সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

গল্প: শেষ পর্ব

মুজিবের হলদে পাখি

আমি ফিরে আসি নিজের ঘরে। শুনতে পাই কাকদের ডাকাডাকি। নতুন বাসা বানিয়েছে দুটি কাক। দাঁড়িয়ে থেকে দেখি। লোহার তার দিয়ে খুব সুন্দরভাবে গাছের সঙ্গে পেঁচিয়ে ওরা বাসা বানায়। আমার মনে হয় ওরা এক একজন দক্ষ কারিগর। বাসা বানানোর জন্য এইসব উপকরণ কাকরা কোথায় খুঁজে পায় তা ভেবে আমি বিস্মিত হই। পাঁচটা আম গাছ থেকে কাদের মিয়াকে দিয়ে পাঁচ-সাত বার বাসা ভেঙে ফেলেছি। ওরা আবার তৈরি করে। ওদের সঙ্গে আমি সন্ধি করি। ওদের ধৈর্য আর অধ্যাবসায় আমার কাছে উদাহরণ হয়ে থাকে। সেজন্য তিনটা আমগাছ ওদের বাসা করার জন্য ছেড়ে দেই। কাকেরা বাসা বানাল। নানা উপকরণ জোগাড় করে বাসা বানায়। তিনটি গাছ ছেড়ে দিয়েছিলাম। ওরা আর একটি দখল করে ফেলল।

কাদের মিয়া এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, স্যার কি করব? আবার ভাঙব বাসাগুলো?

আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করি। দেখতে পাই ওর চেহারায় আশঙ্কার ছাপ। আমি কাদেরকে বলি, না বাসা আর ভাঙতে হবেনা। বাসা করতে দাও। এখন ওদের ডিম পাড়ার সময়। ওরা যাবে কোথায়?

-স্যার, আপনি ওদেরকে অনেক মায়া করছেন।

-মায়াতো করব রে। ওদেরওতো ভালো থাকার অধিকার আছে।

-অধিকার কি স্যার? ওরাতো মানুষ না।

-তুই কি বলিস? ওদেরকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমি কি কাজটি ভুল করছি ওদের বেঁচে থাকার কথা বলে?

-না, না স্যার আপনি ভুল করবেন কেন? আমি ভুল বলছি। মাফ করবেন স্যার। আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি স্যার। আপনি আমাদের মাথার উপরের মানুষ। আমাদের ভালোর জন্য আপনি রাজনীতি করেন।

-হয়েছে, হয়েছে থাম।

-থামব কেন স্যার? আমিতো মিথ্যা কথা বলছিনা। আপনাকে জেলে পেয়ে আমি খুশি। নইলেতো আপনাকে আমি কাছ থেকে দেখতে পেতাম না। আপনার যতœ করতে পারতাম না স্যার। আপনার সঙ্গে থাকতে পেরে জেলখানার চাকরি করার জীবন ধন্য।

-বাব্বা, তুইতো দেখছি অনেক বাহাদুর ছেলে রে।

কথা শেষ করে কাদের মিয়া আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। আমি ওর মাথায় হাত রেখে বলি, তোর ভালোবাসা পেয়ে আমিও ধন্যরে কাদের মিয়া। যা, তুই অন্য কাজে চলে যা।

-আপনার কিছু লাগবে?

-না, আমার কিছু দরকার নাই। জেলখানার পাখিগুলো আমাকে মাতিয়ে রাখে। হলদে পাখিদুটো আমাকে সঙ্গ দেয়।

-যাই স্যার।

কাদের হাসতে হাসতে চলে যায়।

আমি ঘরে ঢুকি। বিছানায় পা গুটিয়ে বসে খবরের কাগজ পড়ি। কিন্তু কাগজের পাতায় মন বসে না। কেবলই দরজার দিকে তাকাই। কেউ যদি এসে বলে, স্যার আপনার ‘দেখা’ এসেছে। আমি বুঝে যাই ছেলেমেয়েদের নিয়ে রেণু এসেছে।

জেলখানায় এরা ‘দেখা’ শব্দ চালু করেছে। সবাই ব্যবহার করে। ‘দেখা’ শব্দ বললেই বুঝে যাই যে কেউ এসেছে দেখা করতে। জেল গেটের কাছের ঘরে অপেক্ষা করছে। কাগজ ভাঁজ করে বিছানায় রেখে দিয়ে ভাবি আজ যদি রেণু আসত! সময়টা আমার আনন্দে কাটত। ছোট্ট রাসেলকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতাম, সোনারে। গত দিন যখন কোলে নিয়েছি তখন আব্বা, আব্বা করে কয়েকবার ডেকে মায়ের কোলে গিয়ে তাকেও আব্বা, আব্বা বলে ডাকতে শুরু করল।

আমি রেণুকে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কি?

