শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ড. মিল্টন বিশ্বাস

মোস্তফা কামালের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামালের উপন্যাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উপন্যাস লিখতে গিয়ে তিনি ইতিহাসের পথ ধরে এগিয়েছেন, চিত্রিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ। যার ফলে তার উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ মিলেমিশে একাকার হয়েছে, উঠে এসেছে বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক ‘অগ্নিকন্যা’ (২০১৭), ‘অগ্নিপুরুষ’ (২০১৮) ও ‘অগ্নিমানুষ’ (২০১৯) তাঁর অন্যতম সৃষ্টি। উপন্যাসগুলোর কাহিনি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখানে ইতিহাস ও শিল্প পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। ইতিহাসের কঙ্কালের ওপর কল্পনার অস্থিমজ্জা মিশিয়ে লেখক সৃষ্টি করেছেন সফল একেকটি সাহিত্যকর্ম। লেখকের কল্পনায় ইতিহাসের চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ঘটনা ও চরিত্রের দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উপন্যাসের কাহিনি পেয়েছে প্রত্যাশিত গতি। এসব উপন্যাসের ভেতরে আছে রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সমাজসংলগ্ন মানুষের অধিকারের কথা; ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, শ্রেণি বৈষম্য, ঘাত-প্রতিঘাত-সংঘাত, বিপর্যয়, রাজনৈতিক নানা অস্থিরতা ও সমকালীন নানা প্রসঙ্গ আখ্যানে স্থান পেয়েছে।

 

মোস্তফা কামালের উপন্যাসত্রয়ীর সময় হচ্ছে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১, দেশভাগ থেকে স্বাধীনতা। সেই সময় এবং ইতিহাস নির্মাতাদের নিয়ে লেখা ট্রিলজি। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এছাড়াও আছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান। আরও আছেন খাজা নাজিম উদ্দিন, গোলাম মোহাম্মদ, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান প্রমুখ। উপন্যাসে বর্ণিত সময়ের ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উপস্থাপিত হয়েছে লেখকের বয়ানে। প্রতিটি ঐতিহাসিক চরিত্রকে তিনি নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছেন। তাদের জীবন-যাপন, তাদের আচরণ, তাদের কথা বলার ধরন কেমন ছিল, তাও ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। ঐতিহাসিক ঘটনা ও চরিত্রগুলো সত্য হওয়ায় সেগুলোকে নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে তিনি সতর্ক ছিলেন। সঠিক তথ্যের জন্য বারবার তাঁকে যাচাই-বাছাই করতে হয়েছে যদিও তিনি ইতিহাস লিখতে বসেননি। তবে ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ও চরিত্রগুলো নিয়ে লেখা উপন্যাসের আখ্যান নির্মিতি কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজটাকে সহজভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরার কৌশলটাই তাঁকে রপ্ত করতে হয়েছে।

‘অগ্নিকন্যা’ উপন্যাসে ১৯৪৭ থেকে ছেষট্টি সালের রাজনৈতিক ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন। যে কালকে তিনি অগ্নিকন্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। যে সময় রাজনীতি পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তাদের দমন-পীড়ন সত্ত্বেও বাঙালির প্রতিবাদ থেমে থাকেনি। এই প্রতিবাদ রূপায়ণ করার জন্য লেখক ইতিহাসের নায়কদের হাজির করেছেন আখ্যানের ভেতর। আবার সেই ইতিহাসের নায়কদের সামাজিক মানুষ করে তোলার কৃতিত্বও তাঁর।

‘অগ্নিকন্যা’ উপন্যাসে উপস্থাপিত ঘটনাবলি ইতিহাসের উপকরণ। অবশ্য ইতিহাসের ঘটনার সত্যের ভিত্তিতে রচিত হয়েছে এ উপন্যাস। বঙ্গবন্ধুর মতো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের ঘটনাক্রমকে অনুপুঙ্খভাবে রূপায়ণ করেছেন ঔপন্যাসিক। এসব ক্ষেত্রে জাতির পিতার সঙ্গে অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রকে পূর্ণাঙ্গভাবে চিত্রায়ণের প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ মোস্তফা কামাল ইতিহাসের একটি সময়কে পটভূমি হিসেবে বেছে নিয়ে সেই সময়ের মানুষকে চিত্রিত করেছেন। অনেকেই ইতিহাসের পটভূমিতে নির্মিত গল্প-কাঠামোর মানুষের ভেতর দিয়ে বর্তমানের আকাঙ্ক্ষা ও মননকে চিত্রিত করেন। ঐতিহাসিক সময় ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খতা ভেঙে বের হয়ে আসে। বাংলা সাহিত্যে লিখিত ইতিহাসের অবিকৃত সময়কে নিয়েও উপন্যাস রচনার প্রচেষ্টা রয়েছে।

মূলত ইতিহাসের ঘটনাকে আশ্রয় করে ‘অগ্নিকন্যা’উপন্যাস রচিত হওয়ায় একটি কালের সামগ্রিক পরিচয় পাওয়া যায় এখানে। আবার সেখানে রাজনীতি সম্পৃক্ততায় নেতা এবং জনগণ উপস্থাপিত হয়েছে। তবে মোস্তফা কামাল একটি কালপর্বের সামগ্রিক বিষয়কে তুলে ধরেছেন, যার ভেতর নতুনত্ব আছে। বিশেষত তিনি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে উপকরণ নিয়ে ঘটনা সাজিয়েছেন কিন্তু সেখানে শেখ মুজিবকে আমরা নতুন করে খুঁজে পাই। দেখতে পাই পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র আর বাঙালি নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের ভেতর তিনি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হচ্ছেন নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে ও তৃণমূল-সংলগ্নতায়।

অন্যদিকে এ উপন্যাসের সূচনায় মতিয়া চৌধুরীর বাল্যকাল দিয়ে শুরু হয়েছে এবং ১৯৬৬ সালে যখন কাহিনির গতি পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে তখন তাকে আমরা রাজপথের সক্রিয় কর্মী হিসেবে দেখতে পাচ্ছি। এই চরিত্রটিকে সামাজিক করে তোলার পুরো কৃতিত্ব মোস্তফা কামালের। কারণ পুলিশ অফিসারের কন্যা মতিয়া বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ায় পাকিস্তানি শাসকরা উদ্বিগ্ন হয়। সংকট তৈরি হয় মহিউদ্দিন-নূরজাহান বেগমের সংসারে। কিন্তু হঠাৎ সাংবাদিক বজলুর রহমানকে বিবাহ করে চমকে দেন মতিয়া। স্বামী প্রকৃত অভিভাবক হওয়ায় দমে যায় শাসকগোষ্ঠী। অর্থাৎ নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করে কাহিনির ভিন্ন ভিন্ন গতিমুখ নির্দেশ করেছেন ঔপন্যাসিক।

