রাতের বেলা পরিমানে কম খাওয়ার যত উপকারিতা
ছবি সংগৃহিত
‘সকালে খাবেন রাজার মতো। দুপুরে খাবেন প্রজার মতো। আর রাতে খাবেন ভিক্ষুকের মতো’—এমন প্রবাদ নিশ্চয়ই শুনেছেন? বিশেষজ্ঞরা বলেন, শরীর ভালো রাখতে রাতে হালকা খাবার খাওয়া বেশ উপকারী। এ অভ্যাস শরীরের অনেক সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
২০১৩ সালে জার্নাল ওবেসিটির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণে খাবারের জন্য সঠিক সময় নির্বাচন বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাঁদের এ বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে লাইফস্টাইল-বিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাই জানিয়েছে রাতে হালকা খাবার খেলে কী উপকার হয়, সে কথা।
রাতে ভারী খাবার খাওয়া, পরিমাণে বেশি খাওয়া অথবা বেশি রাতে খাবার খাওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এর পরিবর্তে দিনের শুরুতে চাহিদার বেশির ভাগ ক্যালরি গ্রহণ করে রাতে হালকা খাবার এবং পরিমাণে কম খেয়ে ঘুমানো উচিত। রাতে কম খাওয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘আর্লি টাইম-রেস্ট্রিক্টেড ফিডিং’ বা ‘ইটিআরএফ’। এর অনেক বৈজ্ঞানিক উপকারিতাও রয়েছে।
ভালো হজম করে
রাতে ভারী খাবার খাওয়া হজমে গণ্ডগোল করে। হালকা খাবার সহজে হজম হয়ে যায় এবং পেটের জন্য আরামদায়ক হয়। রাতে হালকা খাবার খাওয়া এসিডিটি, পেট ফোলা ভাব, বুক জ্বালা-পোড়ার সমস্যা রোধে সাহায্য করে। রাতে হজমের সমস্যা পরবর্তী দিনের কার্যক্রমের ওপর বাজে প্রভাব ফেলে। তাই রাতে হালকা খাবার খাওয়া এবং তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
সঠিক ওজন বজায় থাকে
রাতে পরিমাণে কম খাবার খেলে দেহে ক্যালরি কম পোড়ায়, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কেননা রাতে হজমের জন্য শরীরকে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ভারী খাবার পাকস্থলীতে চাপ সৃষ্টি করে।
সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রণ করে
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং যারা ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে চায়, তাদের উচিত রাতে কম খাওয়া। কেননা রাতে হালকা খাবার রক্তে সুগার লেবেলকে নিয়ন্ত্রণে বেশ সাহায্য করে।
সার্কাডিয়ান ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করে
আমাদের দেহে প্রাকৃতিক সার্কাডিয়ান রিদম বা ছন্দ রয়েছে, যা বিপাকসহ বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। কিছু গবেষণা বলছে, এই সার্কাডিয়ান ছন্দের সঙ্গে খাবারের সময়কে মেলানো ভালো। এতে বিপাকীয় স্বাস্থ্য উন্নত হয়।
মেদ কম জমায়
শরীরে চর্বি কম জমাতে চাইলে রাতে হালকা খাবার খাওয়া ভালো। আপনি যদি ভুল খাবার ভুল সময়ে খান, তবে এটি মেদ বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেহেতু রাতে আমরা কম কাজ করি, নড়াচড়া কম করি, তাই ভারী খাবার খেলে ক্যালরি কম পোড়ে।
ঘুম ভালো হয়
গভীর রাতে ভারী খাবার খেলে ঘুমের গুণমান ব্যাহত হয়। অন্যদিকে গবেষণা বলছে, সন্ধ্যার দিকে হালকা খাবার খেয়ে ঘুমালে রাতে ভালো ঘুম হয়, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
রাতে দেরি করে খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ কার্বোহাইড্রেট বা চিনিযুক্ত খাবার খেলে এমনটি বেশি হতে পারে। রাতের খাবার সীমিত করলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ে
রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী খাবার খেলে এসিড রিফ্লাক্স, বদহজম হয়ে গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। এ জন্য সন্ধ্যার পরপরই খেয়ে নেওয়া ভালো।
শক্তি বাড়ায়
রাতে হালকা খাবার খাওয়া মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে ভালো রাখে এবং মেজাজ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাতে তাড়াতাড়ি খাওয়া এবং হালকা খাবার খাওয়া পরবর্তী দিনের জন্য শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।