রেণু বলল, বাড়িতে আব্বা আব্বা করে কাঁদে। তাই ওকে বলেছি, আমাকে আব্বা বলে ডাক। সেদিন ও আব্বা আব্বা করে পরে যখন ডাকতে শুরু করল যেই আমি জবাব দেই ও সঙ্গে সঙ্গে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি আমার আব্বা। আমি বুঝতে পারি আমার উপর ওর অভিমান হয়েছে। আগে রেণুর সঙ্গে জেলখানায় এলে আমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইত। বলত, আব্বা বালি চল। এখন আর চলে যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেতে চায়না।

ওর আভিমানে আমি কষ্ট পাই। মাথা কাত করে বালিশে শুয়ে পড়লে আমার বুক ভেঙে যায়। দুহাতে চোখের পানি মুছি। ছোট্ট শিশুটির অভিমানী চেহারা দুচোখ বুঁজে থাকলে আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। আমি শুয়েই থাকি। ঘন্টাখানেক পরে দরজায় কড়া নাড়ে কেউ। উঠে দরজা খুলি।

-আপনার ‘দেখা’ এসেছে স্যার।

-ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি।

জেলগেটে এসে দাঁড়ালেই ছুটে আসে হাসিনা আর রেহানা। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আব্বা আব্বা আপনি কেমন আছেন?

-শরীর ভালোই আছে।

দুজনে আমার দুহাত ধরে রাখে। আমি সাক্ষাৎপ্রার্থীর রুমে ঢুকি। রাসেল রেণুর গলা জড়িয়ে ধরে আছে। আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে হাসে। মুখে কিছু বলেনা।

হাসিনা রাসেলকে টেনে ধরে বলে, চল আমরা একটু বাইরে যাই।

-না, আমি যাব না।

-আমরা তোর সঙ্গে খেলব। আয়।

-হ্যাঁ, হ্যাঁ খেলব। চল, চল।

তিনজনে বেরিয়ে যায়।

আমি রেণুর দিকে তাকিয়ে বলি, কেমন আছ হলদে পাখি?

-তোমার হলদে পাখি আজ আমগাছে এসেছিল?

-হ্যাঁ, এসেছিল।

-তাহলেইতো তোমার মন রসে টইটুম্বুর হয়ে আছে।

-থাকবেইতো। তিন বছর বয়সে তুমি আমার হলদে পাখি হয়ে টুকটুক শিস বাজিয়েছ।

-ভালোই বলেছ। এখন তোমার কাকদের কথা বল। ওগুলো কি তোমাকে বিরক্ত করে?

-হ্যাঁ, তা করে। মাঝে মাঝে সহ্য করে থাকি। তবে ওদের একটি ঘটনার কথা আজ তোমাকে বলব। হলদে পাখি আমার ভালোবাসার পাখি। কাকেরা আমার রাজনীতির পাখি।

-ওহ তাই! রেণু উচ্ছ¡সিত হয়ে ওঠে।

-কাকেরা বাসা ভেঙে দেয়ার সময় ভয় পেয়ে একটু দূরে চলে যেত। সেখানে বসে সঙ্গীসাথী জোগাড় করে চিৎকার করত। আমি বুঝতাম এটা ওদের প্রতিবাদ। ওরা যে এক হয়ে প্রতিবাদ করত এটা আমি খুব প্রশংসা করতাম। অধিকার রক্ষার জন্য পাখিদেরও প্রতিবাদ আছে। আম বড় করে নিঃশ^াস টানতাম। আমার ভাবনা এলোমেলো হতো না। মনে করতাম বাঙালিদের চেয়েও ওদের একতা বেশি। বাঙালি একতাবদ্ধ হয়ে যদি কাকদের মতো শোষকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত তবে তারাও জয়লাভ করত। তাই কাকের অধ্যাবসায়ের কাছে আমি পরাজিত হয়েছি। কিছুদিন ধরে কাকরা আমাকে দেখলেই চিৎকার করত। প্রতিবাদের ভাষায় পাখা ঝাপটাত। এখন আর আমাকে দেখলে চিৎকার করে প্রতিবাদ করে না। আর নিন্দা প্রস্তাবও পাশ করে না।

