেকে আগত। প্রায় তিনশো বছর আগে নীল নদের এই দেশে এসে রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর গ্রিক জন্মের গৌরববোধ থেকে যতই এদেশীয় নারীদের সঙ্গে মেলামেশা রোধে কঠোর আইন জারি করা হোক বা এমনকি রাজমুকুট ধরে রাখতে রাজ পরিবারে ভাই ও বোনের বিয়ের প্রথা চালু হোক, যেমনটা ইতিহাস জুড়েই দেখা দেয় যে বহিরাগতরা ভিন্ন ভূ-খণ্ডে এসে অনেক প্রজন্ম ধরে বাস করতে থাকলে একটা সময় রক্তের অবিমিশ্রতা আর ধরে রাখা যায় না।

মহারাজ টলেমি প্রথম সোতেরের বংশধর টলেমি দ্বাদশ ওলেতেসের কথাই ধরা যাক। তার কন্যা ফিলোপেতর কিন্তু আর দশটি গ্রিক মেয়ের মত দীর্ঘকায় নয়। বলতে গেলে খর্বকায়। বর্ণে ততটা শুভ্রাও নয়। চুল খানিকটা কোঁকড়া ও কালো, বর্ণ অনেকটাই তামাটে বা আরও সঠিকভাবে বললে প্রায় মসী বর্ণ ঘেঁষে। কিন্তু টলেমি রাজবংশে এই ফিলোপেতরই প্রথম রাজকন্যা যে মিশরীয় ভাষা শিখছে।

‘তুমি কেন এত কষ্ট করে এতগুলো ভাষা শিখছ, ফিলোপেতর?’ মহারাজা ওলেতেস কৌতূহলী হয়ে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন।
‘আমার মনে হয় আজ এত এত প্রজন্ম ধরে আমরা এই দেশে বাস করছি। কিন্ত একটি দেশের মানুষের ভাষা না শিখলে বা জানলে বহিরাগতই থেকে যাওয়া হয়। আমরা কি শুধু শাসকই রয়ে যাব? এদেশের হব না কখনো? এদের ভাষাকে ভালবাসব না? জানব না? এ ছাড়া যত বেশি ভাষা জানা যায়, ততই নানা ভূ-খণ্ডের মানুষের হৃদয়ের উত্তাপ ও চিন্তার গতি-প্রকৃতি বোঝা যায়, যা একজন শাসকের জন্য খুবই কাজে লাগে।‘

