শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক ভ্রমণ, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা

পিরামিডের শহর বলতে কায়রো আর পিরামিডের দেশ বলতেই মিশরের যে ছবি চোখে ভেসে আসে সেখানে মরুভূমিতে তিনটি বিশাল আকৃতির পাথুরে ত্রিভূজের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা গোটা কয়েক খেজুর গাছ আর চলমান উটের কাফেলা। অবশ্য মানসচক্ষুর আর দোষ কী! সেই দূর শৈশব থেকে বইয়ের পাতায় দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারে, এমন কি সিনেমার দৃশ্যপটেও দেখেছি সেই একই দৃশ্য। সারা দেশে বর্তমানে টিকে আছে একশ আঠারোটি পিরামিড, এর মধ্যে গিজার প্রাচীনতম ‘গ্রেট পিরামিড’, স্ফিংস এবং সাক্কারার অসমাপ্ত পিরামিডসহ পাঁচ সাতটা পিরামিডে ঘুরে নিজের চোখে দেখে ফেলতে পারলে পর্যটকের কায়রো ভ্রমণ অনেকটাই সম্পন্ন হয়ে যায়। বাকি শতাধিক পিরামিড খুঁজে বের করা গবেষকের কাজ। কিন্তু এই একশ আঠারোর বাইরে সুদানে যে নুবিয়ান সাম্রাজ্যের দুইশর বেশি পিরামিড আছে তা অনেকেরই জানা নেই। সেই কারণে গিজায় প্রতি বছর কোটি খানেক মানুষ পিরামিড দেখতে এলেও সুদানের পিরামিডগুলোতে বছরে পাঁচ লাখ পর্যটক আসে কিনা সন্দেহ!

দূরে থেকে পিরামিড। ছবি: লেখক

পরিকল্পনা ছিল ‘অবশ্য দর্শনীয় আকর্ষণ’ হিসাবে পরদিন সকালে প্রথমে সাক্কারা এবং পরে গিজায় পিরামিড দেখে বিকেলের মধ্যে কায়রো ফিরে আসবো। সকাল আটটায় আমাদের বেরিয়ে যাবার কথা। সময় সচেতন চালক তার বাহন নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মিনিট পনের আগেই এসে হাজির। দেশের বাইরে কোথাও গেলে আমরা সাধারণত পূর্ব নির্ধারিত সময়-সূচি মেনে চলি। নিজের ঘরে শুয়ে বসে আলসেমি করে সময় কাটানো যায়, কিন্তু ডলার পাউন্ড ইওরো দিয়ে কেনা সময় অকারণে বয়ে যেতে দেয়ার কোনো মানে হয় না। বিভিন্ন সময়ে অনেক দেশেই ঝিরঝির করে ঝরে পড়া তুষারের তীব্র শীতে, ঠা ঠা রোদের দুপুরে কিংবা তুমুল বৃষ্টির দিনে যথা সময়ে বেরিয়ে যাবার রেকর্ড আমাদের আছে। কাজেই আগের দিন প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে পরদিন সকাল সাতটায় উঠে পড়াটা তেমন কঠিন কিছু নয়।

সৌরভ আগেই বলে রেখেছিল, প্রথম দিন সন্ধ্যায় দেশি বিদেশি মিলিয়ে কয়েকজন অতিথি আসবেন। আয়োজন ঘরে হলেও ঘুম ভাঙার পরে আমরা লিভিংরুমে এসে বসার আগেই চলে এসেছেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কর্মকর্তা সৈয়দ আজিজ এবং তার স্ত্রী মান্নি সৈয়দ। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তা কামরুল হাসানসহ আরও দুই একজন। প্রাথমিক আলাপ পরিচয়ের পরে দেখা গেল আগে কখনো দেখা সাক্ষাৎ না হলেও আমরা আসলে পরস্পরের অনেক কাছের মানুষ। সৈয়দ আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন আবৃত্তি চর্চায় যুক্ত ছিলেন। কণ্ঠশীলন এবং সংস্কৃতি সংসদ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক জগতের অনেকের সাথেই তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ এখনো থেকে গেছে। যখন যে দেশে থাকেন সেখানে থেকেই বাংলা ভাষার কবিতা ও নাটকের চর্চা এবং উৎকর্ষের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। মান্নি সৈয়দ আমাদের সিনেমা জাগতের খ্যাতিমান পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের কন্যা। ঢাকার সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র, নাটক এবং টেলিভিশন নিয়ে কথার ফাঁকে অনিবার্যভাবেই ঢুকে পড়েছে রাজনীতি ও অর্থনীতি। সান্ধ্যকালীন আড্ডায় পর্যায়ক্রমে যোগ দিযেছেন বৈমানিক রাজিউল ইসলাম এবং তার সুইস স্ত্রী ভ্যালেরি। রাজি বাংলাদেশের সেনাবাহিনি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন আর ভ্যালেরি কায়রোতে সুইস দূতাবাসের কর্মকর্তা। সার্বক্ষণিক তথ্য উপাত্ত যোগান দিয়ে আড্ডা জমিয়ে রেখেছেন রানা ভাই আর খাদ্য পানীয়ের ব্যবস্থাপনা তো গৃহকর্তার উপরেই বর্তায়।

