রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক ভ্রমণ, পর্ব : ১

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা

পর্ব: ১

কায়রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের মধ্যবয়েসী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ঢুলু ঢুলু চোখে পাসপোর্টের পাতা উল্টিয়ে একটিও শব্দ উচ্চারণ না করে ভিসার উপরেই একটা সিল দিয়ে ছেড়ে দিলেন। মাস্ক খুলতে বলা তো দূরের কথা আমার চেহারার দিকে একবার তাকিয়েও দেখলেন না। আমার আগে একই কাউন্টার দিয়ে বেরিয়ে গেছেন অগ্রজ সহযাত্রী আনিসুর রহমান রানা ভাই এবং আমার স্ত্রী মাহবুবা বেগম হেনা। আমিই ছিলাম কাউন্টারের শেষ যাত্রী, আমার দিকে পাসপোর্টটা ঠেলে দিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসার সম্ভবত আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। আসলে তো ঘুমাবার কথা আমাদের। রাত এগারোটায় ঢাকা থেকে উড়ে দোহায় ঘণ্টা দেড়েকের যাত্রা বিরতি দিয়ে স্থানীয় সময় সকাল আটটায় নেমেছি কায়রো। দোহার বিরতিটাও আসলে ছিল বিরতিহীন। সিকিউরিটি চেকিংয়ের পরে ছুটতে ছুটতে ভিন্ন টার্মিনালের গেট পর্যন্ত পৌঁছাবার আগেই বোর্ডিং শুরু হয়ে গেছে। চলতি পথে কখনোই ঘুমাতে পারি না, বিমানে তো একেবারেই নয়।

এক মিনিটে ইমিগ্রেশন পার হয়ে যাবার ফলে ভেবেছিলাম যাত্রাটা খুব সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু দেশ থেকে দেশান্তরে যাবার পথে কোভিড-১৯ টেস্ট নামে নতুন যে যন্ত্রণা যাত্রীদের জীবনে যুক্ত হয়েছে ঢাকা এয়ারপোর্টর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তা ভুলে গেলেও কায়রোর কর্তৃপক্ষ মনে হলো মক্কেল ধরার একটা ফাঁদ পেতে রেখেছে। ফলে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হলো। গুটি গুটি পায়ে সামনে এগোবার পরে দেখা গেল ইজিপশিয়ানরা হাতে হাতে পাসপোর্ট ফেরৎ নিয়ে ডানদিক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আর বাঁ দিকে জমে উঠছে পাসপোর্টের স্তূপ! হিজাবধারী মহিলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাকি পুলিশের লোক বুঝলাম না, আমাদের পাসপোর্ট রেখে দিয়ে একপাশে দাঁড়াতে বললেন। এক এক করে সকল ভিনদেশির পাসপোর্ট জমা নেবার পরে কর্মকর্তা গোছের একজন সেই পাসপোর্টের পাহাড় দুই হাতে তুলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে গেলেন কেউ জানে না।

একদল পোলিশ তরুণ তরুণী হৈ চৈ করতে করতে সামনে এগিয়ে একটা বসার জায়গা আবিষ্কার করার পরে আমরাও তাদের অনুসরণ করে ছোট একটা হল রুমের মতো ঘরে এসে ঠাঁই নিলাম। একটা বাংলাদেশি পরিবারসহ আরো দুচারজন যাত্রী কোভিড টেস্ট শেষ করে বেরিয়ে গেছেন। দীর্ঘক্ষণ বসে আছি তো আছিই। পোলিশদের কোনো চিন্তা ভাবনা নেই। দল ধরে ঘুরতে বেরিয়েছে, সঙ্গে একজন ট্যুর লিডার বা ট্রাভ্রেল এজেন্ট তাদের হয়ে ছোটাছুটি করছে। আমাদের হয়ে ছোটাছুটি করার কোনো ট্যুর অপারেটর নেই। অগত্যা রানা ভাই নিজেই খোঁজ নিতে গেলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই কোভিড টেস্টের ব্যবস্থা করে ফিরে এলেন।