‘অগ্নিকন্যা’ উপন্যাসে ইতিহাসের প্রসঙ্গ বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে। ইতিহাসকে উপজীব্য করায় উপন্যাসে সেই সময়ের উল্লেখযোগ্য সকল নেতাকে কাহিনির ভেতর সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, বঙ্গবন্ধু যেমন তেমনি জিন্নাহ থেকে শুরু করে বাঙালির শত্রু সকল পাকিস্তানি চরিত্র আখ্যানে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে উপস্থাপিত। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে মিডিয়ার যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তারও বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে এই উপন্যাসে আবার ইতিহাসের কাহিনি ও চরিত্রকে অবলম্বন করা হয়েছে বলেই অতীতচারী কল্পনা অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে ‘অগ্নিপুরুষ’ ও ‘অগ্নিমানুষ’ উপন্যাস দুটিতেও ইতিহাস ও রাজনীতির প্রসঙ্গ আছে। মোস্তফা কামাল অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে উপন্যাসের মূল চরিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উপস্থাপন করেছেন। যদিও চরিত্রটি বিনির্মাণে ঔপন্যাসিকের ঝুঁকি ছিল। কারণ বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে ইতিহাস ও পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনে উপন্যাস্ত করা মোটেও সহজ ছিল না। ইতিহাসের মূল চরিত্রকে অক্ষুণ্ন রেখে চরিত্রগুলোকে যথাযথ ভূমিকায় উপস্থাপন করা কঠিন কাজ ছিল। সতর্কতার সঙ্গে সেই কাজটি করেছেন লেখক।

বাঙালির ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন। এটি ছিল বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে এক বিরাট মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল রচনা করেছেন ‘অগ্নিপুরুষ’। ৬৬র ৬ দফা আন্দোলন থেকে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব কীভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন এবং রূপান্তরিত হন ‘অগ্নিপুরুষ’ উপন্যাসে সেই কথাই বিধৃত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু চরিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে ইতিহাস ও রাজনীতির চমৎকার মেলবন্ধন তৈরি করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, সমাজনীতি সর্বোপরি তাঁর জীবনকাঠামোকে ইতিহাসের আলোকে তুলে ধরেছেন। মূলত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনই এই উপন্যাস। ইতিহাসের যথাযথ রূপায়ণের কারণে ঔপন্যাসিক কোনো তথ্য বাদ দেননি বা অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করেননি। সেক্ষেত্রে তিনি ইতিহাসের পথ ধরেই হেঁটেছেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের কাছে এক আবেগের নাম। আর আবেগ দিয়ে কোনো ইতিহাসকে অতিরঞ্জিত করার সুযোগ থাকে, কিন্তু এই ঔপন্যাসিক সে পথে হাঁটেননি। তিনি ইতিহাসের বয়ান করে গেছেন ইতিহাসের আলোকে।

ট্রিলজির শেষপর্ব ‘অগ্নিমানুষ’উপন্যাস। ১৯৬৯ থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এর আখ্যান বিস্তৃত। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সময়টা খুব লম্বা না হলেও বাঙালি জাতির জন্য তা ছিল ঘটনাবহুল। বাঙালি মুসলমান এদেশে দীর্ঘদিন আত্মপরিচয়ের সংকটে ছিল। শাসকের দৃষ্টিতে তারা না ছিল বাঙালি না ছিল মুসলমান। সাতচল্লিশের ধর্মভিত্তিক দেশভাগে বাঙালি মুসলমান আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদায় নিজের মাটিতে দাঁড়ানোর স্বপ্নে বিভোর হলো। কিন্তু অচিরেই তারা তাদের স্বপ্নভঙ্গের বার্তা শুনতে পেল। বিজাতীয় পাকিস্তানিরা ধর্মের ছদ্মবেশ ধারণ করে বাঙালির চেতনা মূলে আঘাত হানল। ফলে বাঙালির ধর্মপরিচয় ঊর্ধ্বে রেখে জাতিসত্তার পরিচয় নিয়ে রুখে দাঁড়াল। ঔপন্যাসিক মোস্তফা কামাল এই সময় বাঙালির জাগরণ, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও নেতৃত্বের বিষয়টিকে চমৎকার দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন, যার কেন্দ্রে আছেন বঙ্গবন্ধু।

মূলত ত্রয়ী উপন্যাসে মোস্তফা কামাল বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্তর্লোকে উঁকি দিয়ে একটি বিশেষ যুগ- বিশেষত দেশভাগের পর থেকে উত্তাল ঘটনার দিকে মনোযোগী হয়েছেন। মুখ্য চরিত্রগুলোকে কেন্দ্র করে অন্য ব্যক্তিত্বের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, আশা-নিরাশার প্রতিফলন ঘটেছে লেখকের নিজের অভিব্যক্তিতে। অবশ্য লেখক অতীতের রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার-সংস্কার, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি সকল বিষয়ে সচেতন ছিলেন। আবার তাঁকে ঐতিহাসিক বাস্তবতা প্রকাশে নির্লিপ্ত থাকতে হয়েছে।

 

মোস্তফা কামাল সৃজিত আখ্যানের প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক জীব। আর এ ক্ষেত্রে ঔপন্যাসিককে সাধারণ মানুষ থেকে বেশি রাজনীতি সচেতন হতে হয়েছে। মূলত ইতিহাস তো ইতিহাস; পাশাপাশি উপন্যাস তো উপন্যাসই। দুয়ের উপাদানগত পার্থক্য অনেক। এ দুটি বিষয়ের মূল উপাদান সময় ও চরিত্র। একইসঙ্গে মূল ইতিহাসকে অক্ষুণ্ন রেখে এবং এর চরিত্রগুলোকে যথাযথ ভূমিকায় উপস্থাপন করা মোটেই সহজ কাজ নয়। সেই কঠিন কাজটিই সহজ করে করতে দেখা যায় মোস্তফা কামালের ট্রিলজি ‘অগ্নিকন্যা’, ‘অগ্নিপুরুষ’ ও ‘অগ্নিমানুষ’ আখ্যানের কেন্দ্রীয় চরিত্র রূপায়ণে। এই উপন্যাস ত্রয়ীতে ইতিহাস আশ্রিত চরিত্রগুলোকে প্রাণবন্ত ও জীবন্ত করার জন্য একটি জীবনভাবনা বা বার্তা প্রদান করেছেন তিনি।

বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও লড়াই কেবল পাকিস্তানিদের সঙ্গে ছিল না, তা ছিল নিজেদের ভেতরও। এ কারণে লেখককে ইতিহাসের বিশাল পটভূমিতে আবর্তিত বিভিন্ন চরিত্রের জীবনের উত্থান ও পতন ব্যক্ত করার জন্য সামাজিক-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং আবেগ-আলোড়ন তুলে ধরতে হয়েছে। কাহিনি ও চরিত্রকে মানবিক করে তোলার জন্য যা অবশ্যস্বীকার্য একটি বিষয়। উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু ব্যক্তি চরিত্রের আবরণ খুলে মহাকালের অঙ্গীভূত হয়ে উঠেছেন। স্থান ও কালের সীমা অতিক্রম করে বিশ্বজনীন ব্যঞ্জনায় এর উপসংহার উপস্থাপিত।

