ভুলে যাওয়া ঠেকাবেন কীভাবে?

গাড়ির চাবি খুঁজে পাচ্ছেন না? বাজারের তালিকা ভুলে গিয়েছেন-এই সমস্যাগুলোতে আপনি একা আক্রান্ত হন না। কোনো না কোনো সময় প্রত্যেকটি মানুষই কোনো না কোনো জরুরি বিষয় ভুলে যান। কখন, কীভাবে ভুলে যাওয়া রোগে আক্রান্ত হবেন তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। রোগটিকে চরম অবস্থায় বা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় আমরা ‘ডিমেনশিয়া’ নামে অভিহিত করি। এই ভুলে যাওয়া রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য কিছু কমকাণ্ড সাহায্য করতে পারে। আপনার স্মৃতিশক্তিকে সামান্য কিন্তু অত্যন্ত জরুরী কাজগুলোতে ধারালো করতে পারেন-
১. প্রতিদিনের জীবনে শারিরীক কর্মকাণ্ড যুক্ত করুন। শারিরীক কর্মকাণ্ড আপনার পুরো শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে বাড়িয়ে তোলে। স্মৃতিশক্তিকেও ধারালো করে। চাইলে দিনে একবার সামান্য ক্ষণের জন্য হলেও ব্যায়াম করতে পারেন।
২. যারা খুব মোটা তাদের জন্য সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট বাতাসের মধ্যে দ্রুত হাঁটা না পারলে ৭৫ মিনিট জোরে হাঁটা, দৌড়ানো খুব ভালো ব্যায়াম। পুরো সপ্তাহ ধরে এই ব্যায়ামগুলোর যেকোনো একটি করলে আপনার স্মৃতিশক্তি বেঁচে থাকবে।
৩. যারা পুরো সপ্তাহ ব্যায়ামের সময় বের করতে পারেন না, তারা প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট হাঁটুন।
৪. শারীরিক ব্যায়াম বা কাজ আপনার শরীরকেও ফিট রাখতে সাহায্য করে।
৫. মানসিক উদ্দীপনাময় কাজগুলোও স্মৃতির জন্য খুব উপকারী। তাতে মস্তিস্কের আকৃতিও ঠিক থাকে।
৬. ফলে প্রতিদিন স্মৃতিশক্তি হারানো কমে। এজন্য ক্রসওয়াড পাজল করতে পারেন। তাস খেলতে পারেন।
৭. গাড়ি চালানোর বিকল্প পথ বের করলে মস্তিস্কের কার্যকারিতা বাড়ে।
৮. যেকোনো একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে পারেন।
৯. কোনো স্থানীয় বিদ্যালয় বা সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবা দিতে পারেন।
১০. কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এই কাজগুলো মনকে ভালো রাখে। তাতে মন ঠিক থাকে, মস্তিষ্কও ভালো থাকে। শরীরেরও উপকার হয়।
১১. নিয়মিত সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকলে ও সমাজের মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে হতাশা ও চাপ কমে। এই দুই রোগেই মানুষের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়।
১২. ফলে একত্র হবার সুযোগগুলো গ্রহণ করুন।
১৩. পরিবার, আত্মীয়ের সঙ্গে দাওয়াত, ভালো কাজ ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করুন।
১৪. যাকে ভালোবাসেন তার সঙ্গে সময় কাটান-এই অবশ্যই কাজগুলো করুন যারা একাকী জীবনযাপন করেন।
১৫. সংগঠিত জীবন যাপন করুন। যারা বাড়িতে বিশৃংখল জীবন যাপন করেন এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি করেন, কাজ ফেলে রাখেন ও জটিলতা তৈরি করেন, তারা পরিকল্পনা করে ভালো জীবন যাপন করুন বাড়িতে, ঘরে।