-ভালোই বলেছ, নিন্দা প্রস্তাব পাশ করেনা। রেণু দুরন্ত হাসিতে মেতে ওঠে।

-এটাই আমার রাজনীতি রেণু।

 রেণু হাসতে হাসতে বলে, বুঝেছি বুঝেছি। পাখিদের নিয়ে ভালোই আসর জমিয়েছ। তোমার আর একা থাকার খারাপ লাগা থাকবেনা।

-থাকবে গো থাকবে। তুমিতো আমার কাছে নেই।

-কেন? আমিতো তোমার হলদে পাখি।

আমি মৃদু হেসে চুপ করে থাকি। ছেলেমেয়েরা ঘরে আসে ওদের সঙ্গে কথা বলি। একসময় চলে যায় ওরা।

রাত্রে পাগলের চিৎকারে ঠিকমতো ঘুমুতে পারিনা। ভোরে নাস্তা খেয়ে চেয়ার নিয়ে আমগাছের নিচে বসি। হাতে থাকে রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা’ বই। অল্পক্ষণের মধ্যেই দেখতে পাই, হলদে পাখি দুটো এসে আমার দুই ঘাড়ে বসে। আমি নড়াচড়া না করে চুপচাপ বসে থাকি। আমি বলি, আয় কাছে আয় ভালোবাসার বন্ধুরা। মুহূর্ত সময় মাত্র উড়ে যায় ওরা। হয়তো ভয় পেয়েছে, আমি যদি ধরে ফেলি। মনে মনে ভাবি ওরা যেন আবার আসে। ভালোবেসে একবার কাছে এসেছে, আবার উড়ে গেছে। বুঝতে পারি এটা ওদের একরকম খেলা। আমারও আনন্দ। বুকের ভেতর খুশির আমেজ নিয়ে বসে থাকা। 

একটুপরে দেখি কুড়ি-পঁচিশটা কাক আমার ফুল বাগানে এসে নামে। জড়ো হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রতিটি কাকের দৃষ্টি একই দিকে। আমিও তাকিয়ে থাকি। একসময় ওরা উড়ে চলে যায়। আমি দুহাত নেড়ে বলি, আবার আসিস একতার বন্ধুরা। তোদেরকে আমার পাশে চাই। তোরা একসঙ্গে ডেকে আমার মন ভরিয়ে দিবি।

ওরা চলে গেলে বাগানে আসে হলদে পাখি দুটো। এখন ওরা ফুলের সঙ্গে মিশে থাকে। রঙবেরঙের ফুলের মাঝে ওদেরকে অপূর্ব দেখাচ্ছে। নিঃসঙ্গতার মুহূর্ত আমার সামনে থেকে মুছে যায়। আমি ডেকে বলি, আয় কাছে আয় আমার ভালোবাসা। পাখি দুটো ডানা মেলে দিয়ে ফুল গাছের মাঝে ঘুরে বেড়ায়। একসময় বাগান ছেড়ে আমার কাছাকাছি এসে উড়তে শুরু করে। বাগানের চারদিকে ওড়ে। দূরে চলে যায় না। আমার বুকের ভেতর শব্দ হয় রেণু, রেণু! তুমি আমার হলদে পাখি।

 

 

Header Ad
Header Ad

পাকিস্তানে সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত: নিউইয়র্ক টাইমস

ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মিরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভারত এখন পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং দিল্লিতে কূটনৈতিকদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। তবে এসব আলোচনা মূলত অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরতেই হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

