মৃত্যুদণ্ডের আইন থাকলেও লঘুদণ্ডে পার পাচ্ছে মজুদদার!

দেশে ভোজ্য তেলের সংকটের মধ্যে বুধবার (১১ মে) অভিযান চালিয়ে একদিনেই প্রায় এক লাখ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গত কয়েকদিনে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় যৎসামান্য জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছেন অসৎ মজুদদাররা।
তাদের বিরুদ্ধে ১০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মজুদের এসব ঘটনায় যা জরিমানা করা হচ্ছে, এক কথায় একে গুরুপাপে লঘুদণ্ডের উৎকৃষ্ট উদাহরণই বলা যায়।
কারণ এসব ঘটনায় ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে দণ্ড দেওয়া হলেও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(১)-এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘মজুদদারি অথবা কালোবাজারের কারবারের অপরাধে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১৪ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তাকে জরিমানাও করা যাবে।
আর গত কয়েক দিনে সয়াবিন তেল মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কোনো পণ্য গুদামজাত করার অপরাধে কারখানা, দোকান, গুদাম সাময়িক বন্ধ করার; পণ্য যথাযথভাবে বিক্রি ও সরবরাহ না করলে সর্বোচ্চ এক বছরের শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে। এ আইনে মজুদদার ও কালোবাজারি বিষয়ে কিছুই বলা নেই।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২ ধারায় মজুদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক যেকোনো সময়ে মজুদ বা মজুদ রাখার অনুমতিপ্রাপ্ত জিনিসের সর্বাধিক পরিমাণের চেয়ে বেশি কিছু মজুদ করা বা সংরক্ষণ করা। একই ধারায় কালো-বাজারে লেনদেন’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু বিক্রি বা ক্রয় করা। এ আইন সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুদের ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রযোজ্য বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ডি ধারায় বলা আছে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে যেসব কাজকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, সেসব কাজ করার চেষ্টা করা বা কাজ করার সহযোগিতা করাও অপরাধ হবে।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, যা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা তো সমস্যা সমাধানের জন্য করা হচ্ছে না। এটি শুধু ভুক্তভোগীদের দেখানোর জন্য মজুদদারির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদের অনেকেই ব্যবসায়ী বা তাদের আত্মীয়–স্বজন–ভাই–সন্তান ব্যবসায়ী। তাই তারা তো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। বরং চলমান মজুতদারির মাধ্যমে যদি দেড়শ কোটি টাকা মুনাফা হয়, আর ১০–২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়, তাতে লোক দেখানো হলো, জরিমানা বাবদ সরকারের কিছু আয় হলো, আবার তাদের ব্যবসাটাও অব্যাহত থাকল।
জনস্বার্থ বিষয়ক বহু মামলার জন্য চেনা এ আইনজীবী বলেন, যে আইনে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে, এ আইনের সর্বোচ্চ শাস্তিও তো দেওয়া হচ্ছে না। কারণ এ আইনে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া যায়। সেটি দিলেও কিছু দৃষ্টান্ত সামনে থাকত, যাতে অন্যরা সতর্ক হবে। এখন তো তা হচ্ছে না, বরং ব্যবসায়ীরা দেখছে যে, মজুতদারি করে যা মুনাফা করবে, ধরা পড়লে তার থেকে সামান্য কিছু জরিমানা বাবদ দিলেই মজুদদারি অব্যাহত রাখা যায়।
উল্লেখ্য ইদুল ফিতরের ছুটির পর কয়েক দিন আগে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে এক লাফে ৩৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় গত শনিবার। কিন্তু এক লাফে এত টাকা দাম বাড়লেও আপত্তি করার সুযোগও পায়নি ভোক্তারা। কারণ বাড়তি দামেও দোকানে মিলছিল না নিত্য প্রয়োজনীয় এ তেল। এদিকে সয়াবিন তেলের মজুদের এসব ঘটনার মধ্যে বাজারে আবার পেঁয়াজ নিয়েও সংকটের শঙ্কা করছেন অনেকে।
এমএ/এসএন
