কাজী নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণার গেজেট চেয়ে আইনি নোটিশ

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের জন্য একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী মঙ্গলবার (৩১ মে) এই নোটিশ পাঠান। সংস্কৃতিসচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কথা বলা হয়েছে নোটিশে।
নোটিশ পাঠানো আইনজীবীরা হলেন- মো. আসাদ উদ্দিন, মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, মো. জোবায়দুর রহমান, আল রেজা মো. আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান, মো. রেজাউল করিম এবং মো. আলাউদ্দিন।
নোটিশে বলা হয়েছে, কাজী নজরুল ইসলাম মৌখিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত হলেও লিখিতভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। বলা হয়ে থাকে, ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সর্বভারতীয় বাঙালিদের পক্ষ থেকে কবিকে জাতীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কাজী নজরুলকে 'জাতীয় কবি' হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে মুখে মুখে তিনি জাতীয় কবি হয়ে আছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে তাকে জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা করে কোনো প্রজ্ঞাপন বা গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কোনো মৌখিক বিষয় নয়।
আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন আরও বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে বাংলাদেশে আনা হয়। বসবাসের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ধানমন্ডিতে তাকে একটি বাড়ি দেওয়া হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে ডি-লিট উপাধীতে ভূষিত করা হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে সরকারি আদেশ জারি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে 'একুশে পদক' দেওয়া হয়। সবকিছুরই ছবি, তথ্যসহ লিখিত দলিল আছে। কিন্তু নির্মম সত্য এটিই যে 'জাতীয় কবি' হিসেবে সরকারি ঘোষণার কোনো লিখিত দলিল বা প্রমাণ নেই।
বাংলাদেশের দু'টি আইনে জাতীয় কবি হিসেবে নজরুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি আয়োজনে তাকে জাতীয় কবি হিসেবে উল্লেখও করা হয়। কিন্তু সবই পরোক্ষ স্বীকৃতি। এমন স্বীকৃতি কালের পরিবর্তনে মুছে যেতে পারে। আগামীর প্রজন্ম একদিন হয়ত না-ও জানতে পারে যে, আমাদের জাতীয় কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি আমাদের ইতিহাসের অংশ। ইতিহাস ও জাতীয় স্বীকৃতি কখনো অলিখিত থাকতে পারে না। অলিখিত ইতিহাস ও তথ্য সময়ের বিবর্তনে বিলীন হয়ে যায়। এজন্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণে রাষ্ট্রকে বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিতে হয়। এ ছাড়া নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণার দাবিতে কবি পরিবারের পক্ষ হতে বারবার দাবি তোলা হয়েছে। নজরুল গবেষক এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেও অনেক দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু অদ্যবধি এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই দেশের সচেতন নাগরিক এবং উচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে এ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এমএ/আরএ/