পথ নির্শের সামনে সিলভিয়া ও হেনা। ছবি: লেখক

আজকাল বাসায় বন্ধু বান্ধব নিয়ে পার্টির আয়োজন করলে আমাদের দেশেই স্ত্রী, কন্যা, বোন বা ভাবিদের গলদঘর্ম হয়ে রোস্ট-রেজালা, বিরিয়ানি-পোলাও কিংবা ফিরনি-ফালুদা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয় না। ছোটখাটো ক্যাটারিং সার্ভিস ছাড়াও পান্ডা ষণ্ডা নামের হোম ডেলিভারিওয়ালারা মুখরোচক খাবার বাড়ির দোরগোড়ায় পৌছে দেবার জন্যে একপায়ে দাঁড়িয়ে। বিদেশে তো এ সব চালু হয়ে গেছে আরও বহু বছর আগেই। কাজেই খাদ্য যোগান দেয়া স্থানীয় পাণ্ডারা আমার জানা অজানা নানা রকম খাবার দিয়ে গেছে এবং সে সব রান্নাঘর হয়ে টেবিলেও চলে এসেছে। স্বাস্থ্যবান মিশরিয় মুরগির গ্রিল বাদ দিলে বাদবাকি খাবার সম্পর্কে কিছু ধারণা নেয়া যেতে পারে। ভাতের পরে রুটিই যেহেতু ভেতো বাঙালির প্রাধান খাবার, সেক্ষেত্রে প্রথম প্রসঙ্গ রুটি নিয়ে। মিশরের ‘আইশ বালাদি’ আমাদের তন্দুর রুটি এবং হাতে বানানো রুটির মাঝামাঝি একটা জিনিস। নির্ভেজাল আটার তৈরি । সেই ফারাওদের আমল থেকেই নাকি ধনী গরিব সকল মিশরিয় এই রুটি খেয়েই জীবন ধারণ করে আসছে। আইশ মানে জীবন অর্থাৎ আমাদের যেমন পানির অপর নাম জীবন, মিশরিয়দের রুটির আপর নাম জীবন। প্রবহমান নীল নদ বাদ দিলে মরুভূমিতে পানির বড় অভাব, সম্ভবত সেই কারণেই পানি নয়, রুটিই এখানে জীবন।

পরিচিত খাবারের মধ্যে ফালাফেলের সঙ্গে পরিচয় অনেক আগের। এবারে কাতার এয়ারওয়েজের খাদ্য তালিকাতেও ছিল এই বড়া জাতীয় জিনিস। তবে একে বড়া না বলে পাকোড়াও বলা যেতে পারে। সেই ছোলার ডাল, মটরশুটি, পেঁয়াজ কাঁচা মরিচ ধনেপাতা এবং প্রয়োজনীয় মশলা ব্যবহার করে তেলে ভাজা। উপকরণ প্রায় এক হলেও আমাদের কাছে মিশরিয়দের চেয়ে ভারতীয়দের পাকোড়া অনেক বেশি সুস্বাদু! এই কারণে ফালাফেলের চেয়ে কোশারি আমার বেশি পছন্দের খাবার।