লেখক বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনের প্রতিটি ক্ষণ উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবন নিয়ে ঘটনা নির্মাণ করেছেন। তাঁর দেশপ্রেম, সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং তাঁর পাহাড়সমান ব্যক্তিত্ব ও উদারতাকে মহিমান্বিত করেছেন। তিনি এমন একজন বাঙালি, যাঁর সঙ্গে অন্য কারো তুলনা চলে না। একজন ক্ষণজন্মা মানুষ, এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তাঁকে তিনি হৃদয়ে এবং চেতনায় ধারণ করেছেন বলেই উপন্যাসে তাঁর চরিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

‘অগ্নিপুরুষ’ উপন্যাসটি ‘অগ্নিকন্যা’ উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব। ‘অগ্নিকন্যা’ উপন্যাস যেখানে শেষ হয়েছিল ঠিক তারপর থেকে ‘অগ্নিপুরুষ’ উপন্যাসটি শুরু হয়েছে। ‘অগ্নিকন্যা’ শেষ হয়েছিল বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ‘অগ্নিকন্যা’-এরর মূল চরিত্র মতিয়া চৌধুরী হলেও ‘অগ্নিপুরুষ’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বঙ্গবন্ধু। মূলত উত্তাল সময়ের কথা নিয়ে লেখক হাজির হয়েছেন। সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দাবি যাঁর হাত দিয়ে বের হয়েছে তাঁর কথা বললে তো বঙ্গবন্ধুই প্রধান চরিত্র দাঁড়িয়ে যান। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র যেমন বঙ্গবন্ধু এবং প্রধান সহযোগীগণ যেমন মাওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, শেখ মণি প্রমুখের অবদান উঠে এসেছে। ঠিক এদের বিপরীত চরিত্রও আছে উপন্যাসে। ইয়াহিয়া খান, আইয়ুব খান, জেনারেল মুসা খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো চরিত্রের উপস্থিতি ও ভূমিকা, তাদের ষড়যন্ত্র উপন্যাসজুড়ে ফুটে উঠেছে।

‘অগ্নিপুরুষ’ উপন্যাসের একেবারে কেন্দ্রে আছেন বঙ্গবন্ধু। মূলত বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনের সমান্তরাল চিত্র এঁকে গেছেন ঔপন্যাসিক। উপন্যাসের শুরুতে দেখা যায় ছয় দফা ঘোষণার পর করাচি থেকে দেশের মাটিতে পা রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর পাশে তাজউদ্দীন আহমদ ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে দেখে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। এদিকে ছয় দফা দেখেই কুখ্যাত আইয়ুব খান নিজের পরিণতি আঁচ করতে পারেন। আইয়ুব খান তখন নানা ধরনের কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিতে থাকেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু জনগণের চাপে জেলের বাইরে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য জোরালো আন্দোলন করতে থাকেন।

অপরদিকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবকে ফাঁসিতে ঝোলানের চেষ্টা চালিয়ে যান আইয়ুব খান। ইয়াহিয়া প্রকাশ্যে বললেন, শেখ মুজিবকে ফাঁসিতে ঝোলাতে পারলেই সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। (পৃ ২১৫) কিন্তু পূর্ব বাংলার জনতা পাকিস্তানের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র মেনে নিতে পারেনি। তারা জোরালো প্রতিবাদ করতে থাকেন। জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। জনগণের এই তীব্র প্রতিবাদের কাছে হার মানে পাকিস্তানি শাসকরা। পশ্চিম পাকিস্তান শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধু মহানায়কের বেশে জেল থেকে ফিরে আসেন। তাই তো বঙ্গবন্ধুকে অগ্নিপুরুষ বলাটাই যথার্থ।

একইভাবে ‘অগ্নিমানুষ’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বঙ্গবন্ধু। মোস্তফা কামাল রচিত তিন পর্বের উপন্যাসের শেষ পর্ব। এর আগের দুটি উপন্যাস যথাক্রমে ‘অগ্নিকন্যা’ ও ‘অগ্নিপুরুষ’। ১৯৪৭ সাল যতটা স্বাধীনতা হিসেবে পরিচিতি পায় তার চেয়ে বেশি পেয়ে থাকে দেশভাগ হিসেবে। কেননা প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ এই ১৯৪৭ দিতে পারেনি। দেশত্যাগের সময় ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক দিক থেকে অনেক ভিন্ন ও দূরের ভূখণ্ডের সঙ্গে এক করে দেয়া হয় বাংলা অঞ্চলকে। অদূরদর্শিতা এবং অবিবেচনাপ্রসূত ছিল এই ঘটনা। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক এটা বুঝতে অপারগ ছিল। অবশ্য অনেকের মতো সেই বিভীষিকাময় অবস্থা মেনে নিতে পারেননি তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান। এ জন্য দেশের জন্য তাঁর ত্যাগের মাধ্যমে তিনি মহান হয়েছেন। দূরদর্শিতার মাধ্যমে তিনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথ তৈরি করেছেন।

ছয় দফা আন্দোলনের পরবর্তী সময় অর্থাৎ ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতাগ্রহণের কাল থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর কারামুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময়টুকু ‘অগ্নিমানুষ’ উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে। কাহিনিতে গতিময়তা আনার জন্য ছোট ছোট শাখা-কাহিনি বঙ্গবন্ধুর আশপাশের বিভিন্ন চরিত্র, পাকিস্তানি খলচরিত্র- বলতে গেলে সবই বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। মোস্তফা কামাল বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্রে রেখেই উপন্যাসটি পরিকল্পনা মাফিক রচনা করেছেন। ‘অগ্নিমানুষ’ উপন্যাসে দুটি পক্ষকে সমান্তরালভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক। এর একদিকে আছেন তরুণ থেকে পরিণত হতে থাকা শেখ মুজিব আর তাঁর সহযাত্রীরা অন্যদিকে রয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক শাসকগোষ্ঠী। একপক্ষ স্বাধীনতা, স্বাধিকার আর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার চায় অন্যপক্ষ কঠোর হস্তে তা দমন করতে বদ্ধপরিকর। দুই পক্ষের এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেসব জটিল কর্মকাণ্ড উপন্যাসের মোড়কে উপস্থাপন করেছেন ঔপন্যাসিক। এদিক থেকে উপন্যাসটি ঐতিহাসিক। কিন্তু এখানে সময় ও চরিত্র দুটিই বাস্তবতার নিরিখে সৃষ্টি। ফলে কাজটি কিন্তু কঠিন। আর এই কঠিন কাজটি খুব সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৯৬৯ সালের পর যখন আইয়ুব খানের পতন হলো ক্ষমতায় এলেন ইয়াহিয়া খান তখন থেকে অগ্নিমানুষ উপন্যাসের কাঠামো অগ্রসর হওয়া শুরু করেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছয় দফা ঘিরেই পাকিস্তানের রাজনীতি আবর্তিত হয়।

নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অগ্নিমানুষ রূপে আবির্ভূত হওয়ার ঘটনাকে ইতিহাসের নিকট দায়বদ্ধ থেকে তুলে ধরেছেন লেখক। তাঁর হাত ধরে আসে স্বাধীনতা। যদিও পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পর্বে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জেলখানায় বন্দি ছিলেন তবুও তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হয় এই উপন্যাস। মূলত বঙ্গবন্ধুর একাগ্রতা ছিল; স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি অনেক বেশি স্পর্শকাতর ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের মাঝে আপন পরিবার বাবা-মা-স্ত্রী, ছোট ছোট আদরের ছেলেমেয়েদের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় ভালোবাসা উপস্থাপিত হয়েছে এই উপন্যাসে। এই উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু একজন স্বপ্নপুরুষ। একজন দেশপ্রেমিক তরুণ যাঁর চোখে স্বাধীনতার লাল সূর্য জ্বল জ্বল করছে। তিনি একজন সাধারণ মানুষ যাঁর মা-বাবার জন্য প্রাণ কাঁদে; একজন আদর্শ স্বামী যিনি তাঁর স্ত্রীর ভালোবাসা পেতে আগ্রহী, আদর্শ পিতা। কিন্তু স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে গিয়ে পরিবার-পরিজন থেকে পরস্পর বিছিন্ন থেকেছেন বহু বছর। এভাবে ইতিহাসের উপকরণকে সামাজিক জীবনের স্রোতরেখায় কাহিনিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন মোস্তফা কামাল।

 

উপন্যাসে বা আখ্যানে একটি নির্দিষ্ট সময়পর্বে উপস্থাপিত চরিত্রগুলো লেখককে নির্মাণ করতে হয়। আখ্যান বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্রগুলোরও বিকাশ ঘটা স্বাভাবিক। ফলে চরিত্রগুলো একটা স্বতন্ত্র অবয়ব নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হয়। লেখক যদি চরিত্র বা চরিত্রগুলোর স্বতন্ত্র অবয়ব দিতে না পারেন, তাহলে তিনি ব্যর্থ। আখ্যান বা উপাখ্যানে যে চরিত্রগুলো লেখক ভাষার তুলিতে আঁকতে চান, সেই মানুষগুলো সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা, গভীর উপলব্ধি ও কল্পনাশক্তি না থাকলে, তাদের অবয়ব দেয়া সম্ভব হয় না। ত্রয়ী উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু চরিত্র রূপায়ণের ক্ষেত্রে এর সত্যতা যাচাই করা যেতে পারে।

‘অগ্নিকন্যা’, ‘অগ্নিপুরুষ’, ‘অগ্নিমানুষ’ ট্রিলজিতে মোস্তফা কামালের প্রধান চরিত্র শেখ মুজিবুর রহমান। ঔপন্যাসিক ইতিহাসের সূত্র ধরে বঙ্গবন্ধু চরিত্রটিকে অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে নির্মাণ করেছেন। পরিবার ও ব্যক্তিজীবনকে তুচ্ছ করে জাতিরাষ্ট্রের জন্য জীবন বাজি রেখে লড়ে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অগ্নিপুরুষে দেখা যায় তিনি মেয়ের বিয়ের সময় ছিলেন কারাবন্দি অথচ জেলের ভেতর বসেই তার কানে ভাসে শিশুপুত্র রাসেলের আব্বা ডাক। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর চরিত্র মাধুর্য এখানেই যে তিনি জাতির কাছে দায়বদ্ধ। তিনি তো ইতিহাসের মহানায়ক। লেখক লিখেছেন, ‘১৯৪৭ সালের দেশভাগ এবং রাজনীতির উত্থান-পতন, রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় আসে ছয় দফার ঘোষণা। এক পর্যায়ে ছয় দফাকে ঘিরেই পাকিস্তানের রাজনীতি আবর্তিত হয়। নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে অগ্নিপুরুষ রূপে আবিভূর্ত হন শেখ মুজিব।’

মূলত উপন্যাসটির চরিত্রের রূপায়ণ ঘটে বঙ্গবন্ধুকে ঘিরেই। বঙ্গবন্ধুর প্রভাবে অন্যান্য চরিত্রগুলো তেমন আলো জ্বালাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর কাছে সবাই ম্লান। ঔপন্যাসিক এখানে ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন। কারণ ইতিহাস কিন্তু এমনটাই সাক্ষ্য দেয়। উপন্যাসের একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, ‘২১ এপ্রিল ভোর থেকে শেখ মুজিবের বাসার চারদিকে পুলিশ ঘিরে আছে। গেটের সামনে কয়েকজন অফিসার ওয়াকিটকিতে কথা বলছেন। ওয়াকিটকিতে যে কথা হচ্ছে তা ভাঙা ভাঙা। সে কথাগুলো আবছা ভাবে বোঝা যায়।’ ‘আর দেরি করো না। শেখ সাহেবের কাছে খবর পাঠাও। তাকে গ্রেপ্তার করো। উপরের নির্দেশ আছে। উনি পালানোর মানুষ না। তোমরা খবর পাঠালেই উনি বেরিয়ে আসবেন।’ এ কথাগুলো দ্বারা বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় ব্যক্তিত্বের বিষয়টি বোঝা যায়। তিনি মুক্তিকামী জনতার কণ্ঠস্বর। জনতা স্লোগান দেয়। অগ্নিপুরুষ শেখ মুজিব। স্লোগানের এই বিন্দুতেই ঔপন্যাসিকের পক্ষপাত। তাই তো তিনি নাম দিয়েছেন ‘অগ্নিপুরুষ’।

আলোচনা শুরুতে বলেছি লেখকের কাছে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিজীবনের থেকেও রাজনৈতিক জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাঁর নেতৃত্বের সম্মোহনী শক্তি, ব্যক্তিত্ব, আবেগ উচ্ছ্বাস, দৃঢ়তা, ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতির প্রকাশ এবং সর্বোপরি ইতিহাসের মহানায়কে পরিণত হওয়ার বিষয়টি ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর ‘অগ্নিপুরুষ’ উপন্যাসে ঔপন্যাসিক বিষয়টি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনের বাইরে তাঁর পারিবারিক জীবনের নিখুঁত ছবি এঁকেছেন ঔপন্যাসিক। তিনি পিতা হিসেবে, স্বামী হিসেবে এবং পরিবারের প্রধান কর্তা হিসেবে কতটা আন্তরিক ছিলেন তা লেখকের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। তিনি বললেন- ‘রাসেলকে কোলে নিয়ে শেখ মুজিব খাটের ওপর বসলেন তাঁকে ঘিরে কামাল, জামাল ও রেহানা, হাসিনাও এক পাশে গিয়ে বসলেন। ফজিলাতুন্নেসা রেনুও তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। চা খেতে খেতে শেখ মুজিব পরিবারের সবার খোঁজ-খবর নেন।’

উপন্যাসে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের গভীরতা বোঝাতে লেখক বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তিনি তৎকালীন বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভূমিকা ও তাদের অবদান স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকেই বলিয়েছেন। ছয় দফার পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমগুলো সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল। দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাক, সংবাদ। এদের মধ্যে ইত্তেফাক ছিল একেবারে আলাদা। আইয়ুব সরকারের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ইত্তেফাকে রাজনৈতিক মঞ্চ কলাম চালু করেন। ঔপন্যাসিক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আর ইত্তেফাক হচ্ছে পরস্পরের পরিপূরক। আওয়ামী লীগ যা করে তা যদি ইত্তেফাকে না থাকে তাহলে মানুষ ঐটা পড়বে কেন? আওয়ামী লীগকে যারা ভালোবাসে তারাই এই পত্রিকা পড়ে।’ কিন্তু পাকিস্তান সরকারের তোপের মুখে ইত্তেফাক পত্রিকা বাজেয়াপ্ত হয়। বঙ্গবন্ধু এ প্রসঙ্গে বলেন- ‘হায়রে দেশ! আইয়ুব-মোনেম মিলে দেশটাকে শেষ করে দিচ্ছে। প্রতিবাদ করার কেউ নেই। যেই প্রতিবাদ করে তারই টুটি চেপে ধরে। কী এক বর্বর শাসনের মধ্যে আছি আমরা। মানিক ভাই জেলে। তাঁর পত্রিকাও বন্ধ। কে আর লিখবে এসব দুঃশাসনের বিরুদ্ধে।’

