রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা

ভোরবেলা রানা ভাই ঘুম থেকে উঠার আগেই আমরা দুজন বেরিয়ে পড়লাম। স্ট্রিন্ডবার্গার রিসর্ট থেকে বেরিয়ে বাঁ দিকে সামান্য দূরেই বয়ে যাচ্ছে নীল নদ। ইচ্ছে করলে নীলের বাঁধানো তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাওয়া যায় অনেক দূরে। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে আমরা দিক পরিবর্তন করে ডাইন দিকের গলিপথে ঢুকে পড়লাম। আমাদের দেশের যে কোনো বড় শহরের অপরিসর, আবর্জনা ও জঞ্জালে পরিপূর্ণ ভোরের গলিপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভুলেই গিয়েছিলাম এটি ঢাকা নয় লুক্সর শহরের প্রান্তে একটি পাঁচতারা রিসর্টের পাশের একটি রাস্তা। পথে জনসমাগম নেই, তবে স্কুল ড্রেস পরা শিশুদের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলের পথে যেতে দেখা গেল। কিশোরী মেয়েদের এবং শিশুদের সঙ্গের বোরকা পরা নারী অভিভাবকদের দেখে বোঝার  উপায় নেই মিশর নাকি এটি বর্তমানের বাংলাদেশ। আমরা অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে লুক্সরের ঝকঝকে জগতের ঠিক বিপরীত বাস্তবতার খানিকটা দেখে এলাম। এখানেও গায়ে গায়ে ঘেঁষে গড়ে ওঠা গলিপথের বাড়িগুলোর মধ্যে দুই চারটে বাদ দিলে বেশির ভাগই রংচটা-বিবর্ণ, বোঝা যায় শহুরে মধ্যবিত্তের বসবাস এই এলাকায়। এক জায়গায় দুটি বাড়ির মধ্যবর্তী নিচু জায়গায় ডাস্টবিন উপচে পড়ছে আবর্জনা, চারিদিকে ছড়িয়ে আছে পলিথিন ব্যাগ এবং প্লাস্টিকের বোতল। শুধু এখানে কোনো কাক বা কুকুর চোখে পড়েনি। 

 লুক্সরের অশ্ব‐শকট

রিসর্টে ফিরে গোসল শেষে বাইরে বেরোবার প্রস্তুতি নিয়ে যখন নিচে এলাম, রেস্টুরেন্ট তখন কানায় কানায় পূর্ণ। ইচ্ছে ছিল বাইরে রেলিং দিয়ে ঘেরা চত্বরে টেবিলে বসে নীলের দিকে চোখ রেখে ধীরে সুস্থে ব্রেকফাস্ট করব। কিন্তু আমাদের অনেক আগেই সবগুলো টেবিল দখল করে বসে পড়েছেন নানা দেশের নানা বর্ণের বিচিত্র পোশাকের সব ভ্রমণবিলাসী মানুষ। আমরা তিনজনের জন্য একটা জায়গা খুঁজে বের করে দুজন বসে পড়লাম আর রানাভাই যথারীতি একটু দেরি করে এলেন। যে কোনো বড় রেস্টুরেন্টে বুফে ব্রেকফাস্টে পছন্দ মতো খাবার প্লেটে তুলে আনা আমার কাছে একটা ঝামেলার ব্যাপার। কুড়ি পঁচিশটা আইটেম হলে তাও দেখে শুনে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কিন্তু যেখানে পশ্চিমের পৃথিবী, আরব দুনিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং প্রাচীন মিশরের ঐতিহ্য বিশাল রেস্তোরাঁর  সুদীর্ঘ কয়েকটি টেবিলে এসে মিশেছে সেখান থেকে কিছু বেছে নেওয়া সত্যিই কঠিন। আমরা ঠাণ্ডা ফ্রুট জুস থেকে শুরু করে গরম কফি পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পরিক্রমা শেষে যখন ক্ষ্যান্ত দিলাম তখন প্রায় দশটা বেজে গেছে। 

 