আইশ বালাদি। ছবি: লেখক।

মিশরের জাতীয় খাবার কোশারি আসলে এক ধরনের খিচুড়ি বললে ভুল বলা যাবে না। বাঙালির খিচুড়ির মূল উপাদান চাল আর ডালের সাথে ইতালির ম্যকারুনি মিশিয়ে দেবার বুদ্ধিটা মিশরিয়রা কোথায় পেয়েছিল জানি না, কিন্তু কোশারি এতেই এক ধরনের নতুন রূপ লাভ করেছে। এতে মশলা হিসাবে সাধারণত পেঁয়াজ ধনিয়া জিরা রশুন এবং টমেটো ব্যবহার করা হলেও ইচ্ছে মতো হটসস বা ভিনিগার দেয়া যেতে পারে। কোশারিতে ডালের বদলে ছোলা কিংবা ম্যাকারুনির পরিবর্তে স্প্যাগাটি দিলে হয়তো চেহারা খানিকটা বদলায় কিন্তু তাতে কোশারির চরিত্র বদলায় না। স্ট্রিট ফুড হিসাবে এর জনপ্রিয়তা থেকে পরবর্তী সময়ে অভিজাত রেস্তোরাতেও নিজের জায়গা করে নিয়েছে মিশরিয় খিচুড়ি! পানাহার শেষ করে অতিথিদের বিদায় দিয়ে ঘুমাতে রাত সাড়ে বারোটা বাজলেও নির্ধারিত সময়ের মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আমরা গাড়িতে উঠে পড়েছি। তরুণ চালক বাসাম মাআদি এলাকারই একটা দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে আমাদের পথপ্রদর্শক সিলভিয়াকে তুলে নিয়েছে। কায়রোর হেলওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্যুরিজম এ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্টে গ্রাজুয়েশন করেছে সিলভিয়া নাবিল। গাড়িতে উঠে পরিচয় দেবার পরপরই সে তার জবরদস্ত একখানা সচিত্র কিতাব বের করে খ্রিস্টপূর্ব ছয় হাজার অব্দের ইতিহাস বর্ণণা শুরু করেছিল। রানাভাই তাকে একরকম থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আসলে বিস্তারিত ইতিহাসের ব্যাপারে আমরা খুব বেশি আগ্রহী নই। তুমি বরং ফারাও রাজত্বকাল বা পিরামিড সম্পর্কে যে সব কথা ইতিহাসে নেই, তেমন কোনো গল্প থাকলে শোনাতে পারো।’

পিরামিডের সামনে উট। ছবি: লেখক।

মেয়েটি বোধহয় রানাভাইয়ের কথায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। বই পুস্তক গুটিয়ে একেবারে চুপচাপ হয়ে যাবার পরে রানা ভাই আবার বললেন, ‘ইতিহাস আমরা জানতে চাই না তা নয়। তবে তা চোখের দেখার সাথে মিলিয়ে জানতে পারলেই ভালো। পিরামিড দেখা শেষ হলে কোথাও চা কফি খেতে খেতে তোমার বিবরণ শোনা যাবে।’ যদিও কথা ছিল প্রথমে সাক্কারা এবং পরে গিজায় যাওয়া হবে, কিন্তু সিলভিয়ার পরামর্শ অনুসারে গিজা হয়ে সাক্কারা যাওয়াই স্থির হলো। আমরা যখন গিজার পথে কায়রো শহর পাড়ি দিচ্ছি, তখন রাস্তার দুপাশে আবার সেই ধূলি ধুসর অসমাপ্ত অর্ধসমাপ্ত ভবনের সারি। বসবাস উপযোগি ভবনগুলোর দেয়ালেও দীর্ঘ দিন তেল পানি বা রং বার্নিশ পড়েছে বলে মনে হয় না। সিলভিয়াকে প্রশ্ন করে এর কোনো যুৎসই উত্তর পাওয়া গেল না। রানাভাই বললেন, বৃষ্টিহীন শুকনো আবহাওয়ার কারণে এখানে কোনো রংই স্থায়ীত্ব পায় না, সেই কারণে দেয়ালে যে সব রং ব্যবহার করা হয়, সেই রংও এ রকম ধূসর। আমরা এই ধূসর শহর পেরিয়ে গিজার দিকে এগিয়ে যাবার পথে অনেক দূর থেকে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল প্রাচীন বিশ্বের সাতটি বিস্ময়ের অন্যতম মিশরের পিরামিড! এরপর যানবাহন এবং গাছপালার ফাঁকে মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল পৃথিবীতে টিকে থাকা সবচেয়ে উঁচু দুটি পিরামিডের চূড়া।