মূলত এ কথা দ্বারা তৎকালীন দুঃসহকাল তুলে ধরা হয়েছে। এ রকম বহু দুঃসহকালে ত্রাতা হয়ে বাঙালির সামনে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধু। লড়াই করেছেন পাকিস্তানি অপ-শাসনের বিরুদ্ধে। এভাবে নিরেট সত্যকে অক্ষুণ্ন রেখে সাহিত্যের পট নির্মাণ সহজ নয়। মোস্তফা কামাল কিন্তু সে কাজটিই অত্যন্ত সহজভাবে করেছেন। পাঠক অবলীলায় এ চরিত্রের সঙ্গে ভ্রমণ করতে পারেন দেশপ্রেম ও মানবিকতা বোধে। উপন্যাসের ক্ষেত্রে চরিত্র হয়ে ওঠাটা কিন্তু বেশ জরুরি। আর এই উপন্যাসের ক্ষেত্রে তা সফল। মহাকালের পাতায় মহানায়ক থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন অগ্নিপুরুষ।

‘অগ্নিপুরুষ’ উপন্যাসের মতো অগ্নিমানুষ উপন্যাসে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্রে রেখে কাহিনি অগ্রসর হয়েছে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যে দিয়ে এ উপন্যাসের কাল পরিক্রমার সমাপ্তি ঘটে। নেতার দেশপ্রেম, স্বদেশ ভাবনার অন্তরালে ঔপন্যাসিক বাঙালি জাতিসত্তার গভীর বোধকে জাগিয়ে তুলেছেন। অগ্নিমানুষ উপন্যাসে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ও তাঁর চরিত্র চিত্রণ দেখে তাঁকে আমরা গ্রিক পুরাণের প্রমিথিউসের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। প্রমিথিউস মানুষকে সৃষ্টি করে দেবতাদের আদলে। মানুষকে দেয় সোজা হয়ে দাঁড়ানোর এবং আকাশের দিকে তাকাতে পারার ক্ষমতা। মানুষকে তৈরি করে তাঁর সৃজনশীল গুণ দিয়ে। কিন্তু মানুষ সৃষ্টি করে মানুষের প্রতিই দুর্বল হয়ে পড়ে প্রমিথিউস। প্রমিথিউস যেমন মানুষকে ভালোবেসেছিলেন তেমনি বঙ্গবন্ধুও মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। প্রমিথিউস মানুষকে দিয়েছিল সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা। আকাশের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য অবলোকনের দৃষ্টি। তেমনি বঙ্গবন্ধু বাঙালির বুকে গেঁথে দিয়েছিলেন অফুরান সাহস। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সাহস। বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে বুকভরে শ্বাস নিতে হয়। প্রমিথিউস মানুষকে দিয়েছিল আগুন আর বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

‘অগ্নিমানুষ’ উপন্যাসের কাহিনিতে দেখা যায়, পাকিস্তানি শাসকদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু যে সাহসী মানুষ ছিলেন তা এই উপন্যাসে দেখা যায়। উপন্যাসটির সবথেকে প্রাণবন্ত মুহূর্তের মধ্যে অন্যতম হলো ভুট্টোকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু এবং ইয়াহিয়া খানের মধ্যে চলমান আলাপ। বঙ্গবন্ধু চরিত্রের দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতা এবং ইয়াহিয়া চরিত্রের শঠতা পরিষ্কার করে তুলে ধরেছেন ঔপন্যাসিক। ইয়াহিয়ার পক্ষ থেকে অধিবেশন ডাকার মতো একটা কৌশল অবলম্বনে এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে আন্দোলনের ডাক- এই দুই বিপরীত বিষয় নিয়ে তৈরি হয়েছে এই মুহূর্তের পরিবেশ। ইয়াহিয়া খান-ভুট্টোর দ্বন্দ্ব তৈরির কথা বললে বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন, ‘ভুট্টো সাহেবের মানা না মানার ওপর যদি আপনার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে তাহলে তো এমন হবেই। আপনি কখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আপনার দায়িত্ব ছিল যথাসময়ে অ্যাসেম্বলি কল করা। তা করেননি। হঠাৎ আমি খবর পেলাম পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী পাঠানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য কী?’

ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পেরে ওঠেননি। বঙ্গবন্ধুর দাবি ছিল নির্বাচন দিতে হবে। পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে ইয়াহিয়া একদিকে নির্বাচন দেন অপর দিকে মনে মনে ফন্দি আঁটেন। ১৯৭০ সালের অক্টোবরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ইয়াহিয়া খান তিন মাস নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন বঙ্গবন্ধুকে। ঔপন্যাসিক ইয়াহিয়া ও বঙ্গবন্ধুর মনের ভাব ব্যক্ত করতে বর্ণনা করেছেন- ‘শেখ মুজিব মনে মনে ভাবেন, আমার এখনও অনেক এলাকা যাওয়া বাকি আছে। আর তিন মাস সময় পেলে মন্দ হয় না। আর ইয়াহিয়া ভাবেন, নির্বাচনী প্রচার করতে করতে শেখ মুজিব টায়ার্ড হয়ে যাবে। টাকা-কড়িও শেষ হয়ে যাবে। সেই সুযোগে মুসলিম লীগসহ ইসলামী দলগুলোকে টাকা-পয়সা দিয়ে চাঙ্গা করবে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে দুজনই ছিলেন বেশ সচেতন। বঙ্গবন্ধুও বুঝতেন সুযোগ পেলেই ইয়াহিয়া খান নানা অপকৌশল করবে। বঙ্গবন্ধু সেভাবেই তাঁর কর্ম পরিকল্পনা করেন।’

এই উপন্যাসে আমরা লক্ষ করি নির্বাচনের তারিখ ঠিক হওয়ার পর নির্বাচনকালীন যে দীর্ঘ ঘটনাপঞ্জি লেখক তা একেবারেই ফলাফলের ঘটনা দ্বারাই তুলে ধরেছেন। ইয়াহিয়ার কাছে যতবার গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দিয়েছে ততবারই দেখা গিয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। মাত্র কয়েকটি আসনে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। মাঠের প্রকৃত খবর ইয়াহিয়াকে না দিয়ে যে খবর শুনলে তিনি খুশি হবেন সেই খবর দেয়ার চেষ্টা করেছে সরকারি সংস্থা। কিন্তু নির্বাচনকালীন কোনো ঘটনা উল্লেখ না করা হলেও ফলাফলের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের শক্তি নির্ধারিত হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু হন মহিমান্বিত।