১৬. বাসার মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। জটিলতা এগিয়ে চলুন ও জটিলতা এবং সমস্যা নিজের দিক থেকে তৈরি করবেন না।
১৭. ভালো হন, ভদ্রলোকের আচরণ করুন। একসময় অভ্যাস হয়ে যাবে।
১৮. যারা কাজে জট পাকিয়ে ফেলেন ও জটিলতা তৈরি করেন, তাদের মুক্তির উপায় হলো আজকের কাজগুলো কী, কী আছে সেগুলো একে, একে সম্পন্ন করা। যে কাজগুলো শেষ করেছেন সেগুলোর জন্য তৃপ্ত হন, নিজেকে ধন্যবাদ জানান।
১৯. নিজের কাজগুলো গুছিয়ে করা শুরু করুন। নিজের বিছানা নিজেই পরিষ্কার করুন, ঘর ঝাড়ু দিন। টেবিল গুছিয়ে রাখুন। নিজের মানিব্যাগ, মোবাইল ও ঘড়ি এক জায়গাতে রেখে ভালো জীবনের সূচনা করতে পারেন নিজের জন্যই।
২০. ক্ষোভ বা বিক্ষোভ সবার মধ্যেই আছে। ফলে এই সমস্যা ও রোগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
২১. বাড়তি কথা বলবেন না। খারাপ কথা বলবেন না।
২২. খারাপ কাজ করবেন না।
২৩. অনেকগুলো কাজ একত্রে করতে যাবেন না। একটি, একটি করে কাজ করুন।
২৪. নিজেকে ধরে রাখার জন্য দিনে একবার প্রিয় কোনো গান শুনুন, পছন্দের কোনো বই পড়–ন বা লিখুন নিজের অবসর কাটানোর জন্য।
২৫. ভালোভাবে ঘুমানোর কোনো বিকল্প নেই কোনো মানুষের জীবনে। পর্যাপ্ত ও সম্পূর্ণ ঘুম আপনার স্মৃতিগুলোকে একত্রিত করে। ফলে সেগুলোকে আপনি পরে মনে করতে পারবেন। স্মৃতি ভালো থাকবে। ঘুমের বিষয়ে সচেতন থাকুন।
২৬. প্রতিটি পূর্ণ বয়সের মানুষের সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘুমাতে হয়।
২৭. ভালো ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে প্রতিটি মানুষকেই ভালো থাকার জন্য শরীর এবং মনে। মস্তিষ্কের জন্য ভালো খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আপনার হৃদযন্ত্রের জন্যও প্রয়োজনীয়। শরীরের জন্য তো বটেই। প্রতিদিনের খাবারের পাশাপাশি ফল খান।
২৮. অতিরিক্ত সিগারেট খেলে মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে যায়।
২৯. দীর্ঘস্থায়ী জটিলতাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করুন। হতাশা, ব্যাথা বা রোগ কোনো প্রিয়জনের থাকলে তাকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে দেখুন। না হলে তিনি ভালো থাকবেন না, আপনারও রোগ হবে। সেগুলোর মধ্যে আছে উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টরেল বেড়ে যাওয়া, কানে কম শোনা এবং মোটা হয়ে যাওয়া। এসব রোগে আক্রান্ত হলে সবচেয়ে ভালো আপনি নিজেই নিজের যত্ন নিন। এই সবচেয়ে উত্তম। আপনার জীবনকে সহজ ও নিয়ন্ত্রিত করুন। তখন প্রিয় কোনো কাজে যুক্ত হলে আপনার উপকার হবে। যেমন বাগান করা।
৩০. কাউকে যদি তার স্মৃতিশক্তি হারানোর সমস্যা প্রতিদিনের কাজগুলো বা চাকরিতে সমস্যায় ফেলে, কাজ করতে না দেয়, তাহলে অন্যসব রোগের মতো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ভালো হতে।
৩১. তিনি আপনাকে ওষুধের পাশাপশি শারিরীক কাজ দেবেন ও সমস্যা সমাধানের যোগ্যতাগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করবেন।
