সামাজিক বা পারিবারিক চাপে পড়ে বিয়ের কুফল
বিয়ে আর বিবাহিত জীবন নিয়ে একেক জনের ভাবনা একেক রকম। কেউ বিয়ে বিষয়টা ইতিবাচক হিসেবে দেখে আবার কেউ বা নেতিবাচক। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে ব্যাপারটি ব্যক্তিভেদে মানসিক, শারীরিক বা সামাজিক চাহিদা পূরণের মাধ্যম বলে মনে করে। কিছু মানুষের ধারণা আবার একদমই ব্যতিক্রম। তারা মনে করে বিয়ে একটি সমাজ স্বীকৃত পরাধীনতার শৃঙ্খলমাত্র। এটি মানুষকে তার অবাধ স্বাধীনতা হরণ করার মাধ্যমে মানসিকভাবে বন্দি করে ফেলে। বিবাহিত জীবন কেমন হবে তা নির্ভর করে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর। এত কিছুর পরও বিয়ে একটি অন্যতম অধ্যায়। তবে জীবনের এ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের শুরু করার বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিক বা সামাজিক চাপে বিয়ে করলে সংসার জীবন থেকে শান্তি দূর হয়ে যায়।
পারিবারিক চাপ
বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েদেরই পারিবারিক চাপের মুখে মা-বাবাকে খুশি করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত না হয়েই বিয়ে করতে হয়। যেটা হয়তো তাদের ব্যক্তি জীবনে সুখকর ফলাফল বয়ে আনে না।
কম বয়সী মেয়েদের ভালো বর
প্রায় পরিবারেই কম বয়সী মেয়েদের মা-বাবা বিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ তাদের ধারণা বয়স কম থাকলেই মেয়েদের জন্য ভালো আর প্রতিষ্ঠিত পাত্র পাওয়া যায়। আবার এও ভাবে যে পরে ভালো কোনো পাত্র নাও আসতে পারে। এ চিন্তা করে তারা অল্প বয়সেই মেয়েদের বেশি বয়স্ক ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে দেন। আবার ছেলে বা ছেলের পরিবারও ভাবেন যে ঘরে কম বয়সী বউ আনলে তারা বাধ্য আর ভালো বউ হবে। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই দেখা যায় বয়সে বিস্তর পার্থক্য থাকার কারণে স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের মধ্যেই মনের মিল হয় না। একটা দূরত্ব থেকেই যায়। আর এতে করে তারা সংসার জীবনে সুখী হতে পারেন না। আসলে বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স কোনো ব্যাপার না। বরং দুজন প্রাপ্তবয়স্ক দম্পতির বিবাহিত জীবনে বোঝাপড়া ভালো হয় আর তারা ব্যক্তি জীবনে সুখে থাকে।
প্রতিবেশীদের সমালোচনা
মেয়েরা যদি বিয়েটা তাড়াতাড়ি না করে পড়াশুনা আর ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দেয়, তখনও দেখা যায় আশেপাশের লোকজন,পাড়া প্রতিবেশীরা বিভিন্ন সমালোচনা করতে থাকে। বয়স হয়ে গেছে,কেন বিয়ে করছে না, বয়স্ক আর অতি শিক্ষিত মেয়েদের ভালো জামাই পাওয়া যায় না,তারা সংসারি হয় না। এসব অযৌক্তিক সমালোচনা প্রতিনিয়ত শুনতে পাওয়া যায়। আর এসব বদ্ধমূল চিন্তা মাথায় নিয়ে ছেলে বা ছেলের পরিবারও বেশি বয়সী মেয়েদের থেকে কম বয়সী মেয়েদের বউ হিসেবে পছন্দ করে।
বেশির ভাগ ছেলেরাই চায় অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে বিয়ে করতে, আর এতে করে অনেকেরই বিয়ে করতে দেরী হয়ে যায়। তখনও তাদের পাড়া-প্রতিবেশীদের বিভিন্ন প্রশ্নের আর কানাকানির মুখোমুখি হতে হয়। পাড়া প্রতিবেশী কী বলবে সে কথায় কান না দিয়ে নিজেকে যোগ্য বানিয়ে বিয়ে করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আবেগের বশবর্তী বা বাহ্যিক সৌন্দর্যে প্রলোভিত হওয়া
