সুপ্রিম কোর্ট বারের ফলাফল: প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা বিএনপির
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। আগামী ৫ মে’র মধ্যে প্রধান বিচারপতিকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনের নেতারা। এছাড়া ভোট ফ্রেশকাউন্টিং ও ফলাফল ঘোষণার বিষয়ে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে অনুসন্ধানের দাবিও করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ সময় তারা বারের সম্মেলন কক্ষের তালা ভেঙে ভোট ফ্রেশকাউন্টিং করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্রার্থী আব্দুন নূর দুলালকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণার প্রতিবাদ জানান।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএনপি নেতা এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফলাফল ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যে অনভিপ্রেত আচরণ করা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য লঙ্ঘন করে নজিরবিহীনভাবে সন্ত্রাসী এবং অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর ফলে বারের ৭৫ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে কলঙ্কিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অবিলম্বে সাংবিধানিকভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করে এ অচলাবস্থা নিরসনের দাবিও জানান এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, আব্দুন নূর দুলালের অবৈধ প্রক্রিয়ায় সেক্রেটারির রুম দখলকে প্রত্যাখ্যান করছি। দলমত নির্বিশেষ সব আইনজীবীকে এর রিরুদ্ধে স্বোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সম্মেলনে বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন বলেন, তালা ভেঙে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার বিষয়ে দেশের উচ্চ আদালত থেকে সুয়োমোটো রুল জারি করা উচিত ছিল। এছাড়া ভোট গণনার ও ফলাফল ঘোষণার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করছি। আগামী ৫ মে’র মধ্যে প্রধান বিচারপতিকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। তা না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
সম্মেলনে বিএনপি নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন একজন বিচারপতিকে দিয়ে এ ঘটনা তদন্তের দাবি জানান। এছাড়া এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব মো. ফজলুর রহমান, বারের সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া ও সদস্য সচিব গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৭ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের তৃতীয় তলায় সম্মেলন কক্ষে ফ্রেশকাউন্টিং করার পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থী আব্দুন নূর দুলালকে বিজীয় ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিবাদ জানান বিএনপিপন্থী আইনাজীবীরা।
সমিতির নির্বাচনে গত ১৫ ও ১৬ মার্চ ভোটগ্রহণ হয়। আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত আইনজীবীর নির্বাচন উপ-কমিটি ভোটগ্রহণ করে। এর একদিন পর ১৭ মার্চ ভোট গণনা করে রাতে ফলাফল ঘোষণার সময় আওয়ামীপন্থী আইনজীবী প্যানেল পক্ষের সম্পাদক প্রার্থী ভোট ফ্রেশকাউন্টিংয়ের দাবি করে লিখিত আবেদন জানালে তখন ফল ঘোষণা আটকে যায়। ওই রাতে ফলাফল ঘোষণা না করে মশিউজ্জামন সমিতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পরে গত মঙ্গলবার ল’ রিপোর্টার্স ফোরামে এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি অজি উল্লাহ জানান, গত ১২ এপ্রিল সমিতির কার্যকরী কমিটির মেয়াদের শেষ এক সভায় তাকে আহ্বায়ক করে সাত আইনজীবীর সমন্বয়ে একটি নির্বাচন উপ কমিটি করা হয়েছে।
মো. অজি উল্লাহ নেতৃত্বে বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাতে সম্পাদক পদের ভোট ফ্রেশকাউন্টিং ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
অ্যাডভোকেট মো. অজি উল্লাহ এ ফলাফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফলাফলে সভাপতি-সম্পাদকসহ ৭টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। আর দুই সহ-সম্পাদকসহ ৭টি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগের আব্দুন নূর দুলাল পেয়েছেন দুই হাজার ৮৯১ ভোট। আর বিএনপির রুহুল কুদ্দুস কাজল পেয়েছেন দুই হাজার ৮৪৬ ভোট।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সহ-সভাপতি পদে মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন, সদস্য পদে ফাতেমা বেগম, সাহাদত হোসাইন রাজিব ও সুব্রত কুমার কুন্ডুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
আর বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মাহবুবুর রহমান খান, ট্রেজারার মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সদস্য মাহদীন চৌধুরী, গোলাম আক্তার জাকির, মো. মনজুরুল আলম সুজন ও কামরুল ইসলামকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার বিকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের সম্পাদক পদের ফলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল, হাতাহাতি ও সম্মেলন কক্ষের জানালার কাঁচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পাল্টাপাল্টি অবস্থান, মিছিল-স্লোগানে উত্তপ্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এমএ/আরএ/