মতিন রায়হান
একগুচ্ছ কবিতা
ঝিনুকের হাড়
সমুদ্র আমাকে টানে, তা তো জানে নদী ও পাহাড়
আমি বয়ে যাই নিরবধি...কখনো কখনো বাঁধা পড়ি
দিগন্তের দূর মায়াজালে! জনাকীর্ণ বালুময় সমুদ্র
সৈকত, ঝাউবীথি মাথা তুলে দেখে নেয় অগণন
অচেনা পর্যটকের মুখ! শঙ্খ যদি বেজে ওঠে গোপন
ইথারে তবে ফেনায়িত জলে মৎস্যকুমারীর ছায়া!
ধীরলয়ে হাঁটে শামুক-ঝিনুক, নড়ে ওঠে ভেজা বালি,
তারামাছ ফোটে; কোথায় রয়েছে মুক্তারাশি, কারা
খোঁজে? ও পাহাড়, কে জুড়েছে আজ বিশ্রম্ভালাপ,
তোমার সঙ্গে? ঝিনুকেরা জানে মুক্তোজন্মে কতকাল
কেটে গেছে অদৃশ্য আঁধারে! ঠিক সূর্যস্নান শেষে
কারা তবে ফিরে যায় হোটেলের রুমে? সূর্য ডোবার
কাল : ডুবে যাবে ক্লান্ত সূর্য! মুছে যাবে দিগন্তের
সিঁথির সিঁদুর! তুমিও কি ডুবে যাবে ফেনায়িত
অন্ধকারে? গভীর সমুদ্রে ভাসে রোজ ঝিনুকের হাড়!
সমুদ্র আমাকে টানে, তা তো জানে নদী ও পাহাড়!
সন্ধ্যামায়াজাল
স্মৃতির ওপার থেকে কে যে এলো!
পায়ে বাজে রিনিঝিনি মল
সুন্দর এসেছে বুঝি!
ভাসলো কি রূপশতদল?
আলো-ছায়া, রোদ-বৃষ্টি
হাওয়ার নাচন
উড়ে যায় স্মৃতিহংস
হৃদি-সংবেদন!
মুহূর্তে মুহূর্ত বাজে
মহাকাল পায়েচলা পথ...
নদীও ভাঙে তীর
কালের তঞ্চক!
আমি যদি দিই ডুব
পদ্মফোটা জলে
তুমি তো জ্বলবে জানি
অদেখা অনলে!
প্রাণের কথারা যদি
ঘরে ঘরে মরে!
কে বাঁচায় প্রত্নপ্রেম
গ্রামে ও শহরে?
ফুলে ও ফসলে আজ
সন্ধ্যামায়াজাল
ভাসুক চাঁদের রেখা
তোমার সকাল!
বিন্দু আমি এঁকে যাই
বৃত্তের পরিধি
তুমিই অনন্ত বোধ
তুমিই তো আদি!
এসো, প্রিয় ইমনকল্যাণে
আলোর জানালা খুলে দেখি আমি প্রভাতের পাখি
কূজনে কূজনে ফোটে ভোরবেলা, তুমি আলো
মুক্তির, যুক্তির; খুব ভালোবাসি তোমাকে;
দুপুর রোদে যদি হেসে ওঠে অনঙ্গ-কুহক
আমি অঙ্গময় সঙ্গ খুঁজে নিই। ও আমার ব্যাকুলা
বিহঙ্গ : এসো, দূর আকাশের বাটে ডানা মেলি
যৌথ-যৌবনের কাসিদা কে শোনাবে সন্ধ্যায়
ইমনকল্যাণে? তুমি ছাড়া! তুমিময় এ জীবন
প্রীতিপুণ্যে কী দারুণ সমাসীন! তোমার দুচোখ
যেন ঘোরলাগা পদ্মদিঘি, তাই আমি প্রেম হয়ে
ভাসি! ও জল, নদীর নামে তোলো ঢেউ আজ;
তরঙ্গ-হৃদয় কেন মরে যেতে চায়! এই মৃত্যু
স্বেচ্ছামৃত্যু? নাকি মৃত্যুর শরাব পিয়ে জীবনের
অমরত্ব লাভ? মনসুর হাল্লাজ জানে মৃত্যু মানে
জীবনের শুভ উদ্বোধন! আমিও যথারীতি
উদ্বোধনী গাই; তুমিও মিলাও গলা পরান-জোনাকি
আলোর জানালা খুলে দেখি আমি প্রভাতের পাখি।