রিসর্টের সামনে ট্যাক্সি ও টাঙ্গা 

কোনো শহরে অন্তত একটা দিন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বা পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে না পারলে সেই শহরের প্রায় কিছুই জানা হয় না। দিনের আলোয় লুক্সর শহর ঘুরে ফিরে দেখা, বিশেষ করে স্থানীয় বাজারে একটা চক্কর দেওয়া আর পথের পাশে কোনো সাধারণ রেস্টুরেন্টে বসে একবেলা স্থানীয় খাবার খাওয়ার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম সাড়ে দশটার দিকে। এখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বলতে আমাদের রামপুরা-এফডিসি রুটের মাইক্রোবাসের মতো বাহন দেখা যায়। পাশাপাশি রিক্সার বিকল্প হিসেবে আছে টাঙ্গা। স্ট্রিন্ডবার্গার থেকে বেরিয়ে একটু সামনে এগোতেই এক সারিতে বেশ কয়েকটা টাঙ্গা দাঁড়িয়ে আছে। ঘোড়াগুলো গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে কেউ জিরাচ্ছে আবার কেউ অকারণে পা ঠুকছে। ঘোড়ার মালিকদের অবস্থাও একই রকম। অশ্বশকটের আসনে বসে কেউ ঝিমাচ্ছে আবার কেউ কেউ অপ্রয়োজনেই হাঁটাহাঁটি করছে। গেটের বাইরে দুই একটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে মনে হয় যন্ত্রচালিত বাহনের চেয়ে ঘেড়ারগাড়ি এখানে এগিয়ে আছে। আমাদের দেশে টাঙ্গা এখনো বিরল বাহনে পরিণত হয়নি। কিন্তু অশ্বারোহনে পারদর্শী হলেও শ্বেতাঙ্গ পর্যটকেরা বোধহয় অশ্বচালিত বাহনে ঘোরাঘুরির সুযোগ খুব একটা পায় না। তাই লুক্সর শহরেও ঘোড়ার গাড়ি আরও অনেক দিন দাপটের সঙ্গেই চলাচল করতে পারবে বলে মনে হয়। রানা ভাই দুজনের সঙ্গে কথা বলে একশ পাউন্ড থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ষাট পাউন্ডে রফা করে গাড়িতে উঠে পাগড়ি এবং জুব্বাধারী চালকের পাশে বসে পড়লেন। কংক্রিটের সড়কে খটখট শব্দ তুলে টাঙ্গা চলতে শুরু করলে টাঙ্গাওয়ালা প্রস্তাব দিল, তোমরা যদি আমার টাঙ্গাতেই ফিরে আসা, তাহলে একশ কুড়ি নয়, তোমাদের একশ পাউন্ড দিলেই চলবে। রানা ভাই বললেন, ‘আমরা তো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার আগে শহর থেকে ফিরব না।’ টাঙ্গাওয়ালার তাতেও আপত্তি নেই। বললো, ‘আমি টাঙ্গা স্ট্যান্ডে তোমাদের জন্যে অপেক্ষা করব।’ বিষয়টা নিয়ে নিজেদের মধ্যে অলোচনা করে আমাদের মনে হয়েছে, বছরের এই সময়ে বিশেষ করে করোনা মহামারির পরে এখনো মিশরের পর্যটন বাণিজ্য পুরোপুরি জমে ওঠেনি। তাই হয়তো টাঙ্গাওয়ালা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে হলেও ফিরতি পথের যাত্রী হাতছাড়া করতে চায় না।

 লুক্সরের একটি বাজার

লুক্সরের কাঁচাবাজার কিংবা পথের পাশের সাধারণ রেস্টুরেন্টে নিশ্চয়ই ক্রেডিট কার্ড বা মার্কিন ডলার চলবে না। কাজেই শহরের বাজারে ঢুকে যাবার আগেই ডলার ভাঙানো দরকার। আমাদের চলার পথের দু’পাশে ব্যাংকের অভাব নেই। মূল সড়কের উপরেই একটা ব্যাংকের সামনে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। মেইন রোডে গাড়ি রাখলে পুলিশে ধরবে বলে টাঙ্গাওয়ালা তার ঘোড়া এবং গাড়ি নিয়ে পাশেই গলির মধ্যে ঢুকে পড়ল। এখানেও পুলিশ! দেশে বিদেশে ট্যাক্সিওয়ালা, অটো-রিক্সাওয়ালা, টাঙ্গাওয়ালা কারোরই পুলিশি হয়রানি থেকে নিস্তার নেই!