মুগ্ধ বিষ্ময়ে ফিলোপেতরের দিকে তাকিয়ে থাকেন ওলেতেস। শৈশব থেকেই ফিলোপেতরের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নিত্য নতুন ভাষা শিক্ষায়। গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা বা ভূগোল যে সে পছন্দ করে না, তা‘ নয়। তবে একদম কোলে-পিঠে চড়ার সময় থেকে ফিলোপেতর প্রাসাদের ইথিওপীয় দাসীর কাছ থেকে চট করে শিখে নিচ্ছে অসংখ্য ইথিওপীয় শব্দ, পার্সী মালীর কাছ থেকে জেনে নিচ্ছে পার্সী ভাষায় নানা ফুলের নানা নাম, গন্ধদ্রব্য বেচতে আসা আরবীয় বণিককে জিজ্ঞাসা করছে আরবি ভাষায় বিভিন্ন গন্ধদ্রব্যের প্রতিশব্দ; গ্রিক ও লাতিন ত‘ রাজকন্যা হিসেবে তাকে পড়তেই হয়, সিরীয় ঘোড়সহিসকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করছে ঘোড়াকে সিরীয় ভাষায় কি বলে, মিশরীয় পুরোহিতদের কাছ থেকে মিশরীয় আর আরামিক কবিতা সেই বালিকা বয়সেই সে শুনে শুনে পাখি পড়া করছে। আর একটু বড় হতেই ফিলোপেতরের বাবার কাছে একই দাবি বা জেদ তাকে বিভিন্ন ভাষা শেখানো হোক। ফিলোপেতরের বড় বোন কিন্তু দেখতে-শুনতে বিশুদ্ধ গ্রিক। যেমন দীর্ঘকায় তেমনি শুভ্রা। তবে সে সমরবিদ্যায় বেশি আগ্রহী। ঘোড়া ছোটাবে বা তলোয়ার চালাবে। ফিলোপেতর অশ্ব বা তরবারির চেয়ে পড়াশোনায় বেশি আগ্রহী। তা‘ দেখতে দেখতে নয়টা ভাষা অনর্গল পড়তে-লিখতে-বলতে শিখে গেল ফিলোপেতর। কেন জানি না বাদামী, কোঁকড়াচুলো ছোট মেয়ের প্রতিই মহারাজা ওলেতেসের সূক্ষ টানটি রাজপ্রাসাদের সবাই বুঝতে পারে। ওলেতেসের প্রায়ই মনে হয় তার আপাত: মিশরীয় দর্শনা এই মেয়েটি অসম্ভব প্রতিভার অধিকারী। নাহলে একটি পনেরো বছরের মেয়ে নয়টি ভাষায় অনর্গল কথা বলে স্বদেশ সহ আশপাশের নানা রাজ্যের মানুষের হৃদয় জয় করছে? ওলেতেস আরও লক্ষ্য করেছেন যে তার বিশুদ্ধ গ্রিক দর্শনা, সমরবিদ ও ঢ্যাঙ্গা লম্বা, ফ্যাকফেকে সাদা বড় কন্যার পাশে দাঁড়িয়েই শ্যামবর্ণা, হ্রস্বকায় ও কালো চুলের ফিলোপেতর যখন নয়টি ভাষায় কথা বলা শুরু করে, রাজসভায় আসা সেনাপতি-অমাত্য-মন্ত্রী ও নানা দেশ থেকে আগত পুরুষদের চেহারার অবস্থা তখন দেখার মত হয়! যেন কোনো যাদুকরী সামনে দাঁড়িয়ে তার যাদুদণ্ড দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে এক অনিঃশেষ মন্ত্রজাল! আর ছোট মেয়েও বাবার তেমন ন্যাওটা। বাবা রোমে যাবেন মিশরের বার্ষিক কর একটু কমানোর আবেদন করতে। ছোট মেয়ে হাজির হয়ে গেল,
‘আমি আপনার সঙ্গে চলি?’
‘বহু দূরের পথ, মা!’
‘কিছু হবে না। আমাকে আপনার সঙ্গী হতে অনুমতি ত‘ দিন?’
‘চলো তবে!’

মহারাজাও জানেন যে শুধু গ্রিক-লাতিনের আভিজাত্য নয়, দীর্ঘ অশ্ব-শিবিকা-উষ্ট্র-খচ্চরের পিঠে চলা ও আরও ক্লান্তিকর নৌপথে ফিলোপেতর শুধু নানা ভাষা বলে বলে খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে নানা দেশের ও নানা সমাজের মানুষের হৃদয় জয় করে ও তাদের নানা সাহায্য নিয়ে এই দুরূহ যাত্রা অনেকটাই সুগম করে আনবে। কিন্তু রোমে যেতে যেতে ও রোমক সিনেটরদের সঙ্গে বার্ষিক করের বোঝা কমানোর দেন-দরবার করতে করতেই যে বিশুদ্ধ গ্রিক দর্শনা, জ্যেষ্ঠ ও সমরবিদ কন্যা বেরেনিস যে নিজেই পিতার সিংহাসন নিজ অধিকারে পেতে একটি বিদ্রোহ আয়োজন করে ফেলবে, এটা ওলেতেস কল্পনাও করেননি।
‘তোমার বড় বোন বিদ্রোহ করেছে, শুনেছো?‘
‘শুনেছি।‘
‘এখন তাহলে আমরা কি করব?‘
‘রোমক সিনেটররা আপনার অনুরোধ শুনেছে। মিশরের বার্ষিক কর অনেকটাই কমাতে রাজি হয়েছে। খুব অল্প সময়ের সফরে আমরা তাদের কাছ থেকে অনেকটা হৃদ্যতা ও অন্তরঙ্গতা অর্জনে সমর্থ হয়েছি। তাদের অনুরোধ করলে কি তারা এ বিদ্রোহ দমনে আমাদের কিছু সেনা সাহায্য করবে না?’
‘তুমি বলছো কি ফিলোপেতর? এত অল্প সময়ের সফরে এত বড় অনুরোধ কি করা যায়?
‘আপনি দেখুনই না বলে!’
‘তাহলে তোমাকেই সেটা বলতে হবে। সত্যি বলতে...আমি যেন এখনি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। এ ক‘দিন আমি শুধু তোমার সঙ্গে থেকেছি। সিনেটরদের সঙ্গে তোমার নয়টি ভাষার বাগ্মীতা দিয়ে, অসম্ভব কূটনৈতিক দক্ষতায় দেশের জন্য যা কিছু করার তুমিই ত‘ করলে। তবে কাল সকালে এই প্রস্তাবও তোমাকেই দিতে হবে।‘
‘আপনি নিশ্চিত থাকুন।‘