আমাদের চোখে দেখা পিরামিডগুলোর মধ্যে ফারাও সম্রাট খুফুর তৈরি পিরামিডের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি, এটি তৈরিও হয়েছিল সবচেয়ে আগে। গবেষকেরা গবেষণা করে বের করেছেন খুফুর পিরামিডের নির্মাণকাল খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০০ অব্দ। তার অর্থ হলো এখন থেকে ছয়হাজার সাতশ বছরেরও আগে। মহামহিম ফারাও সম্রাটেরা সে সময়ের যাবতীয় খাদ্য পানীয়, সুখ সাচ্ছ্যন্দ এবং আরাম আয়েশ উপভোগের পরেও মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেননি। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে কিংবা পুনরুত্থানকালে নতুন করে বিলাসবহুল জীবনের প্রত্যাশায় দেহকে মমি করে রাখা এবং তা অনড় অজর কোনো প্রকোষ্ঠে সংরক্ষণের ধারাবাহিকতায় বিপুল বিত্ত বৈভব ও জনশক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছিল পিরামিডের মতো স্থাপনা। নিশ্চয়ই সে সময়ের ধাপ্পাবাজ পুরোহিত যাজক বা ধর্মগুরুদের কেউ এই অমরত্বের ধারণা দিয়েছিল এবং ক্ষমতাবান সম্রাটেরা তা বিশ্বাস করে কাজে লাগাতেও কার্পণ্য করেনি।

পরবর্তী কয়েক মিনিটের মধ্যে বাসাম তার বাহন নিয়ে এসে দাঁড়ালো গিজার পিরামিডের প্রবেশ পথের পার্কিং-এ। এখানে টিকেট ঘর এবং প্রক্ষালন কক্ষ ছাড়াও রয়েছে বিস্তৃত পিরামিড চত্বরের পথ নির্দেশিকা। প্রক্ষালন কক্ষ ব্যবহারের জন্যে দশ ইজিপশিয়ান পাউন্ড অর্থাৎ ষাট টাকা আমার কাছে খুব বেশি মনে হয়নি। ইওরোপের যে কোনো জায়গায় দিতে হতো এক ইওরো, যা একশ টাকার সমান। সবগুলো পিরামিড ঘুরে দেখতে দুশ ইজিপশিয়ান পাউন্ড আর পিরামিডের ভেতরে ঢুকতে চাইলে গিজার ‘গ্রেট পিরামিডে’ চারশ এবং ছোট দুটি পিরামিড খাফরা ও সেনকাওরায় একশ পাউন্ড করে অতিরিক্ত টিকেট কিনতে হবে। গত শতকের পঞ্চাশের দশকেই সৈয়দ মুজতবা আলীর দুই সফর সঙ্গী পিরামিডের ভেতরে প্রবেশ করলেও তিনি নিজে ভেতরে যেতে উৎসাহ বোধ করেননি। কারণ, তিনি জানতেন সেখানে আসলে কিছু নেই। ‘জলে ডাঙায়’ যারা পড়েছেন তারা কায়রো ভ্রমণে গেলে নিশ্চয়ই পিরামিডের ভেতরে ঢুকতে চাইবেন না, আর আমার নিজের ক্ষেত্রে চরণযুগলের অসহযোগিতার কারণে পিরামিডের গায়ে খাড়া পাথুরে পথ বেয়ে ওঠা এবং অপরিসর সুড়ঙ্গ পথে নাম দুটোই অসসম্ভব। অতএব পিরামিডে প্রবেশের চারশ পাউন্ড বাঁচিয়ে আমরা সিলভিয়াকে অনুসরণ করে এগিয়ে চললাম খুফুর পিরামিডের পথে।

পিরামিডের সামনে থেকে। ছবি: লেখক।

আমরা যখন পায়ে হেঁটে সামনে এগোচ্ছি বাসাম তখন তার লাল গাড়িটা নিয়ে মূল পার্কিংলটে চলে গেছে। সেখানে অসংখ্য বাস, মিনিবাস, ট্যুরিস্ট ভ্যান এবং ছোট ছোট গাড়ির ভিড়ে নিজেদের বাহন খুঁজে বের করাই কঠিন। যন্ত্রযানের পাশাপাশি এখানে ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা এবং মরুর জাহাজ উটের আনাগোনা দেখে বোঝা যায় মিশরের পর্যটন ব্যবস্থা তাদের অতীত ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে। তবে ঘোড়ার গাড়ি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হলেও এই এলাকায় উটের পিঠে চড়ে মরুভূমি পাড়ি দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেহায়েতই সৌখিন পর্যটক উটের পিঠে হেলেদুলে এক আধ কিলোমিটার ঘুরে এসে উটের কাফেলায় সামিল হবার অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে যায়।

