র্যাগিং বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবির) আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে অমানুষিক নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় পাঁচ ছাত্রীকে বহিষ্কারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১ মার্চ) হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেন, সম্প্রতি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় অপব্যবহার করছেন, যা তাদের রাজনৈতিক দলের ইমেজও নষ্ট করছে। এসব আদেশের পাশাপাশি হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে র্যাগিংসহ এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে ৬টি নির্দেশনা দিয়েছেন।
ছয় নির্দেশনা হলো
সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান র্যাগিং-এর নামে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এবং এ সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যকলাপ/সমাবেশ/পারফরম্যান্সে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে দেবে না।
র্যাগিংয়ের আড়ালে ঘটতে পারে এমন ঘটনাগুলোর উপর নজরদারি নিশ্চিত করার জন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিজিল্যান্স কমিটি থাকা উচিত। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আবাসিক হলসহ তাদের নিজ নিজ প্রাঙ্গনে র্যাগিং-এর ঘটনার বিরুদ্ধে রিপোর্ট না করা বা নিষ্ক্রিয়তার জন্য দায়ী হবে।
সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র্যাগিং করার পরিণতি কী হতে পারে সে বিষয়গুলো প্রকাশ করবে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সম্বলিত পোস্টার টাঙাতে হবে, যা শিক্ষার্থীদের র্যাগিং করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করবে।
নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অঙ্গীকারের আকারে একটি হলফনামা নেওয়া যেতে পারে যাতে কোনো শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ে জড়িত থাকলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।
‘র্যাগিং’ বা অন্য কোনো শব্দ যাই ব্যবহার করা হোক না কেন, যখনই, এ ধরনের ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধের উপাদান থাকবে, কর্তৃপক্ষকে প্রচলিত আইনের অধীনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তিমূলক অধ্যাদেশের অধীনে সকলের ভালোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধীদের বহিষ্কারের মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় নবীন এক ছাত্রীকে। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তারা ওই ছাত্রীকে মারধর ও নিপীড়ন করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাড়ি চলে যান ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। পরে র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা।
হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।
কেএম/এমএমএ/
