অধ্যাপক তাহের হত্যা: দুই জনের ফাঁসি বহাল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির আনা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
এ আদেশের ফলে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসির রায় বহাল থাকল। রায় কার্যকরের পূর্বে ফাঁসির আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন বলে আইনজীবীরা জানান। এ আবেদন নাকচ হলে এরপর রায় কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না। কারাকর্তৃপক্ষ রায় কার্যকরে পদক্ষেপ নেবে। মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডিতদের সাজাভোগ করতে হবে।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী ও নিখিল কুমার সাহা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিন আসামির আবেদনের উপর শুনানি শেষে আদেশের জন্য এদিন ধার্য রাখেন আদালত।
রায় ঘোষণার পর এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘ড. তাহের হত্যা ছিল ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো। এর মাধ্যমে অন্যদের কাছেও বার্তা যাবে যে, এ ধরনের জঘন্য অপরাধীদের মাফ নেই।’
হত্যার শিকার অধ্যাপক ড. এস তাহেরের কন্যা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ তার প্রতিক্রিয়ায় রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, তার পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার বিচার পেতে দীর্ঘ ১৭ বছর ধৈর্য ও সময়ের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে আমার পরিবারকে। এখন রায় কার্যকর হলেই শুধু আমাদের স্বস্তি আসবে।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবি’র কোয়ার্টারের ম্যানহোলে পাওয়া যায় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ।
৩ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাত নামা কয়েক জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দু’জনকে খালাস দেন।
দণ্ড প্রাপ্তরা হলেন-একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।
খালাসপ্রাপ্ত দু’জন হলেন-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।
২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।
শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন হাইকোর্ট।
শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন।
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আসামিদের স্বীকারোক্তি গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার এ ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধুমাত্র প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল, ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব নয়।
আমাদের এটাও বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আব্দুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন।
১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের ৬৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রিভিউয়ের উপর শুনানি শুরু হয়। এরপর শেষ হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি।
এমএমএ/