কাঠের পাটাতনে পায়ে চলার পথ ধরে পিরামিডের চড়াইতে উঠবার জন্যে যেখানে পাথরের খাঁজে খানিকটা পথ তৈরি করা হয়েছে আমরা যখন সেখানে এসে দাঁড়ালাম তখন অসংখ্য দর্শনার্থী বিশাল আকৃতির পাথর খণ্ডে পা রেখে উর্ধ্বলোকে যাত্রা করেছেন। আমার দুই সফর সঙ্গী উপরের দিকে উঠতে শুরু করলে পিরামিডের ছায়ায় আমাকে একা পেয়ে দাঁড়িয়ে সিলভিয়া আবার তার ইতিহাসের ঝাঁপি খুলে বসেছিল। এবারে অবশ্য বই পুস্তক থেকে নয়, তার আত্মস্থ করা বিবরণী থেকে জানা গেল খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০০ অব্দে নির্মিত গিজার দ্বিতীয় পিরামিড খাফরার উচ্চতা চারশ একাত্তর ফুট আর ৪৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সেনকাওয়ার উচ্চতা ২১০ ফুট। এক লক্ষ শ্রমিক কুড়ি বছর ধরে একটার উপরে আরেকটা পাথরের চাঁই সাজিয়ে নির্মাণ করেছে এই ‘গ্রেট পিরামিড অফ গিজা’!

ঘরোয়া আড্ডা  কায়রো। ছবি: লেখক।

আমি ভাবছিলাম অন্য কথা। এতোদিন দূরে থেকে যা ভেবেছিলাম পিরামিড আসলে তেমন সুক্ষ্ণ শিল্পকর্ম নয়। এখানে জ্যামিতি, ত্রিকোণোমিতি বা অংকের হিসাব নিকাশ আছে, দূর দূরান্ত থেকে পাথর বহন করে আনার ব্যয় ও ব্যবস্থাপনা আছে, রক্ত জল করা পরিশ্রমে নিয়োজিত লক্ষ লক্ষ শ্রমদাসের জীবন ধারণের বিপুল বিনিয়োগ আছে, সবচেয়ে বড় কথা সমকালীন সকল ক্ষমতার উৎস সম্রাটদের বিশ্বাস ও উচ্চাকাক্সক্ষার প্রতিফলন আছে, কিন্তু এখানে উঁচুমানের শিল্পের কোনো সুক্ষ্ণ কারুকাজ নেই। সিলভিয়ার কথা শুনতে শুনতে এবড়ো থেবড়ো পাথরের শরীর থেকে আমার দৃষ্টি চলে যায় পিরামিডের শীর্ষে।

(চলবে)

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা

পুলিশ কনস্টেবল শামীম হোসেন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত পুলিশ কনস্টবল শামীম হোসেন (৩০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে সহকর্মীরা শয়নকক্ষের জানালা দিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।

নিহত শামীম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে। তার কনস্টবল নং ৫৩২।

চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই রমজান আলী জানান, শামীম হত অক্টোবরে দর্শনা ইমিগ্রেশনে যোগদান করে। যোগদানের পর থেকেই গত ৬ মাস ধরে নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের ২য় তলার একটি কক্ষে বাস করে আসছিলেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় কয়েকজন সহকর্মী খোঁজ নিতে গেলে শামীম হোসেনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।

খবর পেয়ে সকালে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, সহকারী পুলিশ সুপার দামুড়হুদা -জীবননগর) সার্কেল জাকিয়া সুলতানা, দর্শনা থানার ওসি শহীদ তিতুমীর ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর বেলা ১১ টায় মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে আত্মহত্যা। তবে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

পুলিশ কনস্টেবল শামীম হোসেন ২০১৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে।

