জুরাইনের ঘটনায় হাইকোর্টে নথি তলবের আদেশ চেম্বারে স্থগিত
রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে করা মামলায় দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন নিম্ন আদালত। ওই ঘটনায় করা মামলার নথি তলব করেছিলেন উচ্চ আদালত। নথি তলব করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশটি স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
রবিবার (১২ জুন) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই তথ্য জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আদালতকে তিনি বলেন, ‘সকালে চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করেছে। আগামীকাল আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে। এরপর আদালত শুনানি মুলতবি করেন।’
উল্লেখ্য গত ৯ জুন রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগের মামলায় দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় মামলার নথি তলব করে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রিমান্ড কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
রিটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী, আজহার উল্লাহ ভুঁইয়া, শাহ মঞ্জরুল হক প্রমূখ।
প্রসঙ্গত জুরাইনের ঘটনায় দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে নেওয়ায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট করেন আইনজীবী সৈয়দ ফজলে ইলাহী।
গত ৮ জুন রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় দুই আইনজীবীসহ ৫ জনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ রিমান্ড আদেশ দেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-শিক্ষানবিশ আইনজীবী সোহাবুল ইসলাম রনি ও তার শ্যালক আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাত, স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরীফ, মো. নাহিদ এবং মো. রাসেল।
মামলার একমাত্র নারী আসামি আইনজীবী ইয়াসিন জাহান ভুইয়া নিশানের জামিন আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। তবে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে রিমান্ড আপাতত স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার সময় জুরাইন রেলগেট এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) বিপ্লব ভৌমিক অভিযোগ করেন, ৭ জুন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তায় অনেক যানজট থাকা সত্ত্বেও উল্টোপথে মোটরসাইকেলে করে আসছিলেন রনি ও নিশান। এ সময় সার্জেন্ট মো. আলী তাদের গতিরোধ করে কাগজপত্র চাইলে তার ওপর চড়াও হন মোটরসাইকেল আরোহীরা। এ সময় তারা আশপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করে পুলিশের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। পরে নিশান তার ছোটভাই ইয়াসিনকে ফোন করে লোকজনসহ আসতে বলেন।
এদিকে খবর পেয়ে ইয়াসিন সাড়ে ৩শ থেকে সাড়ে ৪শ জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে সার্জেন্ট মোহাম্মদ আলীর ওপর এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে রক্তাক্ত ও জখম করে। পাশাপাশি হামলাকারীরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর শুরু করে।
ঘটনাস্থলে আসা কদমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উৎপল দত্ত অপু মারধরের শিকার হন। বর্তমানে সার্জেন্ট মো. আলী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল চিকিৎসাধীন। আর এসআই উৎপল দত্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ওই ঘটনায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. আলী হোসেন বাদী হয়ে সাড়ে ৪শ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে ঘটনার সূত্রপাতের পরপরই জুরাইন রেলগেট পুলিশ বক্সের ভেতরে ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করে সোহাগ-উল ইসলাম রনি বলেন, ঘুষ নেওয়ার সময় তিনি উপস্থিত হলে পুলিশ সদস্যরা তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। পুলিশ বক্সে এনে মারধর করে। পরে উত্তেজিত জনতা পুলিশ বক্সে হামলা করে ও পুলিশ সদস্যদের মারধর করে।
এমএ/এমএমএ/