সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে ঢাবি কর্তৃপক্ষের আবেদন অকার্যকর ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষিকা সামিয়া রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষিকা সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিভিল পিটিশন অকার্যকর ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে তার পদাবনতির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ঢাবি কর্তৃপক্ষের সিভিল পিটিশন অকার্যকর ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ।
রবিবার (২৬ মে) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে এদিন সামিয়া রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ড. নাইম আহমেদ।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম বলেন, ২০২২ সালের ৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সামিয়া রহমানকে পদাবনতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিভিল পিটিশন দায়ের করে। কিন্তু এরই মধ্যে সামিয়া রহমান শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। এ কারণে আপিল বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন অকার্যকর ঘোষণা করেছেন। এর ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে।
এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে পদাবনতির সিন্ডিকেটের নেওয়া (প্রশাসনিক) সিদ্ধান্ত অবৈধ ও বাতিল করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে সব ধরনের বিভাগীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নির্দেশও দেন আদালত।
২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পদাবনতির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সামিয়া রহমান। ওই রিটের শুনানি নিয়ে তার পদাবনতির এই সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
এরপর ২০২২ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই রুলের শুনানিতে এ রায় দেন।
এর আগে ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাবির সিন্ডিকেট সভায় গবেষণা জালিয়াতির দায়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের পদাবনতি করে ‘সহকারী অধ্যাপক’ করা হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর সামিয়া রহমান ও অপরাধবিজ্ঞান (ক্রিমিনোলজি) বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের 'A new dimension of Colonialism and Pop Culture : A Case Study of the Cultural Imperialism' নামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ সোশ্যাল সাইন্স রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়, যা ১৯৮২ সালে শিকাগো জার্নালে প্রকাশিত মিশেল ফুকোর 'Subject and Power' প্রবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল করা।
২০১৭ সালে এক লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ চুরির অভিযোগের কথা জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। ওই অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট তার পদাবনতির সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে সিন্ডিকেটে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই সামিয়া রহমান দাবি করে আসছেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
আদালতে ওইদিন সামিয়া রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ড. নাইম আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার আহমেদ পায়েল।