টিএসসিতে যৌন হয়রানির ৮ বছর, শেষ হয়নি বিচার
আজ থেকে আট বছর আগে ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এরপর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও থেকে আটজন যৌন হয়রানিকারীকে শনাক্ত ও তাদের ছবি পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি বিচারাধীন। বৈশাখ আসে, বৈশাখ যায়। কিন্তু শেষ হয় না বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি। মূলত সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না।
বিচার শুরুর পর ছয় বছরে মাত্র সাত জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। আরও ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ বাদ রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, চেষ্টা করছি মামলাটি শেষ করার। আশা করছি, আগামী বৈশাখের আগে মামলাটি নিষ্পত্তি হবে।
বর্তমানে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন।
এদিকে, এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র সাতজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন— মামলার বাদী এসআই আবুল কালাম আজাদ, তদন্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস, ঢাবি শিক্ষার্থী তুহিন কান্তি দাস, চা দোকানি শাহজাহান, শাহ আলম, শরবত বিক্রেতা মালেক ও মনিরুল ইসলাম। গত ১৯ মার্চ চার্জশিটভুক্ত অপর ২৭ সাক্ষীর বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। অপরদিকে আসামি কামাল বর্তমানে জামিনে আছেন। হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি।
সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করতে পারেনি। এজন্য আদালত আগামী ২৪ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি পরিচালনা করা হচ্ছে। মামলাটি নিয়ে আমরা সবাই তৎপর। আদালত থেকে সাক্ষী হাজির করতে থানায় সমন পাঠানো হয়। অনেকে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। এজন্য সমন পাঠানো হলেও তা ফেরত আসছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মামলাটি শেষ করতে। আশা করছি, আগামী পহেলা বৈশাখের আগে আগেই মামলার বিচার শেষ হবে।
এই ঘটনায় শনাক্তকৃতদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করে পুলিশ। কিন্তু তাদের নাম-ঠিকানা না পাওয়ার অজুহাতে ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে শনাক্তকৃত আসামিদের মধ্যে মো. কামাল গ্রেপ্তার হলে তাকে প্রথমে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন করা হয়।
২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। পুনঃতদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক একমাত্র আসামি কামালকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৯ জুন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার আসামি কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
আসামি কামালের আইনজীবী আনিসুর রহমান বলেন, মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না। তিনি অসুস্থ একজন রোগী, গরীব মানুষ। লালবাগের ফুটপাতে সবজির ব্যবসা করে। তিনি ডায়াবেটিস রোগী, ঘটনার দিন হাঁটাহাঁটি করার জন্য বের হয়েছিলেন। সেখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে কামাল কিছুই জানতো না। তিনি হেঁটে এসেছিলেন আর তার ছবি ওই ভিডিও ফুটেজে এসেছে।
তিনি বলেন, এরপর তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেপ্তার করে। ভিডিও ফুটেজে তার ছবি আসার কারণে তাকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না। এরপরও সে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন অথচ রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করে না। আমরাও চাই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। আসামি ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হোক।
কেএম/আরএ/