ঢাকা এবং উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার সড়ক যোগাযোগ সহজ ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এক্সপ্রেসওয়ের পলাশবাড়ী উপজেলার একটি জমি নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে পলাশবাড়ী উপজেলার একটি সরকারি জমি দুইবার বিক্রি করা হয়েছে। এর ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে।
সড়ক বিভাগ গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব পিয়াস কুমার সেন স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়ন পত্রে বলা হয় যে, অত্র দপ্তরের নথিতে সংরক্ষিত তথ্যমতে এল, এ কেস নং-১/৬৯/১৯৫৭-৫৮ এর আওতায় পলাশবাড়ী উপজেলার অন্তর্গত মৌজা: নুনিয়াগাড়ী, জে .এল নং-৬, সিএস খতিয়ান নং-১৬, সাবেক দাগ নং-৭৯ ও ৮০ (বর্তমান দাগ-৮৩১) হতে যথাক্রমে ০.২৫ একর ও ০.০৭ একর, একত্র ০.৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ মোফাজ্জল হোসাইন, পিতা-আব্দুল শেখ নামক ব্যক্তি উত্তোলন করেছেন। উক্ত জমি অধিগ্রহণের টাকা মোফাজ্জল হোসেন ফরম নং-১৩ এ, কেস নং- ১/৬৯, ১৯৫৭-৫৮ এর মাধ্যমে উত্তোলন করেছেন।

সরকার কর্তৃক উক্ত জমি অধিগ্রহণ করা হলেও মুনছুর আলী, পিতা- মো: মোফাজ্জল হোসেন অধিগ্রহণকৃত জমি কিছুদিন পরে অবৈধভাবে দখল করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। চলতি এলেংগা-হার্টিকুমরুল-রংপুর ৬ লেন রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হলে মুনছুর তার অবৈধভাবে দখল করা জমিতে নির্মিত বিল্ডিংয়ের ক্ষতিপূরণের পাওয়ার জন্য গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের এল এ শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীকে ম্যানেজ করে ইতিমধ্যে অবৈধভাবে নির্মিত বিল্ডিংয়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ২.৫ কোটির মত টাকা উত্তোলন করেন।
১৯৫৭-৫৮ সালে ৩২ শতক জমি অধিগ্রহণের পরে মুনছুরের আর জমি থাকে মাত্র ৩ শতক। অথচ ইতিমধ্যে তিনি প্রশাসনের লোকজন কে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ধারা ৮ এর ৩ (ক) নং উপ ধারা, এল এ কেস নং : ১১/২০১৯-২০, জারির নং-৫৯৪৪, তারিখ : ৩১/০৭/২০২৩ ধারা জারি করানোর ব্যবস্থা করেন।
উক্ত ৮ ধারা অনুযায়ী মুনছুর ও তার ২ ভাই মিলে মোট ৩৩.২৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করে তার মূল্য বাবদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা অর্থাৎ ১৫,৮৪,৪৯৬,৮৯.৩৬ টাকা উত্তোলনের জোড়ালো পাঁয়তারা করেছেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সিন্ডিকেট এবং কতিপয় অসাধু দালাল চক্র মুনছুর ও তার ভাইদেরকে অবৈধভাবে এই টাকা পাইয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।

সরকারের অধিগ্রহণকৃত জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত বিল্ডিং এবং অধিগ্রহণকৃত জমি পুনরায় বিক্রির সুযোগ আছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাইকোর্টের সিনিয়র একজন আইনজীবী জানান, এভাবে এক জমি কুমিরের বাচ্চার মত বারবার বিক্রি করা প্রতারণার শামিল এবং কোনোভাবেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুযোগ নাই। কেউ এভাবে টাকা উত্তোলন করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে টাকা ফেরত দিতে হবে এবং তাদের জেল জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের যেসব ব্যক্তি এই প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের চাকুরিচ্যুতসহ গুরুদণ্ড প্রদান করতে হবে।
এ ব্যাপারে ঢাকাপ্রকাশকে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জহির ইমাম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আর আমার প্রশাসনের কেউ এ কাজের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।