কিশোর-কিশোরীদের প্রতি বাবা-মাকে যত্নবান হতে হবে: পুলিশ

অপহরণ করা হয়েছে তার ছেলেকে। দাবি করা হয় সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ। নইলে মিলবে ছেলের মরদেহ। কিছুক্ষণ পর পর আসতে থাকে এমন ক্ষুদেবার্তা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত মা-বাবা ছুটে যান পুলিশের কাছে। উদ্ধার হয় কিশোর। তবে ধরা পড়েনি অপহরণকারী। কারণ এ অপরহরণ নাটকের রচয়িতা কিশোর নিজেই। এ ঘটনার পর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, আপনাদের সন্তানরা কী করছে কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে চলাফেরা করছে, সেটা পরিবার থেকে ঠিকমতো মনিটরিং করতে হবে। পুলিশ জানায়, এ বয়সের কিশোর-কিশোরীদের প্রতিটা বাবা-মাকে আরও যত্নবান হওয়া দরকার। অন্যথায় তারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, যদি কিশোর ও কিশোরীদের সঠিক মতো মনিটরিং করা না হয়, তাহলে ওই পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।
পুলিশের তথ্য মতে, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোর জানায়, বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ করেই অপহরণ নাটক সাজায় সে। বাসা থেকে বের হয়ে গাজীপুরে চলে যায় প্রেমিকার বাড়িতে। পরিকল্পনা ছিল তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার। এদিকে এসব বিষয়ে পুলিশ আরো বলছে, কিশোরীর দাবি অপহরণ নাটক সম্পর্কে জানতো না সে। পুলিশ বলছে, বয়:সন্ধি অতিক্রম করা কিশোর নানারকম গেইমসে আসক্ত ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মশিউর রহমান বলেন, আপাত্ত ওই কিশোর ও কিশোরীর নাম বলা যাচ্ছে না তবে গল্পটা বলা যাবে।
তিনি বলেন, অল্প বয়সে তারা ভিডিও গেমস খেলার মাধ্যমে এ ধরনের সংস্কৃতিতে মিশে যাচ্ছে। তারা অপহরণের নাটক সাজিয়ে নিজের বাবার কাছে চাঁদাবাজি করবে এবং অপহরণের মতো একটা ভয়ংকর ধারাতে মামলা রুজু হবে এটা খুব কষ্টকর। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সন্তানরা কী করছে পরিবার থেকে এটি যদি ঠিকমতো মনিটরিং করা না হয়, তাহলে সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য খারাপ সংকেত নিয়ে আসেবে। হাফিজ আক্তার বলেন, ছেলের এমন কাণ্ডে বিব্রত বাবা-মা। এ বয়সের কিশোর-কিশোরীদের প্রতি বাবা-মাকে আরও যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার জুমার নামাজের কথা বলে রাজধানীর বাড্ডার বাসা থেকে বের হয় এক কিশোর। কিছুদূর সামনেই তাদের ফার্নিচার কারখানা। কিছুক্ষণ বসে থাকে সেখানে। পরে তাকে চলে যেতে দেখা যায়। নামাজ শেষ হওয়ার পর আর বাসায় ফেরেনি সেই কিশোর। পরে হঠাৎ তার বাবার মোবাইল ফোনে একটি ক্ষুদেবার্তা আসে। বলা হয়, তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী। টাকা না পেলে হুমকি দেয়া হয় ছেলেকে মেরে ফেলার। একই রকম ক্ষুদেবার্তা আসে তার মামার মোবাইলেও। তবে সব মেসেজ আসে কিশোরের মোবাইল থেকেই। পাঠানো হয় নির্যাতনের ছবিও।
কোনো উপায় না দেখে বাবা ছুটে যান থানায়। প্রথমে সাধারণ ডায়েরি এবং পরে অপহরণ মামলা করা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশও। পরে এই ঘটনার আসল তথ্য বের হয়ে আসে। গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য মতে জানা যায়, প্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দারা শনাক্ত করতে সক্ষম হয় অপরহণকারীর অবস্থান। এরই মধ্যে ওই কিশোরের বাবা অপহণকারীকে ২০ হাজার টাকা পাঠান। বিকাশের দোকান থেকে সেই টাকা তুলতে দেখা যায় অপহণ হওয়া সেই কিশোরকে। গোয়েন্দা পুলিশ অভিযানে গিয়ে দেখতে পান অপহরণকারী আর কেউ নয় খোদ ওই কিশোর। তার পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় এক কিশোরীকেও। উন্মোচিত হয় অপহরণ নাটক।
কেএম/এএজেড
