সুপ্রিম কোর্ট বারের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে ধাক্কাধাক্কি-ভাঙচুর
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও জানালার কাঁচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙা কাঁচে একজন আইনজীবী রক্তাক্তও হয়েছেন।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) বিকাল ৩টা থেকেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্মেলন কক্ষ ঘিরে জড়ো হতে থাকেন উভয় শিবিরের আইনজীবীরা। কারণ এই সময় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য পূর্ব নির্ধারণ করা ছিল। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আইনজীবী সমিতি ভবনের তিনতলায় সম্মেলন কক্ষের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি, পরে কিল-ঘুষির ঘটনা ঘটে। এর এক পর্যায়ে সম্মেলন কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়। ভাঙা কাঁচে অন্তত একজন আইনজীবীর রক্তে জামা ভিজলে তাকে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, প্রায় দেড় মাস আগে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এই সম্মেলন কক্ষেই নির্বাচনের ব্যালটসহ সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র রাখা আছে।
নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত উপ-কমিটির আহ্ববায়ক মো. অজি উল্লাহর নেতৃত্বে উপ-কমিটি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার জন্য সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে গেলে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে তাদের মারামারির সূত্রপাত হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেওয়া হয়, অজি উল্লাহর নেতৃত্বে উপ-কমিটি ফল ঘোষণা সংক্রান্ত অসম্পন্ন কাজ বুধবার বিকালে সম্পন্ন করবে। সে অনুসারে বুধবার অজি উল্লাহর নেতৃত্বে উপ-কমিটি সম্মেলন কক্ষে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা ভোট পুনর্গণনার জন্য ঢুকতে গেলে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শুরুতে ধাক্কাধাক্কি, তারপর হাহাহাতি থেকে কিল-ঘুষির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে কক্ষের তালা ভেঙে অজি উল্লাহরা ভেতরে ঢুকে পড়লে বিএনপি সমর্থকরা এর প্রতিবাদ করতে করতে কক্ষের কাচ ভাঙচুর করে। বাইরে থেকে বিএনপি কক্ষের বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত আইনজীবীর নির্বাচন উপ-কমিটি নির্বাচন পরিচালনা করে। পরের দিন ১৭ মার্চ ভোট গণনা করে রাতে ফল ঘোষণার সময় আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী প্যানেল পক্ষের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলাল ভোট ফ্রেশ কাউন্টিংয়ের আবেদন জানান। তবে ফল ঘোষণা না করে মশিউজ্জামান সমিতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
যার ফলে আটকে যায় ফলাফল ঘোষণা। এরমধ্যে এক মাস ১৩ দিন পর মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামে সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক সহ-সভাপতি অজি উল্লাহ জানান, গত ১২ এপ্রিল সমিতির কার্যকরি কমিটির মেয়াদের শেষ এক সভায় তাকে আহ্বায়ক করে সাত আইনজীবীর সমন্বয়ে একটি নির্বাচন উপ কমিটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি নির্বাচন পরবর্তী অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য গত ১৬ এপ্রিল থেকে কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীকে (সম্পাদক) নোটিস করি, বারের অফিসে নোটিস করি। কক্ষের চাবি হস্তান্তরের জন্য এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে ই-মেইলে পত্র প্রেরণ করি। তিনি চাবি হস্তান্তর করেননি, তারপর তার সঙ্গে আদালতে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলি।
বর্তমানে সমিতির কার্যক্রম ‘অচলাবস্থা’ বিরাজ করছে উল্লেখ করে অজি উল্লাহ বুধবার নির্বাচনের অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এদিকে নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, অজি উল্লাহ নির্বাচন পরিচালনায় উপ-কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে যে দাবি করছেন, তা অবৈধ।
যে সভায় অজি উল্লাহকে নির্বাচনের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বায়ক করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করছেন, ওই দিন গত ১২ এপ্রিল সমিতির এমন কোনো সভাও হয়নি বলে দাবি করেন কাজল। কাজল বলেন, অজি উল্লাহ নেতৃত্বে তথাকথিত নতুন নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন, ভোট কাউন্টিং বা নির্বাচনী ফলাফল বিষয়ে তাদের যে কোনো পদক্ষেপ অবৈধ। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সুমহান ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার নির্লজ্জ অপচেষ্টা। এ ধরনের অবৈধ, নীতিহীন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।
আর অজি উল্লাহ মঙ্গলবার বলেছিলেন, বারের কল্যাণ ও মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং অচলাবস্থা নিরসনের জন্য আমরা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছি। স্বচ্ছভাবে সম্পাদক পদে ভোট ফ্রেশ গণনা করে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ৫১টি বুথে সমিতির ২০২২-২৩ মেয়াদের কমিটি গঠনে ভোটগ্রহণ হয়। মোট ৮ হাজার ৬২৩ জন ভোটারের মধ্যে দুই দিনে ভোট দেন ৫ হাজার ৯৮৩ জন।
১৭ মার্চ রাতে ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, সভাপতিসহ ছয়টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল এবং সম্পাদকসহ আটটি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছে।
এই পর্যায়ে সম্পাদক পদে ক্ষমতাসীন প্যানেলের প্রার্থী ভোট ফ্রেশ কাউন্টিংয়ের আবেদন করেন। ওই অবস্থায় দুই পক্ষের হট্টগোলের মধ্যে ফল ঘোষণা না করে স্থান ত্যাগ করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির সদস্যরা।
সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সহ-সভাপতি পদে মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন এবং সম্পাদক পদে মো. আবদুন নূর (দুলাল) এবার প্রার্থী হন। কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হন মো. ইকবাল করিম, সহ-সম্পাদক পদে এ বি এম হামিদুল মিসবাহ ও মো. হারুন অর রশিদ।
সদস্য পদে এ প্যানেলের সাত প্রার্থী হলেন- ফাতেমা বেগম, হাসান তারিক, মো. মনিরুজ্জামান রানা, মুনমুন নাহার, শফিক রায়হান শাওন, শাহাদাত হোসাইন (রাজিব) ও সুব্রত কুমার কুণ্ডু।
আর বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) সভাপতি পদে প্রার্থী হন মো. বদরুদ্দোজা (বাদল)। সহ সভাপতি পদে মনির হোসেন
এমএ/আরএ/