জনপ্রতি এক হাজার ইজিপশিয়ান পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ছয় হাজার টাকা হাতে নিয়ে একে একে সবার নাকে লম্বা কাঠি দিয়ে জোরেসোরে একটা করে গুতা দিয়ে স্প্যাম্পল কালেকশন শেষ হবার পরে আবার অপেক্ষার পালা। এবারে দুটি ভিন্ন চিন্তা এসে মাথায় ভর করল। প্রথমত: যদি আমাদের তিনজনের মধ্যে কোনো কারণে পরীক্ষায় কারও করোনা পজিটিভ চলে আসে তাহলে কী হবে! দ্বিতীয়ত: আমাদের ফলাফল আমাদের অনুকূলে থাকলেও তা পেতে কতো দেরি হবে এবং সেক্ষেত্রে এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের স্থানীয় অভিভাবক রানা ভাইয়ের পুত্র সৌরভ আমাদের জন্য কতোক্ষণ কোথায় অপেক্ষা করবে! সৌরভ জাতিসংঘের একটি সংস্থায় কাজ করে, আফিস থেকে হয়তো আধাবেলা ছুটি নিয়ে আমাদের নিতে এসেছে। কিন্তু ওর সাথে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। আমাদের ভাগ্য ভালো নাকি কায়রো এয়ারপোর্টে কোভিড পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত স্বাস্থা কর্মকর্তাদের বাণিজ্য বুদ্ধি ভালো, বলা মুশকিল! আমাদের অবাক করে দিয়ে মিনিট পনের পরে রানাভাই হাসতে হাসতে তিনটি পাসপোর্ট হাতে এসে বললেন, ‘রিপোর্ট নিগেটিভ! এবারে বাইরে বেরিয়ে যাওয়া যায়।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘রিপোর্টের কাগজ কই?’
‘কাজপত্র কিছুই দেয়নি, পাসপোর্ট হাতে দিয়ে বলল, তোমরা এবার যেতে পারো। আর কাগজ বলতে আরবি লেখা কিছু একটা দিয়েছে, সেখানে কারও নাম বা টাকার অংক এমনকি পজিটিভ নিগেটিভ কিছুই লেখা নেই।’

সারা দুনিয়াজুড়ে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার ফলে যে কোভিড টেস্ট বাণিজ্য শুরু হয়েছে, বুঝতে পারলাম, এটিও তারই একটি অংশ। ঢাকা এয়ারপোর্টে ল্যাবরোটারি টেস্টের রিপোর্ট দেখে সিল মেরে দেয়া ছাড়া আর কোথাও কেউ কিছু দেখতে চায়নি। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ঘোষণাপত্র এবং এয়ারলাইন্সের ডিক্লারেশন ফর্ম নামের যে দুটি দীর্ঘ ছককাটা কাগজ যথেষ্ট সময় নিয়ে পুরণ করতে হয়েছিল, তার কোনো দরকার হয়নি। কাগজ দুটো আমার ফাইলেই পড়ে আছে। আমাদের লাগেজ একেবারেই সামান্য, তারপরেও চাকা গড়িয়ে টেনে নেয়ার চেয়ে ট্রলি নিঃসন্দেহে ভালো। ঢাকা বিমান বন্দরের মতো দুর্লভ ট্রলির জন্য অপেক্ষা করতে বা ট্রলি খুঁজে বের করতে হলো না। একটা আধুনিক এয়ারপোর্টে হাত বাড়ালেই ট্রলি। আমরা দুটি ট্রলি নিয়ে সবুজ দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাবার সময় আমার ট্রলিটা বারবারই ঘুরে এয়াপোর্টের ভেতরে ঢুকে যেতে চায়। এই ঘাড় বাঁকা ট্রলি কোনো রকমে ধাক্কা দিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে বেরোতেই দেখা হয়ে গেল সৌরভের সাথে। এক গাল হেসে কুশল জিজ্ঞাসার সাথে সাথেইআমার হাত থেকে ট্রলি নিজের হাতে নিয়ে নিল সৌরভ। পার্কিং জোনে ওর গাড়িটা যেখানে আছে সে পর্যন্ত ট্রলি ঠেলে হেঁটে যেতে হবে। রাস্তা পেরিয়ে অনেকটা নিচের দিকে পার্কিং লটে পৌঁছাতে ওর যে যথেষ্ট কষ্ট হবে তা বুঝতে পারছিলাম। তারপরেও সেই ট্রলি ঠেলে পিতা-পুত্র এসে পৗঁছালে আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। রানা ভাই পার্কিংয়ের কোনায় একটা কিয়স্ক থেকে কফির গ্লাস হাতে নিয়ে সিগারেট ধরালেন। আসলে কফি পানের চেয়ে ধূমপানটা তার জন্যে জরুরি হয়ে পড়েছিল, বুঝতে পারি। আমাদের যেহেতু ধূমপানের ঝামেলা নেই, তাই কফি পানেরও তাগিদ অনুভব করি না।