 

আলোচ্য উপন্যাসগুলোতে ঐতিহাসিক কাহিনির পাশে কাল্পনিক অনেক ঘটনা সংযুক্ত হয়েছে। ইতিহাসের চরিত্র ও ঘটনাকে উজ্জ্বল করতে ঔপন্যাসিক মোস্তফা কামাল ‘অগ্নিকন্যা’, ‘অগ্নিপুরুষ’ ও ‘অগ্নিমানুষ’ উপন্যাসে বহু অপ্রধান চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। যাদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা প্রসঙ্গ উপন্যাসের কাহিনিকে পূর্ণতা দান করেছে। যেমন, অগ্নিপুরুষ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বঙ্গবন্ধুর পাশে অসংখ্য অপ্রধান চরিত্র আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঔজ্জ্বল্যের কারণে বাকি চরিত্রগুলো তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। কিন্তু প্রভাব বিস্তার করার মতো অসংখ্য চরিত্র ছিল। তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান, খন্দকার মোশতাক, তোফায়েল আহমেদ, শেখ মণিসহ অসংখ্য চরিত্র নির্মাণে ঔপন্যাসিকের কৃতিত্ব রয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় অন্যান্য চরিত্র অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে। মূলত বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসের অপরাপর চরিত্র আবর্তিত হয়েছে।

‘অগ্নিপুরুষ’ উপন্যাসের আখ্যানভাগ জুড়ে রয়েছে ৬৬-র ছয় দফা ও ৬৯-র গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস। পাকিস্তানের লাহোরে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিমানবন্দরে পা রেখে ফেলেছিলেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। এভাবেই অনেকটা নাটকীয়তার ঢঙে এর কাহিনি শুরু। এরপর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের শঙ্কা ও তার চ্যালা-চামুণ্ডাদের নানা অপতৎপরতা। তার সেনাপতি মুসা খান, ইয়াহিয়া খান, গভর্নর মোনায়েম খান এবং সরকারের নানা-রকম কার্যকলাপ মূলত এই উপন্যাসের মূল কাহিনির আড়ালে শাখা-কাহিনি হিসেবে গড়ে উঠেছে। কিন্তু সেই সব কাহিনির আড়ালের মানুষটিও বঙ্গবন্ধু। জেল থেকে ফিরে আসা, আসার পর একের পর এক ষড়যন্ত্র ও নানা অপকৌশলের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ঘায়েলের চেষ্টা আর আইয়ুব ও ইয়াহিয়ার অপতৎপরতা এবং বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবন কাঠামোর ভেতরে কিছু শাখা-কাহিনি গড়ে উঠেছে। মূল আখ্যানের মধ্যে দাঁড় করানো ঘটনায় সেগুলো প্রভাব বিস্তার করেছে। আইয়ুব খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথন বা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তাদের ভাবনা উপন্যাসের গতিকে বেগবান করে। মূলত উপরে উপরে আইয়ুব খান অনেক তেজদীপ্ত কথা বললেও বঙ্গবন্ধুকে তিনি ভয় পেতেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দেশপ্রেম, দেশকে পাকিস্তানের অধীন থেকে মুক্ত করার বাসনা পাকিস্তানি শাসকদের ভাবিয়ে তুলেছিল। ‘আমার মনে হয় সে অনেক বেশি দূরদর্শী নেতা’ আইয়ুব খানের এই কথাটি অনেক তাৎপর্য বহন করে। কেননা পাকিস্তান শাসকের কাছে বঙ্গবন্ধু চরিত্রটির স্বরূপ উন্মেচিত হয়েছে।

‘অগ্নিপুরুষ’ উপন্যাসে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও তাদের তল্পিবাহক চরিত্রগুলো নেতিবাচক দৃষ্টিতে রূপায়িত। এর মাধ্যমেই মোস্তফা কামাল কাহিনিকে বাস্তবধর্মী করে তুলেছেন। যে চরিত্রকে যেভাবে তুলে ধরলে ইতিহাসের দায়বদ্ধতা রক্ষিত হবে তিনি সেভাবেই তাদের তুলে ধরেছেন। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের চরিত্রটি স্বমূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করেছে। তার উৎকণ্ঠা ভেতরে বাইরের দ্বন্দ্ব, কঠোরতা, নিষ্ঠুরতা, ভাড়ামি এবং নানা কূটকৌশল সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়া তথা খলনায়কে পরিণত হওয়ার বিষয়টিকে বিচক্ষণতার সঙ্গে রূপায়িত করেছেন। উপন্যাসে আইয়ুব খানের প্রধান সেনাপতি মুসা খান, সেনাপতি ইয়াহিয়া খান তোষামুদে চরিত্র। এভাবে ইতিহাসের চরিত্র ও ঘটনাকে উজ্জ্বল করতে বহু অপ্রধান চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটেছে। তাদের ব্যক্তিত্ব ও পারিবারিক জীবনের নানা প্রসঙ্গ উপন্যাসের কাহিনিকে পূর্ণতা দান করেছে। বিশেষ করে মতিয়া চৌধুরীকে কেন্দ্র করে তাঁর পিতা মহিউদ্দিন আহমেদ ও মাতা নূরজাহান বেগমের প্রত্যহিক জীবনের অনেক ছোট ছোট ঘটনার সন্নিবেশ ঘটেছে। চাল বিক্রেতা রহিম বক্স, মাছ বিক্রেতা, মুরগি বিক্রেতা এবং সবজি বিক্রেতা তাদের স্বরূপে চিত্রিত হয়েছে। লেখক মোনায়েম খানের স্বরূপ উন্মোচন করতে গিয়ে লিখেছেন- ‘প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের ফোন পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন মোনায়েম খান। তিনি স্যার স্যার বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলেছেন। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট সাহেব বলতে বাধ্য হলেন, এত স্যার স্যার বলার দরকার নেই।’

‘অগ্নিমানুষ’ উপন্যাসেও অগ্নিপুরুষ উপন্যাসের মতো উপ-কাহিনি গড়ে উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ককে তুলে ধরেছেন লেখক। ঔপন্যাসিক মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন অবস্থা বোঝানোর জন্য অনেক ছোট ছোট ঘটনার আশ্রয় নিয়েছেন। তৎকালীন তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ. এইচ. এম কামরুজ্জামান, খন্দকার মোশতাক আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মাওলানা ভাসানীসহ অনেকের ভূমিকা স্বল্পায়তনে উঠে এসেছে। উপন্যাসের অনেক জায়গায় বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কথাও ফুটে উঠেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও তাদের প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রসঙ্গটি অগ্নিকন্যা ও অগ্নিপুরুষ উপন্যাসেও সমানভাবে এসেছে। সংবাদ, ইত্তেফাক পত্রিকার ওপর পাকিস্তানি সরকারের নানা নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ নির্লিপ্ত থাকেননি। শহীদুল্লা কায়সার, বজলুর রহমান, সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ অনেকের লেখনি ও আলাপচারিতায় সে সময়ের নানা দিক উঠে এসেছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, চীনের নেতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যের মতো বন্ধু রাষ্ট্রের কথাটি বেশ জোরালোভাবে উঠে এসেছে। বিশেষ করে ভারতের কথা মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের প্রসঙ্গটি লেখক আলাদাভাবে উপন্যাসের কাহিনির ভেতর স্থান দিয়েছেন।