মশলার দোকান

সিঁড়ি দিয়ে উঠে ব্যাংকের প্রবেশ পথের বাইরে এটিএম মেশিনের মতো ডলার ঢুকিয়ে ইজিপশিয়ান পাউন্ড বের করে আনার মেশিনে একশ ডালারের একটা নোট ঢুকিয়ে দিলাম। একটু পরে স্ক্রিনে আরবি এবং ইংরেজিতে যে বার্তা ভেসে উঠলো তার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘তোমার কারেন্সি নোটটিকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না, বদলে দাও’। তারমানে কি এটা অচল একশ ডলারের নোট! একটু ভয় পেয়ে চারিপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ আবার দেখে ফেলেনি তো! অচল নোট দিয়ে পাউন্ড বের করার চেষ্টা দেখে পুলিশ ডাকবে না তো! তবে মেশিন বাহাদুর ‘রিপ্লেস’ করতে বলায় একটু ভরসা পেলাম, অন্য একটা নোট বের করে সাবধানে ঢুকিয়ে দিলাম। না, ভদ্রলোকের আবারও একই কথা, এই নোট চলবে না। এবারে একটু সাহস সঞ্চয় করে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। চারিদিকে ব্যস্ত লোকজনের মধ্যে একজনকে ধরে বললাম, ‘তোমাদের এটিএম থেকে তো কারেন্সি নোট বদলাতে পারছি না, সমস্যা কী?’ তিনি নিজেও ব্যাপারটা জানেন না, মনে হলো। আরেকজনের সঙ্গে আরবিতে বাতচিত করে জানালেন মেশিনটা একটু সমস্যা করছে, তুমি বরং পাশেই যে ব্যাংকটা আছে সেখানে যাও। এবারে রানা ভাইও আমার সঙ্গে এলেন। একশ ডলার নোটের সোজা দিক উল্টা দিক উল্টে-পাল্টে দেখে মেশিনে ঢুকিয়ে দেবার পরে মুহূর্তেই প্রায় হাজার দুয়েক ঈজিপ্টশিয়ান পাউন্ড বেরিয়ে এলো।

  বাজারের গলিপথে সাজানো প্যাপিরাস

আবার অশ্বশকটে উঠে লুক্সর শহরের পথে চলতে চলতে চোখে পড়ে সড়ক দ্বীপগুলোতে শোভা পাচ্ছে ব্রোঞ্জ কিংবা পাথরে তৈরি প্রাচীন মিশরীয় কোনো সুদৃশ্য প্রতীক। রোড ডিভাইডারগুলো সবুজ গাছপালা এবং রঙিন ফুলে সাজানো। দুপাশের উঁচু এবং ছোটবড় দালান কোঠার ফাঁকে ফাঁকেও বৃক্ষলতার আভাস দেখা যায়। এই পথে লুক্সরকে মনে হয় গাছপালায় ছাওয়া সুন্দর সবুজ নগরী। ছুটে চলা ঘোড়ার গাড়ির খটখট আওয়াজের সঙ্গে আমার হঠাৎ করেই একটা গানের কথা মনে হলো। আমি বেসুরো গলাতে বেশ জোরেই গেয়ে উঠি, ‘ও মোর পাগলা ঘোড়ারে...কই থনে কই লইয়া যায়...’ রানাভাই মুখ ফিরিয়ে বলেন, ‘এই ঘোড়া আমাদের খুব বেশি দূরে নিয়ে যাবে না। দুইটা বিখ্যাত বাজার হামিস অথবা আতা বাজার, এই দুটোর একটাতে নিয়ে যাবে।’ শেষ পর্যন্ত পাগলা ঘোড়া আমাদের কোন মার্কেটের সামনে নামিয়ে দিয়েছিল মনে নেই, তবে গন্তব্যে নামিয়ে দেবার আগেই জুব্বাধারী সহিস আমাদের টাঙ্গাস্ট্যান্ড চিনিয়ে দিয়েছিল, সেখানেই সে আমাদের ফেরার জন্যে অপেক্ষা করবে।

 