রানা ভাইয়ের সিগারেট শেষ হলে সৌরভ উঠে বসে ড্রাইভিং সিটে। এয়ারপোর্ট থেকে কায়রোর অভিজাত মাআদি এলাকায় সৌরভের বাসার পঁয়ত্রিশ কিলোমিটারের মতো দূরত্ব পঞ্চাশ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায়। রাস্তায় দুই এক জায়গায় গাড়ির গতি শ্লথ হলেও তেমন কোনো যানজট নেই। পথে পথে উড়াল সেতু, বিভাজিত সড়ক দ্বীপে এবং দু পাশের ফুটপাথের ওপারে কিছু গাছপালা, বিশেষ করে মৃতপ্রায় খেজুর গাছের সারি চোখে পড়ে। যে কোনো আধুনিক শহরের মতোই দেয়াল দিয়ে ঘেরাবিশাল এলাকা জুড়ে সরকারি বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান, বহুতল বাণিজ্যিক ভবন এবং বিস্তৃত আবাসিক এ্যাপার্টমেন্ট দেখতে দেখতে আমরা এগোতে থাকি। পথের পাশে নির্মাণ কাজের দক্ষযজ্ঞ এবং আবর্জনার স্তূপও দেখা যায়। সবকিছু মিলিয়ে প্রথম দর্শনে কেন যেন এই শহরকে বড় বেশি পুরোনো, ভীষণ ধূলি মলিন, ভাঙাচোরা আর অগোছালো মনে হয়।

আমরা প্রায় কুড়ি পঁচিশ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের মতো গাড়ি চলে ডান দিকের লেন ধরে। প্রথম দিকে অনভ্যস্ত চোখে মনে হতো রং সাইড দিয়ে যাচ্ছি, যে কোনো মুহূর্তে উল্টো দিক থেকে গাড়ি এসে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধবে। আজকাল আর সে ভয় নেই, তাছাড়া সৌরভ ড্রাইভ করে চমৎকার। মাঝে মাঝে পথের ডাইনে বাঁয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপনা বা দর্শনীয় কোনো কিছুর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল। আল নাসের সড়কের ডান দিকে সিটাডেল, কায়রো শহরের মধ্যযুগীয় প্রতিরক্ষা দুর্গ। সৌরভ বলল, ‘আমরা এখন সিটি অফ দ্য ডেড এর পাশে দিয়ে যাচ্ছি। ডান দিকের পুরো এলাকাটাই সমাধিক্ষেত্র।’

মুসলিম বিশ্বে যার পরিচিতি গাজী সালাহউদ্দিন নামে সেই সালা-আলদিন-আল-আইয়ুবীর দুর্গের উত্তরে দক্ষিণে বিস্তৃত কায়রোর কবরস্থান। ইসলামি শাসনামলে মোকাদ্দাম পাহাড়ের পায়ে ঐতিহাসিক নগর দেয়ালের বাইরে মৃতদেহ সমাহিত করার এই কবরস্থান এখন সিটাডেলের উত্তরে দক্ষিণে প্রায় চার কিলোমিটার বিস্তৃত! শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কায়রোর শাসক সম্প্রদায় এবং অভিজাত নাগরিকের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মৃতদেহ কবরস্থ করার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছিল যে সমাধিক্ষেত্র, সেটির পরিচিতি কেন মৃত মানুষের নগরী!সমাধিক্ষেত্র বা সিমেস্ট্রি বলতে যেমন শান্ত সমাহিত, নীরব নির্জন একটি এলাকা বোঝায়, সিটি অফ ডেড তেমন কোনো গোরস্তান নয়। এখানে কেউ যদি নিজেকে ‘কবরবাসী’ বলে পরিচয় দেয়, তাহলে তাকে মৃত ভাবার কোনো কারণ নেই। কায়রো শহরের দুই কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস এই মৃতপুরীতে।



