ফেসবুকে প্রতারণা: বাংলাদেশি নারী ও ১১ আফ্রিকান রিমান্ডে
ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিক হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে আইডি খুলে প্রতারণা করার মামলায় ১১ আফ্রিকানের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসব প্রতারণা করার মামলায় এক বাংলাদেশি নারীসহ মোট ১২ জনের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার এই আদেশ দেন।
এর আগে গত বুধবার (২০ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর পল্লবী ও ভাটারা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ১১ বিদেশি নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে একটি ডলার ট্রিক মেশিন, প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত ১৭টি মোবাইলফোন, দুটি ল্যাপটপ, কেমিক্যালের বোতল ও বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টের কপি জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- হেনরি ওসিতা ওকেচুকু, চিসম ইমানুয়েল ওবাইজুলু, ওকাকে পিটার, ওবিনা সান্ডে, ওনেকা এমবা, চিছম এন্থনি ইকুয়েনজে, ওকেয়া আজুবিকে, অনুয়ারাহ ওজুয়েমেনা ডানিয়েল, অনুরুকা জিনিকা ফ্রান্সিস, লুকে, ডোমাডু চিনেডো ও তাদের বাংলাদেশি সহযোগী ভুয়া কাস্টমস অফিসার চাঁদনী আক্তার।
ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গ্রেফতাররা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বিদেশি পুরুষের আইডি খুলে নারীদের সঙ্গে ও বিদেশি মেয়েদের নামে আইডি খুলে পুরুষদের সঙ্গে চ্যাটিং করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অনেকক্ষেত্রে তার অঢেল সম্পত্তির কিছু অংশ বাংলাদেশি বন্ধুকে দেবেন বা দামি গিফট পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলেন। গিফট হিসেবে আসা হাজার হাজার পাউন্ড বা ডলার ছাড়াতে সুযোগ বুঝে ১০-১২ লাখ টাকা দাবি করেন ভুয়া কাস্টমস অফিসার চাঁদনী।
প্রতারণার আরেকটি কৌশলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা ইউরোপ-আমেরিকার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। একপর্যায়ে বাংলাদেশে গিফট পাঠিয়েছে বা টার্গেট ব্যক্তিকে ব্যবসায়িক অংশীদার করার কথা বলে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
প্রতারকচক্রটির প্রধান নাইজেরিয়ান নাগরিক হেনরি ওসিতা ওকেচুকু ও চিসম ইমানুয়েল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দুজনই মূলত বাংলাদেশি সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকা গ্রহণ ও প্রতারকচক্রের মধ্যে বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেন। অন্য বিদেশি সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারণা করে থাকেন।
চক্রটি মূলত তিনটি উপায়ে প্রতারণা করে থাকে বলে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, তারা ভুয়া ডলার বক্স উল্লেখ করে একটি মেশিন দেখায়। এই বক্সে সুইস ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্যাংকের সিলযুক্ত ডলার ব্যবহার উপযোগী করার কথা বলে প্রতারণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে সুকৌশলে তারা দু-একটি ডলার ব্যবহার উপযোগী করেছে এরকম ভেলকি দেখায়।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, চক্রের সদস্যরা অভিনব ‘ডলার ট্রিকের’ বাইরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিক হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে আইডি খুলে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। বন্ধু হিসেবে কারও সঙ্গে সখ্য তৈরি করে উপহার পাঠানোর নামে কিংবা বিনিয়োগের প্রলোভনে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। পরবর্তীসময়ে তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ডলার আছে ও তার সমপরিমাণ টাকা পাওয়া গেলে সেসব টাকা ও ডলার একই মেশিনের মধ্যে কয়েক ঘণ্টার জন্য রেখে দিলে টাকাগুলো ব্যবহার উপযোগী ডলারে রূপান্তরিত হবে বলে জানায়। এই প্রলোভনে তাদের হাতে টাকা তুলে দিলেই তা নিয়ে সটকে পড়তেন চক্রের সদস্যরা।
এমএ/এএস