ওলেতেস পরিতৃপ্তির নিশ্বাস ছাড়েন। তার দুই পুত্র নিতান্তই ছোট আজো। বড় দুই মেয়েকেই তাই পুত্রের মত বড় করতে হয়েছে। বড়টি সমরবিদ্যার দিকে ঝুঁকলো ছোটটি ঝুঁকলো পাঠ ও কূটনীতিতে। তবে নৃপতি হিসেবে ওলেতেস জানেন রাজশাসনে সমরবিদ্যার চেয়েও পান্ডিত্য আর রাজনীতির জ্ঞানই বেশি কাজে দেয়। তলোয়ার চালাতে বেতনভোগী সৈনিক বা সেনাপতিরা তো থাকেই। দরকার পরিচালনার বুদ্ধি। সেটা তার ক্ষিপ্র অশ্বারোহিনী ও অসিচালিকা বড় মেয়ের চেয়ে নয়টি ভাষা জানা ছোট মেয়েরই যে ঢের ঢের বেশি তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বড় মেয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করলো কেন? অল্প বয়সেই ওদের মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তামাটে বর্ণা আর হ্রস্বকায় বলে টলেমি রাজবংশের সবাই গ্রিক দর্শনা বড় মেয়েটিকে বেশি ভালবাসতো বলেই ছোট মেয়ের দিকে তিনি ঝুঁকে গেছিলেন? নাকি ফিলোপেতরের প্রবল মেধাও তার দৃষ্টি টেনেছিল বেশি? সেই সুপ্ত ক্রোধ থেকেই কি এত বড় কাণ্ড ঘটালো বড় মেয়ে?

‘মহামান্য রোমক সিনেট- আমি, মিশরের নৃপতি টলেমি দ্বাদশ ওলেতেসের কন্যা ক্লিওপেট্রা সপ্তম ফিলোপেতর, মিশরের বার্ষিক কর হ্রাস করার আবেদনের প্রস্তাব গ্রহণ করায় মিশরের নৃপতি ও জনগণের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিবাদন জ্ঞাপন করছি। তবে, কর হ্রাসের আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার মুহূর্তেই এক ঘোর দু:সংবাদ আমার পিতা নৃপতি টলেমি দ্বাদশ ওলেতেস ও আমার হৃদয়কে শঙ্কাকুল করে তুলেছে এবং এ বিষয়ে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি!’
পঞ্চদশী ফিলোপেতর, এক মাথা সাপের ফনার মত কোঁকড়া চুল আর বাদামী বর্ণা ও হ্রস্বকায় মেয়েটি, রোমক সিনেটের অসংখ্য বর্ষীয়ান পুরুষের সামনে মাথা নিচু করে অভিবাদনের ভঙ্গিতে দু‘হাত ছাড়িয়ে মেলে দেয় তার ন‘টি ভাষার সম্ভার। রিনরিনে সুরেলা কণ্ঠস্বরে লাতিন থেকে গ্রিক, গ্রিক থেকে হিব্রু বা আরামিক, কখনো সিরীয় বা আরবি নানা রূপক-প্রবচন-উপমা-অলঙ্কারে সমৃদ্ধ তার নাতিদীর্ঘ অথচ হৃদয় জয় করা বক্তব্যে তাক লেগে যায় পক্ককেশ রোমক সিনেটরদের।
‘ওলেতেস তো দেখতে বিশুদ্ধ গ্রিক। তবে শুনেছি মিশরীয় রক্ত আছে এমন নারী বিয়ে করেছে ওদের বংশের কেউ কেউ। গত কয়েক প্রজন্ম ধরেই। সন্তান-সন্ততিরা তাই কেউ শুভ্র ও দীর্ঘকায়, কেউ কেউ স্থানীয় চেহারা পেয়েছে। কিন্ত এই মেয়েটি...বাদামী হোক আর হ্রস্ব হোক...এর জ্ঞান ও পান্ডিত্যের পাশে গ্রিক-রোমক নারী কেন, অনেক পুরুষও দাঁড়াতে পারবে না!’