 

বাস্তবকে বাস্তবে রেখে উপন্যাসের শৈলি নির্মাণ সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে বাস্তবতা থেকে যত দূরে যাওয়া যায় ততই সৃষ্টিশীলতায় সফল হওয়া যায়। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত উপন্যাসে দেখা যায় বাস্তবতাকে ক্ষুণ্ন না করে তাকে আপন সৃষ্টিকর্ম করে তুলেছেন ঔপন্যাসিক মোস্তফা কামাল। এই বাস্তবতা ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা। অন্যদিকে ভাষার ক্ষেত্রে ঔপন্যাসিক মোস্তফা কামাল যথেষ্ট মনোযোগী। কাব্যিক, গম্ভীর, সাবলীল গদ্যশৈলির অনুসরণ রয়েছে ট্রিলজিতে। ভাষার মধ্য দিয়েই আখ্যান বিশেষ দেশকাল পরিপ্রেক্ষিত ছাড়িয়ে কল্পনার নীলাকাশে পক্ষ বিস্তার করেছে। অগ্নিকন্যা, অগ্নিপুরুষ ও অগ্নিমানুষ উপন্যাসত্রয়ীর ভাষা সহজ, গতিশীল এবং জটিলতা বিবর্জিত। সংলাপগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে পড়লে মনে হবে ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোই কথা বলছে। কোনো চরিত্রকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। কোনো অতিরঞ্জিত তথ্যও নেই। কাহিনি পড়তে পড়তে পাঠকরা ইতিহাস জানবেন। কাহিনিই পাঠককে ভেতরে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ ইতিহাসের শুষ্ক ভাষাকে তিনি সহজ ও সাবলীল গদ্যে তুলে ধরেছেন। ইতিহাসকে তিনি জীবন দান করেছেন; ইতিহাসের ঘটনা বর্ণনা এবং ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর কথোপকথনের ক্ষেত্রে তাঁকে কল্পনাশক্তির আশ্রয় নিতে হয়েছে। তবে ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পৃক্ত না হলে রাজনৈতিক ইতিহাসের ঘটনাগুলো লেখা যায় না। আর সেই ঘটনাবহুল সময় ছিল নানা বৈচিত্র্যে ভরপুর। কল্পনাশক্তির মাধ্যমে সেই সময়কে জীবন্ত করে তুলতে হয় লেখককে।

মূলত নানা বর্ণনায় সমকালীন যুগচিত্রের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ট্রিলজিতে। এখানে মোস্তফা কামালের গতিময় ও আবেগপূর্ণ বাক্য, বিদগ্ধ শব্দ গাঁথুনি এবং প্রাসঙ্গিক প্রবাদ-প্রবচন ও লোকসংগীতের ব্যবহার উপন্যাসের ভাষাশৈলিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। মোটকথা ইতিহাসের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপন্যাসের অগ্নিপুরুষ রূপে চিত্রিত হয়েছেন। অগ্নিপুরুষের মতো অগ্নিমানুষ উপন্যাসের ভাষা সহজ-সরল ও গতিময়। লেখক যেহেতু ইতিহাসের আদলে উপন্যাসটি রচনা করেছেন তাই এর পাঠক আপামর বাঙালি। তাই সরল বর্ণনায় পাঠকের কাছে ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করেছেন। মোস্তফা কামাল বঙ্গবন্ধুর মুখ দিয়ে অনেক জায়গায়ই ছোট ছোট বাক্য ফুটিয়ে তুলেছেন যা অনেকটা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের উপন্যাসের সংলাপের মতো। যেমন নির্বাচন নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের মধ্যে কথোপকথন, ‘বঙ্গবন্ধু আপনি যখন বলছেন ডিসেম্বরে করবেন, আমার আপত্তি নেই। তবে এর পর আর পেছাবেন না। ইয়াহিয়া : না না! পেছানোর প্রশ্নই আসে না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।’ মোট কথা ‘অগ্নিকন্যা’, ‘অগ্নিপুরুষ’ ও ‘অগ্নিমানুষ’ উপন্যাস তিনটির মাধ্যমে ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি স্বমহিমায় বিন্যস্ত করেছেন।

 

মূলত কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল ‘অগ্নিকন্যা’, ‘অগ্নিপুরুষ’ ও ‘অগ্নিমানুষ’ উপন্যাসত্রয়ীতে বঙ্গবন্ধুকে জীবন্ত করে তুলেছেন। উপন্যাসগুলোতে ঐতিহাসিক অংশের প্রাধান্য থাকায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিক্ষুব্ধ সময়ের মধ্যে পড়ে সৃজিত চরিত্রগুলো পরস্পরের কাছে এসেছে, সেখানে তাদের মানসিক সংঘর্ষ ও পরিবর্তনের চিত্র উদ্ঘাটিত হয়েছে। ইতিহাস আখ্যানের পারিবারিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে বিজড়িত। অর্থাৎ ইতিহাস বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পারিবারিক জীবনকে আলিঙ্গন করে এগিয়ে চলেছে। এ জন্য কাহিনিতে মানুষের সাধারণ মনোবৃত্তিসমূহ, প্রেম, ঈর্ষা, বন্ধুত্ব অঙ্কিত হয়েছে; ইতিহাসের জটিল-কুটিল দৃষ্টির তলায় আবর্তিত হয়েছে মানবতা। কাহিনির বৃহত্তর সংঘটনের মধ্যে কিংবা যুগান্তকারী ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব সংঘাতে নিম্নবর্গের মানুষ উপেক্ষিত হলেও সর্বক্ষেত্রে নয়। যদিও আখ্যানের চরিত্রসমূহ প্রধানত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত কখনো উচ্চপদস্থ। তাঁরা রাজনৈতিক আবর্তের বিক্ষোভ-বিকম্পিত ইতিহাসের গর্ভের ভেতর জন্মগ্রহণ করে বর্ধিত হয়েছেন। অবশ্য বঙ্গবন্ধুর বিশাল ইতিহাস ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত জীবনকে প্রায় গ্রাস করে নিয়েছে। তবে ঐতিহাসিক কোলাহলের মধ্যে নিজ নিজ কণ্ঠস্বর হারিয়ে ফেলেননি অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। আর ইতিহাসের প্রবল আকর্ষণে শাখা-কাহিনির সাধারণ জীবন তার স্বভাবমন্থর গতি হারিয়ে ঐতিহাসিক ঘটনার বেগবান প্রবাহে চলতে বাধ্য হয়েছে। সব মিলে মোস্তফা কামাল বঙ্গবন্ধুকে নিবিড়ভাবে অবলোকন করেছেন, বঙ্গবন্ধুকে আঁকতে গিয়ে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধের অনন্য ইতিহাস।

Header Ad

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মৃত তিন শিক্ষার্থী হলেন- মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪), মোস্তাকিম রহমান মাহিন (২২) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২)।

