মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের শিকার নারীরা 'ওয়ার হিরোইন': ট্রাইব্যুনাল

মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের শিকার নারীদেরকে ‘ওয়ার হিরোইন’ সম্মোধন করে তাঁদের স্যালুট জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড দেয়া রায়ে এই মনোভাব প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ট্রাইব্যুনাল এই রায় দেয়।
রায়ে আব্দুল আজিজ, আব্দুল মান্নান ও আব্দুল মতিনকে ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। পরে এজলাস থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি আদালতের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, বুলেটেও তো মানুষকে হত্যা করা হয়। কিন্তু যুদ্ধের সময় নারীদেরকে যে ধর্ষণ করা হয়েছে তা বুলেটের চেয়ে অনেক ক্ষতিকর।
রায়ে ট্রাইব্যাল বলেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ট্রমার মধ্যে তাদের সময় পার হয়েছে। সামাজিকভাবে মানুষিকভাবে শারীরিকভাবে ওই ট্রমা থেকে তারা কখনোই বের হতে পারেন না। এ মামলার ভুক্তভোগী ৫ নম্বর সাক্ষী অফিয়া বেগম প্রেগনেন্ট ছিলেন। তিনি এখনও ট্রমার মধ্যেই আছেন। তিনি কোর্টে এসে তার সাক্ষ্য দিতে পেরেছেন।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, তারা (ধর্ষণের শিকার নারীরা) যুদ্ধের হিরোইন। ‘ওয়ার হিরোইন’ হিসেবে তাদেরকে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ট্রমা থেকে তারা কখনোই বের হতে পারে না। আদালত তাদেরকে স্যালুট জানিয়েছেন। এদিন সকালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৌলভীবাজারের বড়লেখার আব্দুল আজিজ হাবলুসহ তিনজনের ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
সাজাপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন, আব্দুল মান্নান ও আব্দুল মতিন। তাদের মধ্যে আব্দুল মতিন পলাতক রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও কে এম হাফিজুল আলম।
রায়ে ২৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে সারসংক্ষেপ অংশ পাঠ করা হয়। সকাল ১০টা থেকে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। এরপর রায় পড়েন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার এবং সর্বশেষ দণ্ডসহ মূল রায় ঘোষণা করে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন এম সারোয়ার হোসেন ও আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি।
এমএ/এএজেড