কোনো একটি শহর নগর বা জনপদ সম্পর্কে বই পড়ে, ছবি দেখে অথবা অন্য কারও অভিজ্ঞতার আলোকে আসলে কিছুই যে জানা হয় না, আমার আরও একবার সে কথা মনে হলো। কায়রোর একেবারে নগর কেন্দ্রে বিস্তৃত এলাকায় একটি অস্বাভাবিক বসতির অস্তিত্বের কথা এই শহরে না এলে হয়তো কখনো জানাই হতো না। ষোড়শ শতক থেকেই কবরস্থানের ভেতরে মৃতদের সঙ্গে জীবিতদের বসবাস শুরু হলেও সে সময় এখানে গোরখোদক, ফলক লিপিকার এবং ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে যুক্তরাই কেবল বসতবাড়ি গড়ে তুলেছিলেন।

ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে কায়রোর আবাসন সংকট বাড়তে থাকলে সমাধিক্ষেত্রেও জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। স্থানীয়দের কাছে ‘আল আরাফা’ নামের এই গোরস্তানে কবরের ফাঁকে ফাঁকে শুরু হয় ছোট ছোট ঘর তুলে বসবাস। কোথাও বিশিষ্টজনদের সমাধিই হয়ে যায় রূপান্তরিত ভবন। সড়কের পাশে দিয়ে চলতে চলতেই দেখা যায় গোরস্তানের সীমানা দেয়ালের ভেতরে দিব্যি সংসার পেতে বসেছে অসংখ্য মানুষ। এখানে দুটি কবরের দেয়ালের সাথে উঠে গেছে ঘরের দেয়াল, কবরের সাথে চুলা জ্বালিয়ে চলছে রান্না বান্না, কবরের সিমেন্টর খুঁটিতে দড়ি টানিয়ে শুকানো হচ্ছে নিত্যদিনের জামা কাপড়। কবরে হেলান দিয়ে তাস পিটানো কিংবা দুই কবরকে দুটি গোলপোস্ট বানিয়ে ছোটদের ফুটবল খেলার দৃশ্যও বিরল নয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে বর্তমানে নতুন করে এখানে বসবাসের উদ্যোগ নেয়া নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই কবরবাসীদের গৃহ নির্মাণ প্রকল্প। সুফি দরবেশ বুজর্গ ব্যক্তির কবর ঘিরে গড়ে ওঠা সমাধি ক্ষেত্র বসবাস উপযোগী করে নিয়ে আজও চলছে জীবিত ও মৃতের শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান।

আমরা একটি অভাবনীয় জনপদ অতিক্রম করে এগিয়ে যাই শহরের আরও দক্ষিণে। নীল নদের পূর্ব তীরে অভিজাত আবাসিক এলাকা মাআদিতে প্রবেশের পরপরই দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। সবুজ গাছপালায় ঢাকা, পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, সুদৃশ্য আবাসিক ভবন ও ঝকঝকে শপিংমল এবং দোকানপাট দেখে একই শহরের ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং তার স্পষ্ট প্রতিফলন দৃষ্টি এড়ায় না। এখানে রেস্টুরেন্ট, বার এবং পথের মোড়ে কিয়স্ক বা কফিশপ এবং প্রায় প্রতিটি বাড়ির সামনে থেমে থাকা ঝকঝকে গাড়ি দেখেও এখানকার লোকজনের অবস্থা ও অবস্থান অনুমান করা যায়। সৌরভের বাসা একটা এ্যাপার্টমেন্ট ভবন। একটু পুরোনো আদলে তৈরি হলেও ঠিক আমাদের বহুতল ভবনের এ্যাপার্টমেন্টের মতো মনে হয় না। একটা একক বাড়ি, চারিদিক খোলামেলা। কয়েক ধাপ সিঁড়ি এবং দীর্ঘ করিডোর পেরিয়ে কোলাপসিবল গেট লাগানো ছোট একটা লিফটে চারতলায় উঠে গেলাম। আমাদের দিন কয়েকের জন্য নির্ধারিত ঘরে এসে বারন্দার দরজা খুলতেই চোখে পড়লো একটা মসজিদের মিনার। আসার পথে রাস্তায় চোখে পড়েছে অসংখ্য মসজিদ এবং বেশ কয়েকটা গির্জা। মাআদি এলাকাও তার ব্যতিক্রম নয়। অভিজাত এলাকায় মসজিদের সংখ্যা একটু বেশিই হবে এবং সেটাই স্বাভাবিক।