জানা গেছে, শনিবার সকালে গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বিআরটিসির ৬টি ডাবল ডেকার বাস ও ৩টি মাইক্রোবাসে করে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামীণ আঞ্চলিক সড়ক ধরে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় উত্তর পেলাইদ গ্রামের উদয়খালী বাজারে পৌঁছালে বিআরটিসির ডাবল ডেকার একটি বাস পল্লী বিদ্যুতের তারের স্পর্শে আসে। এ সময় বাসটি বিদ্যুতায়িত হলে কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক জাকিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তিনজনকেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। আহত সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা জরুরি বিভাগে যাচ্ছি।

Header Ad

কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া

ছবি: সংগৃহীত

মিল্ক বিউটিখ্যাত দক্ষিনি অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া নতুন বছরে তার জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়ে পা রাখতে যাচ্ছেন। খলচরিত্র করে আলোড়ন তোলা অভিনেতা বিজয় ভার্মার সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন চলছিল অনেক দিন ধরেই। তবে এ নিয়ে কেউই মুখ খোলেননি। এবার তাদের সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তামান্না। এমনকি ২০২৫ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়ার সম্ভাবনা আছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমের এক প্রোমোশনাল ইন্টারভিউতে তামান্না তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানান, প্রেমের সম্পর্কের জন্য জীবনে দুবার হৃদয় ভেঙেছে তার। সেই সময়টা তামান্নার জন্য খুবই ভয়াবহ ছিল।

তিনি আরও জানান, তিনি খুব কম বয়সে একজন ছেলের সঙ্গে প্রথম ভালোবাসায় জড়িয়েছিলেন এবং তার দ্বিতীয় সম্পর্কটি ছিল তার অভিনয় ক্যারিয়ারের শিখরে থাকা অবস্থায়। তবে সে সময় তিনি অনুভব করেন যে, সেই ছেলে তার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য সঠিক ব্যক্তি নয়।

তবে এত কিছুর পরও বাহুবলিখ্যাত তামান্না প্রেমিকের নাম প্রকাশ করেননি। এর আগে গুঞ্জন ছিল যে, তিনি ভারতীয় অভিনেতা বিজয় ভার্মার সঙ্গে ডেট করছেন। পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায় বহুবার ফ্রেমবন্দি হয়েছেন তারা। যদিও নিজেদের এ সম্পর্ক আড়ালে রাখতে বদ্ধপরিকর দুজনই। এখন দেখার অপেক্ষা তামান্না জীবনসঙ্গী হিসেবে কাকে বেছে নেন।

সবশেষ তামান্না ভাটিয়াকে আইটেম গার্ল হিসেবে দেখা যায় অমর কৌশিক পরিচালিত ‘স্ত্রী ২’ সিনেমায়। এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেন রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কাপুর, পঙ্ক ত্রিপাঠিসহ আরও অনেকে।

Header Ad

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকার বিনিময়ে নয় মাসের শিশু সন্তানকে দত্তক দেন শরীফা খাতুন নামে মানসিক ভারস্যমহীন এক মা। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশের সহায়তায় ওই শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফেরত দেন।
মানসিক ভারসাম্যহীন নারী শরীফা খাতুন বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট মুসলিমবাগ এলাকায় তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান।

প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত এক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় শরীফা খাতুনের। এর পর সন্তানদের নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলত তার পরিবার।

গত মঙ্গলবার নিজের ৯ মাসের কন্যা সন্তানকে পঞ্চগড় পৌরসভার দক্ষিণ তেলিপাড়া এলাকায় একটি হলুদ খেতে রেখে ভিক্ষা করতে যান শরীফা খাতুন। এ সময় শিশুটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে স্থানীয় রুনা আক্তার নামে এক নারী; একইসঙ্গে শরীফাকেও নিজ বাড়িতে নেন তিনি। রুনা নামে ওই নারীর নিজ সন্তান না থাকায় শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইলে, ৫০০ টাকার বিনিময়ে রেখে চলে যান শরীফা।

এরপর চার দিন পর অবশেষে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছে শিশুটি। বর্তমানে শিশুটিকে দেখভাল করছেন মানসিক ভারসামহীন শরীফার ১৬ বছরের বড় ছেলে নয়ন।

এ বিষয়ে শরীফার ছেলে নয়ন ইসলাম বলেন, গত চার দিন আগে মা বোনকে নিয়ে হঠাৎ পঞ্চগড়ে যান। পরে একসময় বাড়িতে একাই এসে ঘরে তালা লাগিয়ে বন্দি অবস্থায় থাকতে শুরু করেন। বোন কোথায় তা জানতে চাইলে কোনো কিছুই জানাচ্ছিলেন না।

পরে অনেক কৈশলে বোনের অবস্থান জানতে পারি। এরপর সেই বাড়িতে গিয়ে বোনকে ফেরত চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করেন। আরও জানতে পারি মা বোনকে নেবেন না বললে তারা ৫০০ টাকা মাকে খেতে দিয়ে একটা কাগজে স্বাক্ষর করে নেন। শুক্রবার সাংবাদিক ও পুলিশ এসে তদন্ত করে আমার বোনকে আনতে নির্দেশ দিলে মাকে সঙ্গে নিয়ে বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসি।

স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক আগে থেকে ওই নারীকে দেখছি। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে পরিবার চালান। তবে কয়েকদিন আগে নিজের সন্তানকে মানুষের কাছে দিয়ে প্রায় পাগল হয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

কাজলা নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, সকালে শরিফা আমার কাছে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরেছেন আর বলেছেন আপু যেভাবেই পারো আমার মেয়েকে এনে দাও।

প্রতিবেশীরা বলেন, স্বামী না থাকায় পরিবারটা চালাতে শরীফা খাতুন ভিক্ষা করতেন। এর মাঝে এমন কাণ্ড ঘটে তিনি পাগল হয়ে গেছেন। তার তিনটা সন্তান। একটা ছেলে ও দুটি মেয়ে। এদের কি হবে আমরা জানি না। তবে সরকারি সহায়তা পেলে তাদের গতি হতো।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, আগের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। খবর পাওয়ার পর পঞ্চগড় সদর থানার ওসিকে জানানো হয়। বিষয়টি পুলিশের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু সমাধান করে ভারসাম্যহীন নারীর কাছে তার বাচ্চা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যেহেতু ওই নারীর বাড়ি বোদা উপজেলায়, সেখানকার ইউএনওকে জানিয়ে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ
মাকে হত্যার পর থানায় হাজির ছেলে
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জনকে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি
উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না: রিজভী
ভিসা কবে উন্মুক্ত করবে সেটা ভারতের নিজস্ব ব্যাপার: হাসান আরিফ
জুরাইন রেলক্রসিং ছাড়লেন রিকশাচালকরা, ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু
পাঁচ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
সাফজয়ী নারী ফুটবলার আইরিনকে নওগাঁয় সংবর্ধনা
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেবে পাকিস্তান
বেনাপোলে সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার
পুলিশ-অটোরিকশা চালক সংঘর্ষ, ঢাকা-পদ্মা সেতু ট্রেন চলাচল বন্ধ
ভারতীয় সাবমেরিনের সঙ্গে মাছ ধরা নৌকার সংঘর্ষ, নিখোঁজ ২
সংসার ভাঙার দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান
ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি
আ.লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