Header Ad
Header Ad

দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর আত্রাইয়ে বিষ প্রয়োগ করে দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে সানজিদা (১৬) নামে এক কিশোরীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন নিহত কিশোরীর স্বজনেরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত কিশোরীর মামা ফজলুর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে ওই কিশোরীর মা খুশি বেগম, নানা মোসলেম প্রামাণিক, চাচা সাইফুল ইসলাম মন্ডল, মামা হামিদুল প্রামাণিক উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্য ফজলুর রহমান বলেন, নিহত কিশোরী সানজিদা আত্রাই উপজেলার আন্দার কোটা গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শামসুল মন্ডলের মেয়ে। সানজিদা উপজেলার ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা কাজের সূত্রে দীর্ঘদিন ধরে সৗদি আরবে ও আরব আমিরাতে (দুবাই) অবস্থান করছেন। শামসুল মন্ডলের স্ত্রী খুশি বেগম মেয়ে সানজিদাকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে বাস করে আসছিলেন। শামসুল বসতবাড়ির বসতভিটার উত্তর পাশে বাবা মোসলেম মন্ডলের কাছ থেকে জমি কিনে নিয়ে ৪ বছর আগে মাটির বাড়ি তৈরি করেন। সেই বাড়িতেই সানজিদা ও তার মা বসবাস করতো। পরে ওই জায়গায় পাকা বাড়ি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করলে শামসুলের বাবা মোসলেম ও ভাই সাজিম মন্ডল বাঁধ সাজে। সানজিদার দাদা শামসুলকে বসতভিটার উত্তর পাশে পাকা বাড়ি না করে দক্ষিণ পাশে নীচু জায়গায় বাড়ি করার জন্য বলে আসছিল। এ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। সানজিদার বাবা ও ভাই বিদেশে থাকায় বাড়ি করা নিয়ে বিরোধের জেরে সানজিদা ও তার মায়ের সঙ্গে তাঁর দাদা মোসলেম ও চাচা সাজিমের প্রায় পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। এই কলহের জেরে দাদা মোসলেম মন্ডল ও সাজিম মন্ডল হত্যার উদ্দেশ্যে গত ৯ এপ্রিল হত্যার উদ্দেশ্যে সানজিদার শরীরে বিষ প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ এপ্রিল রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে সানজিদা বলে গেছে তার দাদা ও চাচা তাঁর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করেছে। তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করা আছে। এ ঘটনায় রাজশাহী রাজপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে মোসলেম মন্ডল ও সাজিম মন্ডল পলাতক রয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ এপ্রিল সকালে সানজিদা প্রাইভেট পড়ার জন্য ঘোষগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ে যায়। প্রাইভেট পড়ে সে বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে আসে। এ সময় সাংসারিক কাজে সানজিদার মা খুশি বেগম বাড়ির বাইরে ছিলেন। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে সানজিদার দাদা মোসলেম ও চাচা সাজিম সানজিদার ঘরের ভেতরে যায়। দাদা মোসলেম সানজিদার পাশে বসে একপর্যায়ে তাকে জাপটে ধরে এবং চাচা সাজিম পকেট থেকে বিষের ইনজেকশন বের করে তার বাম হাতের শিরায় জোর ইনজেকশন প্রয়োগ করে। তারা সানজিদাকে হুমকি দিয়ে বলে এ কথা কাউকে বললে তার মতো বাবা ও ভাইকেও হত্যা করবে। সানজিদার মা খুশি বেগম বাড়িতে এসে মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় মেয়েকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ওই দিনই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সানজিদার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত মোসলেম ও সাজিমের ফাঁসি দাবি করা হয়।

সাজিম মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে তা বন্ধ পাওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘যে মেয়েটি মারা গেছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় যোগাযোগ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় রাজশাহী রাজপাড়া থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। সেখানেই নিহত কিশোরীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Header Ad
Header Ad

গত ৯ মাসে এক আকাশ ভালোবাসা অর্জন করেছি : প্রেসসচিব

ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান শফিকুল আলম।

সরকারের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রায় ৯ মাসে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে কী অর্জন করেছেন, তা তুলে ধরেছেন তিনি।

আজ শুক্রবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোষ্টে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘গত নয় মাসে আমি কী অর্জন করেছি: এক চিমটি ঘৃণা, একমুঠো অবিশ্বাস ও এক আকাশ ভালোবাসা।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা
দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ
গত ৯ মাসে এক আকাশ ভালোবাসা অর্জন করেছি : প্রেসসচিব
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজে আগ্রহ দেখায়নি বেসরকারি চ্যানেল, দেখাবে বিটিভি
সন্ত্রাসী তালিকা থেকে তালেবানকে বাদ দিলো রাশিয়া
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, জানালেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
ব্রাজিলের ভক্তদের ‘বানরের’ সঙ্গে তুলনা, নিষেধাজ্ঞার মুখে আর্জেন্টিনা
নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক
কোলের সন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা
চুয়াডাঙ্গায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দু’জন নিহত
ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৩৮
হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪
সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
গাইবান্ধায় মাদক মামলায় ৩ যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
তোপের মুখে ওয়াক্‌ফ আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
নিজেকে বরিশাল সিটির মেয়র ঘোষণার দাবিতে মামলা করলেন ফয়জুল করীম
ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিতের আহ্বান বাংলাদেশের