সকাল আটটায় এয়ারপোর্টে নেমে প্রায় ঘণ্টা চারেক পরেক ঘরে এসে ভীষণ ঘুম পাচ্ছিল। সৌরভের অফিসে যাবার তাড়া ছিল। দিনে দুপুরে খাবার অভ্যাস ও অনেক দিন আগেই বাদ দিয়েছে। তবে নিজে লাঞ্চ না করলেও আমাদের জন্যে রান্না করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখে গেছে। বাঙালি ঘরানার খাবার দিয়ে কায়রোর প্রথম লাঞ্চ শেষ করে বিছানায় পড়ার সাথে সাথে ঘুমের অতলে তলিয়ে গিয়েছিলাম। যখন ঘুম ভাঙল তখন পাশের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে মাগরিবের আজান।

(চলবে)

Header Ad

বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। সরকারি সফরের অংশ হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে আসার পরিকল্পনা করছেন তিনি। চলতি বছরের শুরুর দিকে শরীরে ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার পর বিদেশ সফর থেকে বিরত রয়েছেন ব্রিটিশ এই রাজা। তবে কিছু দিনের মধ্যে তিনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সফর করতে পারেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস ও তার স্ত্রী রানি ক্যামিলা অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয় উপমহাদেশ সফরের পরিকল্পনা করছেন। রাজা তৃতীয় চার্লস ক্যানসার থেকে ধীরে ধীরে সেরে ওঠায় শিগগিরই এই সফরে বের হতে পারেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটেনের রাজার সফরের পরিকল্পনাকে তার শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতির লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ঠিক কবে নাগাদ ব্রিটিশ রাজা ও রানির এই সফর শুরু হতে পারেন, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য জানায়নি ডেইলি মিরর।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তৃতীয় চার্লস সব ধরনের সফর বাতিল করতে বাধ্য হন। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান সফরের এই পরিকল্পনার মাধ্যমে পুনরায় তার সফর শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রেক্সিট পরবর্তী বিশ্বে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক সংযোগ প্রতিষ্ঠা করতে চায় ব্রিটেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্রিটিশ রাজা ও রানির সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

দেশটির একটি সূত্র বলেছে, ‘‘রাজা এবং রানির জন্য এই ধরনের সফরের পরিকল্পনা করাটা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের একটি সফর শুরুর কথা রয়েছে; যা বিশ্ব মঞ্চে ব্রিটেনের জন্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ হবে। এই সময়ে ব্রিটেনের জন্য রাজা এবং রানিই জুতসই রাষ্ট্রদূত।’’

ডেইল মিরর বলছে, রাজ সফরের জন্য সম্ভাব্য আয়োজক দেশগুলোর সাথে আলোচনার করতে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান সফরের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। গত বছর ভারত সফর বাতিল করার পর রাজা ও রানিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে দেশটিতে ব্রিটিশ রাজা ও রানির সফর নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। গত মাসে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে সাক্ষাৎ করেছিলেন এই দুই রাষ্ট্রনেতা। এছাড়া গত মঙ্গলবার ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ‘‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’’ স্বাগত জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেন যুদ্ধ ‘‘শান্তিপূর্ণভাবে শেষ’’ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন।

২০০৬ সালে ক্যামিলাকে সঙ্গে নিয়ে ওয়েলসের যুবরাজ হিসেবে এক সপ্তাহের জন্য পাকিস্তান সফর করেছিলেন চার্লস। সেই সময় শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের কাছে পৌঁছাতে আমার প্রায় ৫৮ বছর লেগেছে। তবে এটা যে চেষ্টা করার অভাবে নয়, তা আমি বলতে পারি।’’