‘তেমনটাই মনে হচ্ছে। এখনো দেহ পূর্ণ নারীর মত পরিপুষ্ট হয়নি- বলতে গেলে এখনো প্রায় নাবালিকা। তাতেই এই? এই মেয়ে বড় হলে কি হবে ভাবতেই ত্রাহি ত্রাহি লাগছে!’

মুগ্ধ রোমক সিনেটররা এ ওর সঙ্গে ফিসফাস করতে থাকেন।
‘হুম- ওর বাবা তো কিছুই করল না। কর হ্রাস করার আবেদন, যুক্তি পেশ, অনুরোধ-অনুনয় তো সব এই কিশোরীই করল। আহা, পিতৃপ্রাণ মেয়ে! ওর বড় বোন বিদ্রোহ করেছে? আপন পিতার বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলেছে? খুব খারাপ কথা!’
‘ভাইয়েরা এখনো ছোট ছোট। শিশু।’
‘তাহলে তো সেনা সাহায্য করাই উচিত। ফিলোপেতরের মোহিনী বক্তৃতা যে স্বর্গের দেবতারাও উপেক্ষা করতে পারবেন না!’
‘হা-হা- ঠিক বলেছো। প্রথম দর্শনে মনে হবে আদৌ সুন্দরী না। কেমন কালো রং, কালো চুল আর ছোটখাটো! কিন্তু যেই না কথা বলতে শুরু করে, অমনি ঘোর ধরে যায়!’
‘এ মেয়ে বড় হলে কি হবে?’
‘চলো-সেটা ভাবতে ভাবতেই রোম ওদের সেনা সাহায্য করুক।’

