শীতের সময় প্রতিদিন গোসল করা কতটা জরুরি
ছবি সংগৃহিত
শীতের দিনে গোসল করা নিয়ে অনেকেই ভয়ে থাকেন, বিশেষ করে গরম পানির ব্যবস্থা না থাকলে। গোসলের মাধ্যমে ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি ও ময়লা দূর হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রতিদিন গোসল করা কি জরুরি ?
'গুসল' একটি আরবি শব্দ। নামাজ ও কুরআন পাঠের মতো ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেবার আগে মুসলমান নারী-পুরুষের বাধ্যতামূলকভাবে পুরো শরীর পবিত্র করার একটি প্রক্রিয়া। অন্যান্য ধর্মের মানুষের ধর্মীয় আচার পালনের সঙ্গেও কোনো না কোনোভাবে গোসলের সংযোগ আছে। বাংলা ভাষায় গোসলের সমার্থক শব্দ স্নান বা অবগাহন।
কখনো ভেবে দেখেছেন কী দিনের পর দিন গোসল না করলে কী হয়? চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে দৈনিক গোসল করা আসলে শরীরের জন্য তেমন ভালো নয়। অন্যরা তা নিয়ে যতই মজা করুন না কেন!
আমেরিকার চর্মরোগ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, গোসল করার অভ্যাস শৌচের জন্য তত জরুরি নয়। বরং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের গোসলের নিয়মে আছে অনেকটাই সামাজিক ছুতমার্গ। অর্থাৎ নিয়মিত স্নান করেন না মানেই অপরিচ্ছন্ন, এমন নয়। গরম পানিতে বেশিক্ষণ গোসল করলে ত্বক আর্দ্র হওয়ার বদলে শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ফলে দৈনিক গরম পানিতে গোসল করলেও ১০ মিনিটের বেশি সময় ধরে না করাই ভালো।
গোসল না করলে কিছু ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় শরীরে। এ সময় ত্বক ভালো রাখতে সেসব ব্যাকটেরিয়া খুব জরুরি। গোসল করলে সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো চলে যায়। তাই শীতকালে সপ্তাহে ২-৩ বারের বেশি গোসল না করার পরামর্শ দিচ্ছেন চর্মরোগ চিকিৎসকরা। শীতকালে বেশি গোসল করলে নখেরও ক্ষতি হতে পারে। কারণ এই সময়ে নখের অবস্থা খারাপ থাকে। বার বার গোসল করলে নখ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এখন গোসলের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া যাক-
কতবার গোসল প্রয়োজন?
প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন নেই এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা একমত হলেও সপ্তাহে ঠিক কতবার গোসলের প্রয়োজন তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। ত্বকের ধরণের ওপর ভিত্তি করে সপ্তাহে এক বা দুইদিন কিংবা বা এক/দুই/তিন দিন পরপর গোসল করা যেতে পারে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা এক বা দুই দিন পরপর, আর যাদের ত্বক শুষ্ক তারা সপ্তাহে এক বা দুই দিন গোসল করতে পারেন। তবে, যাদের ত্বকে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়, শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম করেন কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে কাজ করেন তাদের প্রতিদিনই গোসল করা প্রয়োজন। প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন না থাকলেও হাত এবং মুখ পরিষ্কার করা এবং অবশ্যই ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
প্রতিদিন গোসলের ক্ষতি কী?
আমাদের ত্বক থেকে এক ধরনের তেল নিঃসরিত হয়, যা ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখে। এ ছাড়াও, ত্বকের বাইরের স্তরে কয়েক ধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু বাস করে যারা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে ভূমিকা রাখে। গোসলের সময় ত্বকের নিঃসরিত তেল এবং এসব জীবাণু পরিষ্কার হয়ে যায়, যা ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে খসখসে হয়ে যেতে পারে। আর এ কারণে চুলকানি অনুভূত হতে পারে। এমনকি ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে সংক্রামক রোগও হতে পারে।
কীভাবে গোসল করবেন?
১.কুসুম গরম পানি দিয়ে দ্রুত গোসল শেষ করুন।
২.গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় এবং তেলযুক্ত সাবান ব্যাবহার করুন। মনে রাখবেন শরীরের সবস্থানে এবং প্রতিবার গোসলেই সাবানের প্রয়োজনীয়তা নেই। হাত, মুখ, বগল ও উরু এলাকায় সাবান ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচন করুন। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে পারেন।
৩.গোসলের সময় বেশি জোরে ত্বক ঘষবেন না। এজন্য নরম স্পঞ্জ বা কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।
৪.গোসল না করলে তোয়ালে ভিজিয়ে গা মুছে ফেলতে পারেন।
৫.গোসলের পর নিজের পছন্দ মত বা ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মনে রাখতে হবে শীতকালে আমাদের ত্বক শুষ্ক থাকে। তাই প্রতিদিন গোসল নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। বরং প্রতিদিন গোসল না করাই স্বাস্থ্যকর। অবশ্য এজন্য ধুলা-বালি এবং স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন গোসল করা যেমন স্বাস্থ্যকর নয়, তেমনি একবারে গোসল না করলে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও আছে। তাই প্রতিদিন গোসল না করলে হাত, পা এবং মুখ নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং যত্ন নিন।
তাই গোসল নিয়ে ভয় না পেয়ে আপনার ত্বকের ধরন এবং পেশার উপর ভিত্তি করে সপ্তাহে গোসলের রুটিন ঠিক করে নিন। ত্বকের ধরন জানতে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।