ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি
রেজাউলকে আবার রিমান্ডে চায় পুলিশ
ট্রেনের অনলাইন টিকিট কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ও সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিমকে আবার রিমান্ডে চায় পুলিশ। ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে কর্মকর্তা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, মামলাটির অধিকতর তদন্তের স্বার্থে রেজাউল করিমকে আবার রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায় আছে।
গত ২৯ এপ্রিল এই মামলায় মো. রেজাউল করিমসহ দুইজনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ওই দুই দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে এই তথ্য দেন ওসি। তিনি বলেন, ওই দুই দিন শেষ হওয়ার পর ঈদ আসলো। আমরা আবার রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেছি। এখন এটি শুনানির অপেক্ষায় আছে।
উল্লেখ্য রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামি হলেন, রেজাউল করিমের সহযোগী এমরানুল আলম সম্রাট।
গত ২৯ এপ্রিল এই দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক শাহ আলম আসামিদের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আশ্রাফ তাদের দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর একদিন আগে গত ২৭ এপ্রিল রেজাউল করিমকে (৩৮) আটক করে র্যাব-১। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে ওই দিন রাতে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে সহযোগী এমরানুল আলম সম্রাটকেও (২৮) আটক করা হয়। এ সময় তাদের স্মার্টফোন থেকে ট্রেনের বিপুল সংখ্যক ই-টিকিট জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় রেলওয়ে থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সহজ ডটকমে দায়িত্ব পাওয়া রেজাউল এর আগে সিএনএস বিডিতেও কর্মরত ছিলেন।
গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে রেলওয়ে টিকেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত রেজাউল করিম। আর এ সুবাদে প্রতি ইদে ট্রেনের ২-৩ হাজার টিকিট সরিয়ে নিতেন, যা কালোবাজারে বিক্রির মাধ্যমে প্রতি মৌসুমে আয় করতেন ১০-১২ লাখ টাকা।
কর্মকর্তা বলেন, ইদ যাত্রায় ট্রেনের টিকিটের বিপুল চাহিদা থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। অধিকাংশ মানুষই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ইদ উপলক্ষে সকালে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এই অভিযোগে র্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল কমলাপুর স্টেশন থেকে আটক সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে তার দেওয়া তথ্যে টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি নিশ্চিত হয় র্যাব। পরে সহযোগী এমরানুলকে আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তা বলেন, রেজাউল গত ছয় বছর ধরে ট্রেনের টিকেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত। সহজ ডটকমের আগে অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান সিএনএস বিডিতেও কর্মরত ছিলেন তিনি। অভিজ্ঞকর্মী হিসেবে সহজ ডটকম তাকে নিয়োগ দেয়। রেজাউল প্রতি ইদে প্রায় ২-৩ হাজার অনলাইন টিকিট অবৈধ উপায়ে সরিয়ে নিতেন। এসব টিকিট কালোবাজারে বিক্রির মাধ্যমে প্রতি মৌসুমে আয় করতেন ১০-১২ লাখ টাকা।
পরিচিতজনদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা লাভে টিকিট বিক্রি করতেন রেজাউল। এছাড়া অন্যদের কাছে নির্ধারিত দামের চেয়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বেশি দামে টিকিট বিক্রি করতেন। তার দাবি, রেলওয়ের বিভিন্ন ভিআইপির টিকিটের আবদার মেটানোর সুযোগে নির্বিঘ্নে তিনি এ কাজ করে আসছিলেন।
কর্মকর্তা বলেন, রেজাউল পরিচিতজনদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে টিকিটপ্রত্যাশীদের একটি বড় শ্রেণি গড়ে তুলেছেন। এর বাইরেও কালোবাজারে তার টিকিট বিক্রেতা রয়েছে। সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে সার্ভার থেকে টিকিট বুক করে কিনে নিতেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তার এ সংক্রান্ত বিভিন্ন যোগাযোগ চলতো বিভিন্ন অ্যাপে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিবর্তে লেনদেন করতেন নগদ অর্থে। এমএ/