নীল নদের দুই তীরের মানুষই জানে যে নৃপতি ওলেতেস নন, তার পঞ্চদশ বর্ষীয়া দ্বিতীয়া কন্যা ফিলোপেতরই শুধু রোম থেকে মিশরের বার্ষিক কর কমিয়েই আনেনি, জ্যেষ্ঠ ভগ্নীর বিদ্রোহ দমন করতে পিতার পক্ষে বিশাল রোমক সেনাবাহিনীও নয়টি ভাষার বাগ্মীতা ও ক্ষুরধার যুক্তি ও কূটনৈতিক চাতুরি দিয়ে অর্জন করে এনেছে। সেটা সেই ৫৫ অব্দের কথা। বেরেনিস নিহত হলো বিদ্রোহ দমনের যুদ্ধে। বোঝা গেল যে দৈহিক শক্তির চেয়েও রাজনীতি আর চাতুরিই সবসময় জয়ী হয়। যেমনটা জিতে গেল- ওলেতেস অথবা ফিলোপেতর? কিন্তু বড় মেয়েকে হত্যার পর নৃপতি ওলেতেসও কেমন অবসাদে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন আর দ্রুতই বুড়িয়ে যেতে লাগলেন। মাত্র চার বছরের মাথায় যম তার শিয়রে এসে বসলেন।
‘ফিলোপেতর’
‘বলুন মহারাজ!’
‘আমি সম্ভবত: বেশি দিন আর বাঁচব না। বেরেনিস নিহত। তোমাকেই রাজ্য শাসন করতে হবে। কিন্তু তুমি জানো যে রাজ পুরোহিতেরা একশো ভাগ নারী শাসক পছন্দ করেন না। সেজন্যই হোক বা আমাদের এই টলেমি রাজবংশ রক্তের বিশুদ্ধতার জন্যই হোক, ভাই ও বোনের বিয়ের যে রীতি প্রচলন করে গেছেন...তোমার মা-ও আমার বোন ছিলেন! এই বংশে প্রত্যেক ভাই বা রাজাই হচ্ছে টলেমি আর প্রত্যেক বোন বা রানীই হচ্ছে ক্লিওপেট্রা। এটাই আমাদের বংশীয় উপাধি।‘
‘সে তো জানিই, পিতা! তবু এত কড়াকড়ি করেও একশো ভাগ গ্রিক বিশুদ্ধতা কি রক্ষা করা গেছে? আমি নিজেই কি দেখতে অনেকটা এদেশীয়দের মত নই?’
‘তিনশো বছর ভিন্ন এক ভূ-খণ্ডে বাস করলে রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা যায় না। এই টলেমি রাজ বংশে বারোটি ভাই-বোন বিয়ের পরেও মিশরীয় রক্ত ঢুকে গেছে। আসলে একদম সূচনালগ্নে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এসে স্থানীয় নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক হলে সন্তান-সন্ততি যে আর গ্রিকদের মত হবে না, সেটা বুঝতে পারেননি। দেখতে দেখতে যখন বোঝা গেল যে রক্তের বিশুদ্ধতা আর রক্ষা করা যাচ্ছে না, তখন নিয়ম-কানুন কঠোর করা হলো ঠিকই, ভাই-বোন বিয়েও চালু হলো...তবে ততদিনেই মিশ্রণ অনেকটাই যা হবার হয়ে গেছে। যে কথা বলছিলাম...!’
‘বলুন?’
‘তোমার মা আমার বোন হলেও মাত্র এক বছরের ছোট ছিলেন। আমার পিতামহ বিয়ে করেছিলেন তার দু‘বছরের বড় বোন বা ক্লিওপেট্রাকে। মোট কথা, সব পাশাপাশি বয়সের বলে দাম্পত্যে বাধা হয়নি কিন্তু...আমি জানি...রাজশাসন ধরে রাখার জন্য তোমাকে বিয়ে করতে হবে তোমার পরের ভাই থিওস ফিলোপেতর দ্বিতীয়কে, যার বয়স মাত্র দশ। তার পরের ভাইটি আরো ছোট। আমি জানি যে উনিশ বছরের তরুণীর সঙ্গে দশ বছরের বালকের দাম্পত্য খুব সুখকর নয়। কিন্তু রাজ্যের স্বার্থে, সিংহাসনের স্বার্থে আর প্রজাশাসনের স্বার্থে...’
‘আমি আপনার নির্দেশ বুঝতে পারছি পিতা...কোন সমস্যা হবে না...যত দিন বেঁচে আছেন, আপনি তো রাজা আছেনই আমাদের সবার মাথার উপর! তারপর রাজ পুরোহিতদের নির্দেশে আমার যা যা করণীয়, সবই আমি পালন করব। অক্ষরে অক্ষরে।‘