অনেক ছেলে-মেয়েরা আবেগের বশবর্তী হয়ে আর বাহ্যিক সৌন্দর্যে প্রলোভিত হয়ে কোনো কিছু চিন্তা না করেই হুট করে বিয়ে করে ফেলে। অথবা ভুল কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে নিজেদের ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই আবেগ তাড়িত হয়ে বিয়ে করে ফেলে। অতি আবেগের বশে এ ভুল সিদ্ধান্তে ছেলে-মেয়ে কেউই ভালো থাকে না। কাজেই আবেগ তাড়িত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না।
টাকা পয়সা ও বিলাসিতার প্রতি ঝোঁক
অনেক পরিবারেই দেখা যায় টাকা-পয়সা ভালো আছে যাদের, সেই পরিবারের পাত্র-পাত্রী পেলে অন্যান্য খোঁজ খবর না নিয়েই লোভে পড়ে বিয়ে দিয়ে ফেলে। ছেলে মেয়েরাও বিলাসী জীবনযাপনের চিন্তায় রাজি হয়ে পড়ে। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, টাকা-পয়সাই জীবনে সুখ এনে দিতে পারে না, যদি পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়া আর ভালোবাসা না থাকে। বোঝাপড়া, সম্মান আর ভালোবাসা থাকলে কম টাকায়ও সংসার সুন্দর হয়। টাকা-পয়সাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে সংসার জীবনে কোনো দিন সুখ-শান্তি আসে না।
বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা
বন্ধুরা ধনী জামাই বা বউ পেয়েছে, তাদের দামি গাড়ি-বাড়ি আছে, অনেক টাকা-পয়সা এসব তুলনা করে চললে নিজেদের জীবনে খারাপ ছাড়া ভালো কোনো ফলাফল আসবে না।
বিয়ে মানে জাঁকজমক অনুষ্ঠান
আজকাল প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন রকমের বড় বড় আয়োজনের মাধ্যমে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়। পরিচিত অমুকের বিভিন্ন রকমের আয়োজন করে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে, কাজেই আমাকেও তেমন কিছুই করতে হবে। বিয়েটা যেন এখন একটি ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়ে গেছে। লোক দেখানো এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ভালো আর সুন্দর একটা জীবনের আশায় বিয়ে করলে বাকি জীবনটা সুখ-শান্তিতে কাটানো যায়।
জৈবিক চাহিদা
প্রাপ্ত বয়স্ক হলে নারী-পুরুষের মধ্যে শারীরিক চাহিদা তৈরি হয়, যা খুবই সাধারণ ব্যাপার। বৈবাহিক সম্পর্ক সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে শারীরিক সম্পর্কের বৈধতা আনে। কিন্তু যদি শুধু শারীরিক ব্যাপারটা মাথায় রেখে বিয়ে করা হয়, তবে সেটা চরম ভুল হবে। কারণ শারীরিক মোহ দ্রুত কেটে যায় আবার অনেক সময় বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য, কোনো দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী দুজনেই শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যেতে পারে। কাজেই সম্পর্কের ভালোবাসাটাই মূখ্য। সুতরাং কেবল চাহিদা মেটানোর জন্য বিয়ে করার সিদ্ধান্ত কোনভাবেই নেওয়া উচিত নয়।
বিবাহিত কিংবা ভালোবাসা যে কোনো সম্পর্কেই ত্যাগ বা ছাড় দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অযৌক্তিক যত চিন্তা আছে সব দূরে ঠেলে নিজের জীবনটা কে সুন্দর করে সাজাতে সঠিক সময়ে বিয়ে করার সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।
এসএন