স্যুভেনিয়ারের দোকানে

কায়ারোর খানে খলিলি বাজারের মতো এখানেও দোকানিরা সাড়ে এগারোটার দিকে কেবল দোকানের ঝাঁপ খুলতে শুরু করেছে। আমরা সোনা-রূপা-পাথরের অলঙ্কার, তৈজসপত্র, মশলা-পাতি, পোশাক পরিচ্ছদ, বাতিদান-ফুলদানি, প্যাপিরাসের পাতায় আঁকা ছবি,  সুগন্ধি এবং  সুদৃশ্য স্যুভেনিয়ারের এক বিশাল জগতের ভেতর দিয়ে এগোতে থাকি। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম মিশরে কিছু স্যুভেনিয়ার ছাড়া কোনো কেনাকাটা হবে না। সেই কারণে আমি খুঁজছিলাম প্যাপিরাসের চিত্রকর্ম এবং সহজে বহনযোগ্য কিছু স্মারক। রানা ভাই একটা বড় রকমের মশলার দোকানে ঢুকে মশলাদারের সঙ্গে আলাপচারিতায় জমে গেলেন। কী নেই সেই মশলার দোকানে! পরিচিত দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, গোল মরিচ, জিরা, ধনিয়া, তেজপাতা থেকে শুরু করে নানা রকমের ডাল জাতীয় শস্যদানা, বিট লবন কাবাব চিনির মতো পরিচিত জিনিস থেকে নানা ধরনের অজানা ভেষজ অষুধের এক বিপুল সংগ্রহের ভেতরে ঢুকে রানা ভাই খুদের মতো বিশেষ ধরনের শস্য এবং অপ্রচলিত ডালের সঙ্গে আর্থারাইটিসের হারবাল রিমেডি কিনে ফেললেন। আমরা সে সময় পাশের একটি দোকানে প্যাপিরাসে চিত্রিত অসংখ্য ছবির মধ্যে থেকে নিজেদের পছন্দ মতো ছবি বেছে রাখছি। ছবি নির্বাচনের পালা শেষ হলে পাশের দোকান থেকে রানা ভাইকে ডেকে আনাটাই হেনার কাছে যৌক্তিক বলে মনে হলো। প্রথমত ভাষাগত সমস্যার কারণে প্যাপিরাসওয়ালার সঙ্গে দরদাম করে সুবিধা হচ্ছিল না। রানা ভাইয়ের দীর্ঘ প্রবাস জীবন ইরাকে কেটেছে বলে কাজ চালাবার মতো দু চারটে কথা দিব্যি আরবিতে চালিয়ে নিতে পারেন।  দ্বিতীয়ত দরদাম করে কোনো কিছু কেনার ব্যাপারে আমি একেবারেই আনাড়ি। বেছে রাখা গোটা পনের প্যাপিরাসের পাতার দাম এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেলে যখন প্রায় কিনে ফেলেছি সে সময় রানা ভাই এসে তা অর্ধেক করে ফেললেন। উৎসাহিত হয়ে আরো গোটা পাঁচেক বেশি প্যাপিরাস পাতা কিনে আমরা মহাআনন্দে খানিকটা সামনে একটা স্যুভেনিয়ারের দোকানে সেই একই প্রক্রিয়ায় দাম কমাবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কাঁসা পিতলের পাত্র ও বাতিদান, পাথরের ছোট ছোট স্ট্যাচু, চাবির রিং, ম্যাগনেট, স্টিকার এবং আরও নানা পসরা সাজানো দোকানের কট্টর মালিক শুরুতেই বলে দিয়েছিল ‘ফিক্সড প্রাইস’।

 লুক্সর শহরে

রানা ভাইয়ের আরবি এবং আমার ইংরেজি বাংলা মিলিয়ে দরদাম করেও কিছুতেই তাকে গলানো গেল না। অবশ্য দামের দিক থেকে বেশ যুক্তি সংগত বলে আমরা আর বেশি খোজাখুজি না করে তার কাছে থেকেই কিছু স্যুভেনিয়ার কিনে নিয়ে বললাম, ‘এ দেশে আসার পরে তোমার মতো হার্ড হার্টেড মিশরীয় এখন পর্যন্ত আমার চোখে পড়েনি।’  
সে কি বুঝল জানি না, তবে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটা ম্যাগনেট একটা করে সুন্দর প্লাস্টিকের প্যাকেটে ঢুকিয়ে প্যাকেট করে আমাদের হাতে দিয়ে বলল, ‘এই প্যাকেটের জন্য তোমাদের কোনো দাম দিতে হবে না।’

আমরা যখন স্যুভেনিয়ারের বাজার থেকে বেরিয়ে কাঁচা বাজারের দিকে যাচ্ছি তখন কাছেই কোনো একটা মসজিদ থেকে জোহরের নামাজের আজান ভেসে আসছে।

চলবে...        
              