‘রাজকুমারী ফিলোপেতর!’ মেমফিসের মন্দিরের প্রধান পুরোহিত স্বয়ং এসে রাজসভায় এসে ফিলোপেতরের সামনে দাঁড়ান।
‘আজ্ঞা করুন, প্রধান পুরোহিত!’
‘নৃপতি ওলেতেসের মৃত্যুর পর তার যাবতীয় শেষকৃত্য সুষ্ঠুভাবে পালিত হয়েছে। এই রাজ্যের নতুন শাসক হিসেবে, দেশবাসী বা প্রজামণ্ডলী আপনার ভ্রাতা টলেমি থিওস ফিলোপেতর দ্বিতীয় ও আপনার শুভ বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।‘
‘আমার অমত নেই। রাজ্য ও প্রজামন্ডলীর মঙ্গলার্থে আমার করণীয় সবকিছুই আমি মেনে চলবো।‘
‘মিশর ও তার মানুষের জন্য আপনার প্রগাঢ় প্রেমের কথা কারো অবিদিত নয়, রাজকুমারী! আমি তবে পাঁজি-পুথি দেখে শুভ দিন-ক্ষণ স্থির করি?’
‘করুন।‘
‘জয় যুবরাজ ও যুবরাণী টলেমি থিওস ফিলোপেতর দ্বিতীয়, ক্লিওপেট্রা সপ্তম ফিলোপেতরের জয়!’
প্রধান পুরোহিত গলা তুলতেই সভায় উপস্থিত অন্য পুরোহিত, মন্ত্রী-সেনাপতি-অমাত্যবর্গ সবাই গলা তুললেও ফিলোপেতরের জন্য মৃদু অস্বস্তিও শুরু হয় অনেকের।
‘টলেমি-ক্লিওপেট্রা বা ভাই-বোন বিয়ে এই রাজবংশে নতুন কিছু নয়। দুই/তিন বছরের ছোট বোন বা এক/দুই বছরের ছোট ভাই হলে সমস্যা না। দু‘জনেই যৌবনে পৌঁছালে ওই সামান্য ব্যবধানে দাম্পত্য বা সন্তান জন্মদানে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু এই দশ বছরের বালক এই উনিশের যুবতীর চাওয়া-পাওয়া কি করে মেটাবে? এমন সব মুহূর্তেই রাজপ্রাসাদে দেখা দেয় সমস্যা, গুপ্ত প্রণয় ও ব্যভিচার চরমে ওঠে। এমনকি রাজনারীদের সঙ্গে কোন সুদর্শন, সুঠাম ক্রীতদাসের প্রণয়ও তখন আর অসম্ভব থাকে না।‘
‘যাক- রাজকুমারী ফিলোপেতর বরাবরই বুদ্ধিমতী, বিবেচক। দেশের স্বার্থই তার বরাবরের প্রাধান্য। আর সারাদিন তার যা ব্যস্ততা। ওই বালক স্বামী তো আর দেশ চালাবে না! দেশ চালাবেন ফিলোপেতরই। শুধু কিনা নারী একা কোন রাজ্যশাসন করতে পারে না- তেমনটা ধর্মে বা আইনে বিধান নেই। তাই বালক পতি ও ভ্রাতাকে সামনে রেখে তাঁকেই যা করার করতে হবে।‘
‘আহা-বিয়ের দিনে কেমন সাজবেন ফিলোপেতর? হোন শ্যামবর্ণা বা হ্রস্বকায়া, তিনি কথা বলতে শুরু করলে পুরুষেরা যে তার পায়ে সব গড়াগড়ি খেতে শুরু করে!’
‘শুনছি- তার বিয়ের সাজের প্রস্তুতি এখনি শুরু হয়ে গেছে!’

চলবে….

আরএ

Header Ad
Header Ad

আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা রেলের আন্দোলনে: নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাব্বানির শ্বশুর

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের বিশেষ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতির ফলে সারাদেশে রেল চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। রানিং স্টাফদের মধ্যে ট্রেনচালক, গার্ড, সহকারী চালক এবং টিটিই অন্তর্ভুক্ত, যারা ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এই কর্মীদের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। তাদের দাবি, ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা মাইলেজসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো পুনরায় কার্যকর করতে হবে।

এই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা এবিএম শফিকুল আলম ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানির শ্বশুর। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ তিনি আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ২০২১ সালে তিনি তার ফেসবুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন। এছাড়া তার সাম্প্রতিক পোস্টগুলোতেও আওয়ামী লীগ সমর্থনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আন্দোলনের পেছনে রানিং স্টাফদের দাবি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে তাদের অনেক সুবিধা বাতিল করা হলেও কিছু সুবিধা পুনর্বহাল করা হয়েছিল। তবে এখন তারা দাবি করছেন, এসব সুবিধা পুরোপুরি ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ২০২২ সালে এমনই এক কর্মবিরতির মাধ্যমে তাদের কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে তারা পূর্বের সুবিধাগুলো সম্পূর্ণভাবে কার্যকরের বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীদের জন্য এই বিশেষ সুবিধা অনুমোদন করেনি। তাই রানিং স্টাফদের জন্য এটি চালু রাখার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এমন আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

এদিকে, এই আন্দোলনের ফলে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের পরিবহন খাতেও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। রানিং স্টাফ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, তারা গত ১৭ বছর ধরে এই দাবিতে আন্দোলন করছেন এবং বর্তমান আন্দোলন তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে।

Header Ad
Header Ad

বেরোবিতে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধাঁধা নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত

ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধাঁধা নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের গ্যালারিরুমে “দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধাঁধা: কী চাই এবং কেনো-কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ না গণতন্ত্র” শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে মূল বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সমাজ-রাজনীতি বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। সেমিনারের সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা কামাল।

কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, “মালদ্বীপ, পাকিস্তান এবং ভারতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা বিফল হয়েছে। মালদ্বীপ রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়েছে। তবে ভারতবর্ষের মানুষ শাসনকে ভয় পায়, যা ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়।”