Header Ad

নির্বাচনের ফাঁকা মাঠ ভেবে খুশি হচ্ছেন, সাবধান হন : তারেক রহমান

ছবি: সংগৃহীত

যেসব নেতাকর্মী সামনে নির্বাচনের ফাঁকা মাঠ ভেবে খুশি হচ্ছেন। তারা সাবধান হন। সামনে ভয়ংকর অন্ধকার দেয়াল আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেল পাঁচটায় রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলার বিষয়ে আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার পড়ে গেছে, পালিয়ে গেছে। তারা তো বসে নাই, তারা ষড়যন্ত্র করছে। যদি তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়- মামলা তো উঠবেই না বরং নেতাকর্মীদের নামে জ্যামিতিক হারে ২০টা মামলা হয়ে যাবে। সেই সম্ভাবনাও আছে। সেই সম্ভাবনাকে যদি নস্যাৎ করে দিতে হয়, তাহলে আজকে থেকে আপনাদের প্রত্যেকেই সতর্ক হতে হবে।

তিনি বলেন, আপনাদের একটাই টার্গেট হতে হবে। জনগণ, জনগণ অ্যান্ড জনগণ। এর বাইরে যদি কিছু চিন্তা করেন। তাহলে পতিত স্বৈরাচার সফল হবে। তারা সফল হলে আইনজীবী সহকর্মীর বক্তব্য অনুযায়ী মামলা আপনাদের মিটবে না। বরং মাথার ওপরে আরও ১০টি, ২০টি মামলা চেপে বসবে। আপনাদের নিজেকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে উপায় একটাই- জনগণের আস্থা অর্জন করেন। আপনার পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করতে হলে উপায় একটাই জনগণের আস্থা আর্জন করেন।

তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা আছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। বিএনপির বাইরে অন্য সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারা যথাযথভাবে এটা দেখেনি। পতিত স্বৈরাচার সরকার প্রতিবেশী দেশকে খুশি করার জন্য ইচ্ছা করেই করেনি। আমরা সময়মতো অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করবো। আমাদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়েই কাজ করবো।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণের ইচ্ছে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গবেষণায় উঠে আসছে বাংলাদেশের অনেকাংশ, অর্ধেক বা তার কম অংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। খালেদা জিয়া সরকারের সময় আমরা বৃক্ষমেলা করতাম। আমাদের যেভাবেই হোক, এই কর্মসূচি আবার শুরু করতে হবে। সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে বৃক্ষরোপণের জন্য। গাছ প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। আগামী দিনে আমরা সুযোগ পেলে পাঁচ বছরে আমরা পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণ করব।

এর আগে সকাল ১০টায় প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। এসময় বক্তব্য দেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, চেয়ারপারসনের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মাহাদী আমিন।

কর্মশালায় আলোচনা করেন, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশিদা বেগম হীরা ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিব। সভাপতিত্ব করেন, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত।

বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব এবিএম মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলাম আলীম প্রমুখ।

Header Ad

গোপনে দুইজনকে বিয়ে, কাউকেই অধিকার বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল

ছবি: সংগৃহীত

একইসঙ্গে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী। স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি দুই স্বামীর কাউকেই। গোপনে মন জয় করে চলছিলেন দুই স্বামীর। প্রায় দুই বছর দুই স্বামীর সংসার করার পর অবশেষে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে হলফনামার মাধ্যমে গোপনে বিয়ে করেন রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের আবু হানিফ শেখের ছেলে ইউটিউবার সাগর শেখ ও আলীপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাবা, মা ও ভাই প্রবাসে থাকায় বাবার বাড়িতে একাই বসবাস করতেন জান্নাতুল। সেখানে যাতায়াত করতেন স্বামী সাগর শেখ। সংসার জীবন ভালোই চলছিল এ দম্পতির। হঠাৎ জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সাগরের। এরই মধ্যে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে পরিবারের সিদ্ধান্তে অন্য এক যুবককে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জান্নাতুল।