কাশ্মির সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে গুলিবিনিময় অব্যাহত রয়েছে। কাশ্মিরে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে এবং শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অতীতের সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার ইতিহাস তুলে ধরলেও এবারকার হামলায় সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ এখনো প্রকাশ করেনি। পাকিস্তান সরকার সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, যেহেতু ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পরমাণু শক্তিধর দেশ, তাই সামরিক সংঘাত বড় ধরনের বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।

ইরান ও সৌদি আরব মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন জানালেও, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি তাদের মনোযোগ সীমিত বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৯ সালের ঘটনার তুলনায় এবার প্রমাণের স্বচ্ছতা কম, আর “রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট” নামে একটি অজ্ঞাত গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও ভারত এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠনের ছায়া গোষ্ঠী বলে মনে করছে।

ভারতীয় সরকারের ওপর অভ্যন্তরীণ চাপ রয়েছে এবং মোদি সরকার “বড় ধরনের কিছু” করার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

ঢাকায় অটোরিকশা ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে ডিএনসিসির অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সরাতে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) মিরপুর পল্লবীতে রাস্তা, ফুটপাত ও নর্দমা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

এজাজ জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ইতোমধ্যে অবৈধ অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশনের তালিকা প্রস্তুত করেছে। তালিকাভুক্ত স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই যৌথ অভিযান চালানো হবে।

এছাড়া, ডিএনসিসি প্রশাসক আবাসিক এলাকাগুলোতে অবৈধ অটোরিকশা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে বাড়ির মালিক সমিতিগুলোকেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে তিনি জলাধার রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে নাগরিকদের জমি কেনার আগে মৌজা ম্যাপ যাচাই করার অনুরোধ জানান।

পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকার উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, সাতটি প্যাকেজে রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ শেষ হলে এলাকাটির জলাবদ্ধতা কমবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। পাশাপাশি বর্ষায় বড় গাছ লাগিয়ে এলাকা সবুজায়নের উদ্যোগ নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

চাঁদা না দিলে রেলের কমান্ড্যান্টকে বদলির হুমকির অভিযোগ দুই ছাত্র প্রতিনিধির বিরুদ্ধে (ভিডিও)

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর কমান্ড্যান্টের কাছে চাঁদা দাবী করার অভিযোগ উঠেছে দুই ছাত্র প্রতিনিধির বিরুদ্ধে। চাঁদা না দিলে রেলের কমান্ড্যান্টকে বদলির হুমকিও দেয়া হয়েছে।সম্প্রতি তাদের কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।

অভিযুক্তরা হলেন রেলপথ মন্ত্রনালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি মেহেদী হাসান এবং রেজাউল করীম। 

ভাইরাল হওয়া ওই কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চট্টগ্রাম বিভাগের কমান্ড্যান্ট মো. শহীদ উল্লাহর কাছে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় ওই ২ সমন্বয়ক। তবে এটি করবে না যদি বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম তাদের দাবীকৃত টাকা তাদের বুঝিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে কমান্ড্যান্ট শফিকুল ইসলামের সাথে এর আগেও বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছিল ওই দুই সমন্বয়কের।

রেকর্ডে শোনা যায়- কমান্ড্যান্ট শফিকুল ইসলাম ছাত্র প্রতিনিধি মেহেদী হাসানকে বলছেন, ‘‘আমি তো ওইদিন আপনার সামনেই বললাম কোর্টের মধ্যে থেকে যে টাকাটা জমা হয় ওইটা তোলার জন্য। ওইটা না হলে দুই লাখ টাকা দিতে পারবো না, আমার কোন ইনকাম সোর্সও নাই। কমান্ড্যান্ট মো. শহীদ উল্লাহর যেহেতু বলছে তার কাছ থেকে দশ লাখ টাকা নিয়া নেন। সে মাত্র গেছে।’’

ছাত্র প্রতিনিধি মেহেদী বলছে, না। ‘‘সমস্যা নেই আপনার সাথে যে কথা হয়েছে নির্জন (রেজাউল ইসলামের ডাক নাম) ভাইয়ের, ওইটা দিলেই হবে। তাহলে ওইটা হচ্ছে কবে? কালকে?’’

