সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন: সম্পাদক পদের ভোট গণনায় আবারও গড়িমসি

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে সম্পাদক পদের ভোট শনিবার (১৬ এপ্রিল) স্বচ্ছ গণনা হওয়ার কথা থাকলেও আজ তা হয়নি। নির্বাচন উপ কমিটির আহ্বায়ক মো. অজি উল্যাহ ঢাকাপ্রকাশকে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, স্বচ্ছ গণনা হওয়ার কথা ছিল আজ। তবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের নীল প্যানেলের প্রার্থী রুহুল কুদ্দুসের (কাজল) পক্ষে বিএনপিনেতারা অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সময় চেয়েছেন। পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং নির্বাচনে সভাপতি পদে বেশি ভোটে এগিয়ে থাকা আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির মিলে দিন ধার্য করবেন। অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নির্বাচনের পরবর্তী কার্যক্রম উনারা যে দিন নির্ধারণ করবেন, সেদিনই সম্পন্ন করা হবে।
প্রসঙ্গত প্রায় এক মাস আগে গত ১৫ ও ১৬ মার্চ দুই দিনব্যাপী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ মার্চ বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোট গণনা করা হয়। গণনায় অনানুষ্ঠানিক যোগফলে বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) কিছুটা এগিয়ে ছিলেন। তবে নষ্ট হওয়া কিছু ভোট গণনার সময় রুহুল কুদ্দুসের পক্ষে গণনা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
ওই সময় সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের কাছে আবেদন জানান আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলাল। এর পরিপ্রেক্ষিতে হট্টগোল শুরু হয়। এরই মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ চান। আবার কেউ কেউ আপত্তিকর মন্তব্য ও অশালীন আচরণও করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির দক্ষিণ হলে তখন অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামানসহ অন্যরা। এক পর্যায়ে ভোট গণনার স্থান থেকে বেরিয়ে যান আহ্বায়ক।
যাওয়ার আগে তিনি জানান সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে করা আবেদন দুই পক্ষের উপস্থিতিতে ১৮ মার্চ বিকাল তিনটায় নিষ্পত্তি করা হবে। তবে ১৮ মার্চ এ ওয়াই মসিউজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, ‘স্বাস্থ্যগত কারণে ১৭ মার্চ রাতে সমিতির বিদায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে আমি পদত্যাগপত্র দিয়ে দিয়েছি। এরপর প্রায় এক মাস কেটে গেলেও নির্বাচনের কোনো পদের ফলাফলই আর ঘোষণা হয়নি।
এই অবস্থায় সম্পাদক পদে ‘ফ্রেশ কাউন্টিং’ (স্বচ্ছ গণনা) চেয়ে আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গনে নিয়মিত মিছিল-সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কিছু আইনজীবী।
এর মধ্যে গত ৩০ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩তম জরুরি সভা থেকে সিদ্ধান্ত হয় যে, ৭ দিনের মধ্যে সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকগণ একত্রে বসে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করবেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ৬ জন সভাপতি ও ১১ জন সাধারণ সম্পাদক ফল ঘোষণা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে করণীয় ঠিক করতে বৈঠক করেন।
গত ৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস (কাজল) একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়, ‘সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭ এপ্রিল দুপুরে সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, এএম আমিন উদ্দিন ও সাবেক সম্পাদক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচন সাব-কমিটির আহবায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গত ১৭ মার্চ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকালে সৃষ্ট অনাকাংখিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। সেই সাথে ফলাফল ঘোষণা সংক্রান্ত বাকী কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাকে অনুরোধ জানান। এই প্রেক্ষিতে অ্যাডভোকেট এওয়াই মসিউজ্জামান শীঘ্রই ফলাফল ঘোষণার বাকি কাজ সম্পন্ন করতে সম্মত হন।’
তবে এরপর আনুষ্ঠানিক কোন ফল ঘোষণা ছাড়াই ১২ এপ্রিল রাতে ফেসবুকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত আইনজীবীরা বিভিন্ন পদে নেমপ্লেট লাগানের ছবি পোস্ট করেন। যেখানে ‘নির্বাচিত’ বলে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানানো হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ফেসবুক একাউন্টে পরেরদিন ১৩ এপ্রিল প্রতিবাদ জানান সভাপতি পদে অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে এগিয়ে থাকা মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। তিনি লিখেছেন, 'প্রতিবাদ- গতকাল ১২ এপ্রিল ২০২২ রাতে আমার অজান্তে কে বা কারা নিয়মবহির্ভূতভাবে আমার নাম ফলক সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে টানিয়ে দেয়। আমি এসকল বেআইনি কাজের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।'
এদিকে গত ১২ এপ্রিল বারের কার্যনির্বাহী কমিটি সংখ্যাগরিষ্টতার ভিত্তিতে এ ওয়াই মশিউজ্জামানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মো. অজি উল্যাহকে নির্বাচন সাব কমিটির আহ্বায়ক নিয়োগ দেয়।
এমএ/এএস