এদিকে স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের বাড়িতে তুলে না নেয়ায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। প্রথম স্বামী সাগরের দাবি, প্রায় দুই বছর ধরে তার সঙ্গেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক রেখে চলছিলেন জান্নাতুল।

স্ত্রীর পরিবার তাকে মেনে না নেয়ায় তার বোনের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে একান্তে সময় কাটাতেন স্বামী-স্ত্রী। চলতি মাসের ২ নভেম্বর তারা একসঙ্গে নিজেদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন বলেও দাবি করেন সাগর।

তবে দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় স্বামীর ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে পারেন সাগর। আর এতেই বাঁধে বিপত্তি। তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জান্নাতুল। এখন দ্বিতীয় স্বামী নিয়েই সংসার করতে আগ্রহী তিনি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেন সাগর।

সাগর শেখ বলেন, জান্নাতুল ও আমার বিয়ের বিষয়টি জান্নাতুলের মা ও বোন জানতো। বিয়ের পর আমাদের সংসার জীবন ভালোই কাটছিল। তবে হঠাৎ করে জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় তাদের বাড়িতে আমার যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বিয়ের চার মাসের মাথায় আমি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজে কয়েকদিনের জন্য রাজবাড়ীর বাইরে যাই।

কাজ থেকে এসে শুনি আমার স্ত্রী জান্নাতুল অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। আমি আমার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি। ওই ছেলের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক হয়নি। আমি তোমার স্ত্রী আছি, তোমারই থাকবো। আমার আম্মু দেশে আসলে আমি তোমার কাছে চলে আসবো।’

সাগর বলেন, ‘আমি জান্নাতুলদের বাড়ি যাতায়াত করতে না পারার কারণে বিভিন্ন সময় আমরা রাজবাড়ী শহরে আমার বোনের বাসায় ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতাম। ওর কলেজে আনা-নেয়াসহ সবকিছু আমিই করতাম। এমনকি গত ২ নভেম্বরও আমরা আমার বোনের বাসায় আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছি।

তবে বিবাহ বার্ষিকী পালনের দুদিন পরে আমি জানতে পারি জান্নাতুলের সঙ্গে ওই ছেলের (দ্বিতীয় স্বামীর) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চলছে। ওই ছেলে নিয়মিত জান্নাতুলের বাবার বাড়িতে এসে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাচ্ছে। এ বিষয়ে আমি জান্নাতুলকে প্রশ্ন করলে সে আমাকে গালাগালি করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে সে আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলেও জানায়।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি জান্নাতুলের মা প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছে। তিনিও এখন আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে অস্বীকার করছেন। অথচ তার মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেম থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত সবকিছুই তিনি জানতেন।

এখন বাধ্য হয়ে আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে পেতে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গত ১১ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছি। এছাড়া ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর বিজ্ঞ ১নং আমলি আদালতে মামলা করেছি।’

সাগর আরও বলেন, ‘আমাকে ডিভোর্স না দিয়ে আমার স্ত্রী অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে আমাকেও ম্যানেজ করে চলেছে, একইভাবে তার দ্বিতীয় স্বামীকেও ম্যানেজ করে চলেছে।

এটা আইন ও ধর্মীয় দুই দিক থেকেই অপরাধ। এছাড়া আমি এ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর পেছনে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। তারপরও আমি আমার স্ত্রীকে ফেরত চাই। তাকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।’

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজী হননি জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। তবে তার দাবি, জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি জানতেন। সাগরের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি জানতেন না।

জান্নতুলের দ্বিতীয় স্বামীর বাবা বলেন, ‘কোন এক সূত্রে আমার শ্বশুর জান্নাতুলদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাকে পছন্দ করে। পরে আমি গিয়ে তার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বিয়ের দিন ধার্য হয়। বিয়ের আগের দিন সাগর নামে এক ছেলে আমার ছেলেকে ফোন করে বলে জান্নাতুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে।

সে জান্নাতুলের সঙ্গে নিজের একটি ছবিও আমার ছেলেকে পাঠায়। এরপর আমি ওই এলাকায় আমার আত্মীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের কোন সম্পর্ক ছিল না। এছাড়া জান্নাতুলকেও আমি সরাসরি প্রশ্ন করলে সেও সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে।