তিনি আরও বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে শিক্ষক, ছাত্র, গণমাধ্যমসহ অনেকে সরকারের তোষামোদ করেছেন। এতে শাসকের কার্যক্রমের সমালোচনা কম হয়েছে, যা ফ্যাসিবাদের বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে গত তিনটি নির্বাচন জনগণের মূল্যায়ন ছিল না।”

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী রেজুয়ান হোসেন, সহকারী অধ্যাপক মোছা. রাজিয়া সুলতানা ও মো. সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক মুনমুন আক্তার এবং জামিলুর রহমান।

এ সেমিনারটি দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

Header Ad
Header Ad

ভারতে গোমূত্রের পর এবার চীনে বিক্রি হচ্ছে বাঘমূত্র!

ছবি: সংগৃহীত

ভারতে গোমূত্র নিয়ে ব্যাপক চর্চার পর এবার চীনে শুরু হয়েছে বাঘমূত্র বিক্রি। বাঘমূত্রকে বাতজনিত রোগের কার্যকরী ওষুধ হিসেবে দাবি করছে চীনের সিচুয়ানের একটি চিড়িয়াখানা।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ইয়ান বিফেংশিয়া ওয়াইল্ডলাইফ জু নামে একটি চিড়িয়াখানা বোতলজাত বাঘমূত্র বিক্রি করছে। ২৫০ মিলিলিটারের প্রতিটি বোতলের দাম ধরা হয়েছে ৫০ ইউয়ান (প্রায় ৮৪৭ টাকা)।

ওই চিড়িয়াখানা দাবি করেছে, বাঘমূত্র বাতজনিত রোগ বা রিউম্যাটিজম সারাতে সহায়ক। ব্যবহারের জন্য মূত্রের সঙ্গে সামান্য হোয়াইট ওয়াইন এবং আদাকুচি মিশিয়ে ব্যথার জায়গায় প্রয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কেউ চাইলে মূত্র পান করেও ব্যথা কমাতে পারেন বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে বাঘমূত্র সেবনের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাঘেরা যে বেসিনে প্রস্রাব করে, সেখান থেকে মূত্র সংগ্রহ করা হয়। তবে এটি খুব সীমিত পরিমাণে বিক্রি হয়। প্রতিদিন মাত্র দুই বোতল বাঘমূত্র বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ভারতের মতো চীনের এই ঘটনা নিয়েও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষত, বাঘমূত্রের ওষুধ হিসেবে কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি এবং কৌতূহল দুটোই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা রেলের আন্দোলনে: নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাব্বানির শ্বশুর
বেরোবিতে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধাঁধা নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত
ভারতে গোমূত্রের পর এবার চীনে বিক্রি হচ্ছে বাঘমূত্র!
ব্রাজিল বাংলাদেশে নির্বাচন দেখতে চায়: আমীর খসরু
ছাত্র আন্দোলনের মুখে সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
আইনি লড়াইয়ে নয়নতারার বিপক্ষে ধানুশের বড় জয়
দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে চলছে: রিজভী
জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে ৫ আগস্টের মতো পরিণতি হবে: তারেক রহমান
ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসকে রক্ষা করতে চান? জেনে নিন উপায়
৩৩৭ জনকে নিয়োগ দেবে বন অধিদপ্তর, আবেদন অনলাইনে
নবাবগঞ্জে বিদেশি পিস্তল, গুলি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার, আটক ১
সব ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত
টাঙ্গাইলে দুই গ্রামের বিরোধের জেরে হামলা, বাবা-ছেলেসহ আহত ৩
ট্রেন ধর্মঘটে বেনাপোল স্টেশন ফাঁকা
দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার সাদ্দাম হোসেন
বিএনপির সাবেক এমপি আব্দুল মোমেন তালুকদার মারা গেছেন
ভারতে লাড্ডু বিতরণের সময় ভেঙে পড়ল ৬৫ ফুট উঁচু মঞ্চ, নিহত ৭
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনে লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি!
‘জবাই করা লাশ উদ্ধারসহ দাফন কাফন কাজে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে আসামিরা’
প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে