ডেসটিনি: দণ্ডপ্রাপ্তদের ২৩০০ কোটি টাকা জরিমানা
ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুন-অর-রশিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের দায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ২৩০০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে এই প্রতিষ্ঠানের যত সম্পত্তি ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে। এ ছাড়া এ সম্পত্তি বিনিয়োগকারীদের নিকটে বণ্টনের জন্য ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মদ আলী সালাম জানিয়েছেন, কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতিকে প্রধান ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, পুলিশের ডিআইজি ও চার্টার একাউনটেন্টকে সদস্য করা হয়েছে। এ কমিটি ডেসটিনির সব সম্পত্তি সমন্বয় করে তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টন করবে।
রায়ে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের ১০ বছরের কারাদণ্ড, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড, ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, সাঈদ-উর-রহমান, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড, এক কোটি ৮০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের নয় বছরের কারাদণ্ড, ৩০ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড, ইরফান আহমেদ, ফারাহ দীবা, জমশেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়বুর রহমান ও নেপাল চন্দ্র বিশ্বাসের আট বছর করে কারাদণ্ড, ৪০ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছর কারাদণ্ড, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন সুমন ও সুমন আলী খানের নয় বছর করে কারাদণ্ড, ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছর ছয় মাস কারাদণ্ড, আবুল কালাম আজাদ, সাইফুল ইসলাম রুবেল, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলমের আট বছর করে কারাদণ্ড, ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছর ছয় মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তা ছাড়া ড. এম হায়দারুজ্জামানের ছয় বছরের কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের ছয় বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড, কাজী মো. ফজলুল করিমের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড,মোল্লা আল আমীনের আট বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড, শফিউল ইসলামের সাত বছরের কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড, জিয়াউল হক মোল্লা, খন্দকার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলমের পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড, ওমর ফারুকের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড, সুনীল বরণ কর্মকার ওরফে এসবি কর্মকারের আট বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড, ফরিদ আকতারের আট বছরের কারাদণ্ড, দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড, এস সহিদুজ্জামান চয়নের আট বছরের কারাদণ্ড, ১৫ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
অন্য আসামিদের মধ্যে আবদুর রহমান তপন ও মো. শফিকুল হকের সাত বছর করে কারাদণ্ড, এককোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড, মেজর (অব.) সাকিবুজ্জামান খান ও জেসমিন আক্তার মিলনের পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড, এসএম আহসানুল কবির, এএইচএম আতাউর রহমান রেজার আট বছর করে কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড, গোলাম কিবরিয়া মিল্টনের আট বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড, মো. আতিকুর রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেনের সাত বছর করে কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনসহ মোট আসামি ৪৬ জন। তাদের মধ্যে জামিনে রয়েছেন লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ, মিসেস জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল। কারাগারে আছেন এমডি রফিকুল আমীন ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। অন্য ৩৯ আসামি পলাতক। অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক দুটি মামলা করেছিলেন।
২০১৪ সালের ৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মোজাহার আলী সরদার। এতে ডেসটিনির গ্রাহকদের চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলাতেই আসামি হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন।
মামলাসূত্রে যানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এক হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
প্রসঙ্গত ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যানটেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে দুই হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন। এরপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো। দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এমন ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়।
এমএ/এমএমএ/