পরে ঘরোয়া আয়োজনে জান্নাতুলের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হয়। এখন সাগর নামে ছেলেটি জান্নাতুলকে তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করছে। আমি যতদূর জেনেছি সাগরের স্ত্রী ও সন্তান আছে। এখন বিষয়টি আইনগতভাবেই সমাধান হবে।

আর জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বলতে তার বাবার বাড়িতে গেলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি।’

বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তার মা হাচিনা বেগম বলেন, ‘সাগরের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল৷ তবে বিয়ের দুই মাসের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার মেয়ে তো ছোট বুঝে নাই, যে কারণে সেসময় ওরা ডিভোর্সের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে। এর ৪/৫ মাস পরে আমার মেয়ের আবার বিয়ে হয়েছে। সাগর আমার মেয়েকে চাপে ফেলে এতোদিন তার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য করেছে।’

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘সাগর ও জান্নাতুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তার নোটিশের একটি কপি ইউনিয়ন পরিষদে আসার কথা। এরকম কোন কপি কখনো পাননি তারা।’

তিনি বলেন, ‘সাগর আমার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছে। আমিও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সাগর জান্নাতুলের প্রথম স্বামী। সে সাগরকে তালাক না দিয়েই বিয়ের চার মাসের মাথায় অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে। প্রায় দুই বছর সে চালাকি করে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করেছে। সাগরের কাছ থেকে জান্নাতুল অনেক টাকা-পয়সা খেয়েছে বলেও আমি জানতে পেরেছি।’

আবু বক্কার বলেন, ‘সাগরের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি জান্নাতুলের বাবাকে নোটিশের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকি। তবে নোটিশ পেয়ে তিনি তার ছোটভাই ও তাদের এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে এসে বলেন, আমি যেন পরিষদে বসে বিষয়টি সমাধান করে দেই। তবে এর ১/২ দিন পরে তিনি জানান, এ বিষয়ে তারা বসতে চান না।

আইনগতভাবে তারা বিষয়টি সমাধান করতে চান। পরে আবার তারা বসতে সম্মত হলে জান্নাতুল ও তার বাবা এবং তাদের এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালামসহ পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদে বসেছিলাম। সাগরও সেখানে ছিল। তবে সেখানে জান্নাতুল বলে দিয়েছে সে কোনভাবেই সাগরের সঙ্গে ঘর সংসার করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা নির্যাতিত হয়। কিন্তু ছেলেরা যে কতোটুকু নির্যাতিত হয় তা এই সম্পর্কের জের দেখলে বোঝা যায়। আমাদের সমাজে ছেলেরা আরও বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। সেটা নীরবে নিভৃতে ছেলেরা সহ্য করে যাচ্ছে। আমি আশা করবো আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা বিষয়টি তুলে ধরবেন।

আপনাদের সংবাদের মাধ্যমে মানুষ যাতে সচেতন হতে পারে। আজকে আমার ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটেছে। আর কোন ইউনিয়নে যেন এমন ঘটনা কোনদিন না ঘটে।’

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস
নির্বাচনের ফাঁকা মাঠ ভেবে খুশি হচ্ছেন, সাবধান হন : তারেক রহমান
গোপনে দুইজনকে বিয়ে, কাউকেই অধিকার বঞ্চিত করেননি জান্নাতুল
শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন
বিরামপুরে আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার
বিএনপির কাঁধে অনেক দ্বায়িত্ব: তারেক রহমান
'জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত'- তোফায়েল আহমেদ
৩ মাসে জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা : জ্বালানি উপদেষ্টা
জুটি বাধলেন মিঠুন চক্রবর্তী-আফসানা মিমি
দেশ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই : তারেক রহমান
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আশঙ্কা
অক্টোবরে সড়কে প্রাণ গেছে ৪৭৫ জনের
গায়ানায় দলের সঙ্গে যোগ দিলেন সাকিব
আইপিএল নিলামের আগেই নিষিদ্ধ হলেন ভারতের ২ ক্রিকেটার
গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