লাইভে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করবেন

প্রযুক্তির যুগে অনলাইন প্লাটফর্মেই চলছে নানা রকম কাজ। গণমাধ্যম তো বটেই অফিসিয়াল কাজকর্ম থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম, নানা প্রশিক্ষণ, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই চলে এসেছে অনলাইন প্লাটফর্মে। আর এসব কাজকর্মে সফলতার জন্য প্রয়োজন শ্রুতিমধুর করে কথা বলা। এ ছাড়া শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার জন্যও বিশেষ এ গুণ থাকা দরকার। প্রাঞ্জল করে কথা বলা সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি। একই সঙ্গে আচার-আচরণ, সাজ-পোশাকেও বিশেষ সতর্কতা জরুরি। চলুন জেনে নিই অনলাইন প্লাটফর্ম, গণমাধ্যম বা বিভিন্ন লাইভ কর্মসূচিতে কথা বলার সময় কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
* সহজ, সরল ভাষায় কথা বলা উচিত। যে ভাষা সব শ্রেণির মানুষ (শিশু-বৃদ্ধ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত) বুঝতে পারবে সেই ভাষায় মানুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত। সাধুভাষা বা কঠিন ও জটিল শব্দ বা বাক্য না বলাই বাঞ্ছনীয়। এতে বক্তা বা উপস্থাপকের বলতেও সুবিধা হবে।
* যে ভাষায় কথা বলেবন উচ্চারণ শুদ্ধ ও স্পষ্ট হতে হবে। উচ্চারণ যত স্পষ্ট ও শুদ্ধ হবে তা শুনতে ততই ভালো লাগবে। কেউ যদি স্পষ্ট ও শুদ্ধ উচ্চারণ করতে পারেন তাহলে অতিসাধারণ কথাও শুনতে অনেক ভালো লাগে এবং শ্রোতাপ্রিয় হয়। একই সঙ্গে সাধারণ প্লাটফর্মে কথা বলার সময় আঞ্চলিক ভাষা পরিহার করুন। কারণ এতে অন্য অঞ্চলের মানুষ বুঝতে পারবেন না এবং বিরক্ত হবেন।
* দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কোনো রকম দ্বিধা নিয়ে কিছু বললে তা শ্রোতাদের মনগ্রাহী হয় না। বক্তা বা উপস্থাপককে দ্বিধান্বিত দেখলে শ্রোতারা আস্থা হারিয়ে ফেলেন।
* হাসিমুখে কথা বলা শিখুন আর শরীরী ভাষার দিকে নজর দিন। কথা বলার সময় হাত কোথায় রাখছেন, ঘাড় কতটুকু বাঁকাচ্ছেন কিংবা ভ্রু কতটুকু ব্যবহার করছেন—সবটাই খেয়াল রাখুন। ক্যামেরায় এমনভাবে চোখ রাখুন যাতে শ্রোতার মনে হয় আপনি তার দিকেই তাকিয়ে কথা বলছেন।
* জড়তা দূর করতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরী ভাষা সংশোধন করে নিতে পারেন। অথবা পুরোনো ভিডিও দেখে সমস্যাগুরো শনাক্ত করে শোধরানোর চেষ্টা করতে পারেন।
* কথা বলার সময় মুখ আর মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয় আনার চেষ্টা করুন। কথা শুরুর আগে কী বলবেন, তা গুছিয়ে নিন, প্রয়োজনে টুকরো কাগজে লিখে নিন। যে বিষয়ে কথা বলবেন তা নিজে আগে বুঝে নিন। প্রয়োজনে আগে ভারো করে পড়ে নিতে পারেন বিষয়বস্তু। এতে বলতেও সুবিধা হবে আর আপনি আটকাবেন না। সেই সঙ্গে অভিব্যক্তি প্রকাশেও সতোস্ফূর্ততা থাকবে। কতটা সময় পাবেন তার সঙ্গে আধেয়ের পরিধি আগেই ঠিক করতে হবে। ‘আরেকটু সময় পেলে ভালো হতো’ টাইপ ধারণা রাখবেন না।
* সুন্দর করে কথা বলার শিল্প রপ্ত করতে ইউটিউব থেকে নানা ভিডিও দেখেই বাসায় অনুশীলন করতে পারেন।
* শ্রুতিমধুর কথা বলতে বই পড়ার বিকল্প নেই। ফিকশন, নন-ফিকশন, সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি, ইতিহাস সব ধরনের বই পড়তে হবে। এতে শব্দ ভাণ্ডার বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজের দক্ষতাও বাড়বে। আর যত বেশি তথ্য থাকবে আপনার কাছে, ততই বেশি প্রাঞ্জল করে কথা বলতে পারবেন। পারলে অনুষ্ঠান শুরুর আগেই অপরপ্রান্তের বক্তার সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
* লাইভ চলাকালীন নেতিবাচক মন্তব্যে চোখ-কান না দেওয়ার চেষ্টা করবেন। মানুষের কটাক্ষে মন খারাপ না করে ভুল সংশোধনে মনোযোগ দিন। স্পষ্ট করে কথা বলুন। তবে অন্যকে আঘাত দিয়ে কথা বলবেন না। সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
* দীর্ঘক্ষণ কথা বলার সময় বিরতি দিয়ে কথা বলা উচিত। এতে শ্রোতাদের বুঝতে সুবিধা হয় এবং শোনার প্রতি আগ্রহ থাকে।
* বিষয়বস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাজ-পোশাক নির্বাচন করুন। বিষয়টি উদযাপনের, শোকের, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অথবা সামাজিক কোনো বিষয়ও হতে পারে। তাই সেই অনুযায়ী সাজ-পোশাক নির্বাচন করুন।
এসএন