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২

ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে টাঙ্গাইল-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর পৌর এলাকার কাইতকাই রূপালী ফিলিং স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ধনবাড়ী উপজেলা পৌর এলাকার চরভাতকুড়া গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে সিএনজি চালা হেলাল উদ্দিন (৫৫)। অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তিনি সিএনজি যাত্রী ছিলেন।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে মধুপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. মনজুরুল হক এ বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে দুর্ঘটনা কবলিত সিএনজি ধনবাড়ীর দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজির চালক ঘটনা স্থলে মারা যান। এ সময় গুরুতর আহত হয় এক যাত্রী।

এরপর তাকে উদ্ধার করে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে রাতেই হাসপাতালে তিনি মারা যায়।

এ ব্যাপারে মধুপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. মনজুরুল হক জানান, নিহত সিএনজি চালকের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

অপরদিকে, অজ্ঞাত ওই যাত্রীর পরিচয় পাওয়া যায়নি, শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন।

Header Ad
Header Ad

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা

হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজ ফ্লাইট শুরু আগামী মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল)। ওই দিন ৪১৯ জন সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। হজের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন হজযাত্রী সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন।

প্রথম ফ্লাইটটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। হজ ব্যবস্থাপনাকে নির্বিঘ্ন করতে সরকারি পর্যায়ে ১১২ জন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৭৪৩ জন গাইড দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ৭০ জন মোয়াল্লেম হজযাত্রীদের সার্বিক সহায়তা করবেন।

হজযাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি এয়ারলাইনস। ৩১ মে পর্যন্ত হজের ফ্লাইট চলবে। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন এবং শেষ হবে ১০ জুলাই।

পবিত্র হজ উপলক্ষে এ বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পরিচালনা করবে ১১৮টি, সাউদিয়া ৮০টি এবং নাস এয়ারলাইনস ৩৪টি ফ্লাইট।

হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা, যা ৯ জিলহজ মসজিদে নামিরা থেকে প্রদান করা হয়। এবারও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে হজের খুতবা, এবং তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হবে ২০টি ভাষায়। 

যেসব ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে সেগুলো হলো- বাংলা, ফরাসি (ফ্রেঞ্চ), মালয়, উর্দু, ফারসি, চাইনিজ, তুর্কি, রাশিয়ান, হাউসা, ইংরেজি, সুইডিশ, স্প্যানিশ, সোয়াহিলি, আমহারিক, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, বসনিয়ান, মালায়লাম, ফিলিপিনো এবং জার্মান। 

উল্লেখ্য, ১৪৪৬ হিজরির ৯ জিলহজ (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

Header Ad
Header Ad

ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহিদ রাজিতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত এই বন্দরে ঘটে বিপর্যয়টি।

ইরানের জরুরি সেবাবিভাগের মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বার্তাসংস্থা আইএলএনএ-কে জানান, একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তবে সেগুলোতে কান না দিয়ে সরকারি তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।”

সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট পরিসরে আগুন লাগার পর তা দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম এবং পরিবেশে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনারগুলোর মধ্যে সালফারজাতীয় রাসায়নিক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও কনটেইনারগুলোর সুনির্দিষ্ট উপাদান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, শহিদ রাজি বন্দরটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দরগুলোর একটি। এটি হরমুজ প্রণালির উত্তরে, বন্দর আব্বাস থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়, ফলে এ বন্দরের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

টাঙ্গাইলে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২
হজের ফ্লাইট শুরু মঙ্গলবার, উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা
ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত সাড়ে ৭ শতাধিক
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সিন্ধুর পানি ছাড়ল ভারত, হঠাৎ বন্যায় ডুবলো পাকিস্তানের কাশ্মীর
রিয়ালের হৃদয়ভাঙা রাত, কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
উত্তরায় সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় তরুণ-তরুণীর মৃত্যু
জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১০ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট
আবারও দুই ধাপে ৬ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
পাকিস্তানি হামলার আশঙ্কায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতীয়রা
চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করলো বিএনপি
আওয়ামী লীগ ভারতের গোলামী করা দল : নুরুল হক নুর
ইরানের রাজাই বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ, আহত ৫১৬ জন
প্রায় দুই ঘণ্টা পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
গোবিন্দগঞ্জে মৃত আওয়ামী লীগ নেতার নামে জামাতের মামলা
গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতারের দাবি পুলিশের
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই বাসীর গলার কাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ
গোবিন্দগঞ্জে গাঁজাসহ ট্রাকের চালক-হেলপার গ্রেপ্তার
আদমদীঘিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা তোহা গ্রেপ্তার