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘কোর্ট থেকে টাকাটা উঠানোর সাথে সাথে আমি দিয়ে দিবো। যদিও আমার কষ্ট হইতেছে। কারণ এর বাইরে তো আমার কাছে টাকা নেই।’’

এরপর মেহেদী ফোন ধরিয়ে দেয় আরেক ছাত্র সমন্বয়ক রেজাউলকে, ফোন দিয়ে বলে শফিক ভাই কথা বলবে। এরপর মেহেদী তার মুঠোফোনটি রেজাউলকে দিয়ে দেয়।

এ সময় শফিকুল ইসলাম রেজাউল করীমকে বলেন, ‘‘ভাই কালকে তো আপনার রেস্ট হাউজে গেলাম। গিয়ে বললাম না, আমি কি কালকে আসবো? কোর্টের বেঞ্চ সহকারী বললো আমি লিখে একাউন্টে পাঠাইছি। আমি জানাবো, জানালে আপনি আসবেন, আজকে এখনো জানায়নি কোর্টে যাওয়ার জন্য। জানাইলে আমি আসবো।’’

ছাত্র সমন্বয়ক রেজাউল বলছে- ‘‘এখন ভাই আপনি দেখেন , ওইটা আমার কাছে কিছু বইলেন না। কোন বিষয় কি করবেন। সেইটা আপনার বিষয়। আপনি যেমন বলেছেন সেইটাই করা হয়েছে। এখন কিভাবে কি করবেন সেটা আপনার বিষয় ?’’

এদিকে ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে কমান্ড্যান্ট মো. শফিকুল ইসলাম বলেন- হ্যাঁ, ওই কল রেকর্ডটি আমাদের। আমাকে কমলাপুর রেস্ট হাউজে ডেকে নিয়ে ৫ লক্ষ টাকা চেয়েছিলো ছাত্র প্রতিনিধি রেজাউল।

তিনি আরো বলেন, রেজাউল আমাকে বলেছিলো উপদেষ্টাকে আমরা যা বলি, উপদেষ্টা তাই শোনে। চট্রগ্রামে উপদেষ্টা যখন গিয়েছিলো তখন কমান্ড্যান্ট শহীদুল্লাহ শহীদ ঢাকায় আসার জন্য আমাদের কাছে ১০ লক্ষ টাকা অফার করেছে। আপনি ৫ লক্ষ টাকা দিলে আপনাকে ঢাকাতে রাখবো। না হয় শহীদুল্লাহকে নিয়ে আসবো।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি এই ঘটনার স্বাক্ষী প্রমান রাখার জন্য প্রথমে রাজি হয়ে যাই, এক লক্ষ টাকা বলি এবং পরে দুই লক্ষ টাকা বলি। যোগাযোগ দীর্ঘায়িত করি তথ্য প্রমানের জন্য। আর এই রেকর্ডটি আমিই করি এবং অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেই। আজ (মঙ্গলবার) ডিজি মহোদয়ের সাথে সাক্ষাত করে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।’

এই ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত ছাত্র প্রতিনিধি মেহেদী ও রেজাউলের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

চাঁদা দাবির বিষয়ে ছাত্র প্রতিনিধি আশিকুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা সকলেই একটি টিমে কাজ করি। আমি চাঁদা চেয়েছি এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। আমি মেহেদী ও রেজাউলের সাথে জড়িত নই।

তবে কমান্ড্যান্ট মো. শফিকুল ইসলাম জানান- ‘আশিকুর রহমান, মেহেদী ও রেজাউলের যোগসাজসে এই চাঁদা দাবি করা হয়েছে।’

সংবাদ সূত্র: রেল নিউজ ২৪

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানে সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত: নিউইয়র্ক টাইমস
ঢাকায় অটোরিকশা ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে ডিএনসিসির অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে
চাঁদা না দিলে রেলের কমান্ড্যান্টকে বদলির হুমকির অভিযোগ দুই ছাত্র প্রতিনিধির বিরুদ্ধে (ভিডিও)
বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!
কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪
মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলেন ছাত্রদল নেতা
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
নওগাঁয় গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় জাতীয় পার্টি’র নেতাকে গণধোলাই
পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পানি না দেওয়ার আহ্বান বিজেপি এমপির
এসআই নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, ৫৯৯ জনকে প্রাথমিক সুপারিশ