সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন
সম্পাদক পদের ভোটের ফ্রেশ কাউন্টিং শনিবার

প্রায় একমাস আগে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়া সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের সম্পাদক পদের প্রাপ্ত ভোটের ফ্রেশ কাউন্টিং হবে শনিবার (১৬ এপ্রিল)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাপ্রকাশকে এ তথ্য জানিয়ে নির্বাচন সাব কমিটির আহ্বায়ক মো. অজি উল্যাহ বলেন, তারপর অন্যান্য পদে যারা নির্বাচিত হয়ে আছেন, তাদেরসহ পুরো নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে।
তবে আহ্বায়ক হিসেবে মো. অজি উল্যাহকে মানতে রাজি নন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল)। তিনি বলেন, আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করা এ ওয়াই মশিউজ্জামানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি, তাই তিনিই এখনও আহ্বায়ক।
শুক্রবার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার শুরুতে কথা হয় এ ওয়াই মশিউজ্জামানের সঙ্গে। ঢাকাপ্রকাশকে তিনি বলেন, আমি রিজাইন করেছি। এরপর আর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনও কিছুতে আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি যে রিজাইন করেছি, সেটি একসেপ্ট বা রিজেক্ট করেনি কমিটি। এ সংক্রান্ত কোনও কিছু এখনও আমাকে জানানো হয়নি।
এই বক্তব্য মো. রুহুল কুদ্দুসের নজরে দিলে ঢাকাপ্রকাশকে তিনি বলেন, এ ওয়াই মশিউজ্জামান স্যার বয়স্ক মানুষ। উনার পদত্যাগ বিষয়ে আমি যে ব্যাখা দিয়েছি, সেটি উনার নজরে দিয়ে আবার বক্তব্য জানতে চান প্লিজ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এ ওয়াই মশিউজ্জামানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি পদত্যাগপত্র দিয়েছি। উনারা এখনও সেটা একসেপ্ট করেননি।'
২০২২- ২৩ কার্যকরী কমিটির এই নির্বাচনে সভাপতি পদের ভোটে এগিয়ে থাকা প্রার্থী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির শুক্রবার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ২০২১- ২২ কার্যকরী কমিটি মো. অজি উল্যাহ সাহেবকে আহ্বায়ক পদে নিয়োগ দিয়েছে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলাল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ২০২১-২২ সেশনের কার্যকরী কমিটি গত ১২ এপ্রিল এ ওয়াই মশিউজ্জামান সাহেবের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মো. অজি উল্যাহ সাহেবকে আহ্বায়ক পদে নিয়োগ দিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে এই নিয়োগ দেয় কমিটি।
আবদুন নূর দুলাল তার ফেসবুক একাউন্টে একদিন আগে লিখেছেন, 'আমি আবার বলছি- পরাজয়কে হাসিমুখে বরণ করার মতো মানসিক দৃঢ়তা আমার আছে। আমি একবারও বলিনি যে ফ্রেশ কাউন্টিং হলে আমি জিতে যাব। আমি শুধু বলেছি-সত্য প্রকাশিত হবে শনিবার। ১৬ এপ্রিল। সকাল এগারোটা। সত্য প্রকাশিত হউক। জয় কিংবা পরাজয়। আমি মেনে নেব হাসিমুখে।'
তবে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) ঢাকাপ্রকাশকে বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রিকাউন্টিং বা ফ্রেশ কাউন্টিংয়ের বিধান নেই।
'বিধান না থাকলেও নাজির আছে'-ঢাকাপ্রকাশের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, রিকাউন্টিংয়ের আবেদন একসেপ্ট এবং রিজেক্ট হওয়ার দুই রকম উদাহরণ আছে। তিনি বলেন, একবার বার নির্বাচনে রিকাউন্টিংয়ের আবেদন করেছিলেন নূরুল ইসলাম সুজন (বর্তমান রেলমন্ত্রী)। তার আবেদন গ্রহণ হয়েছিল। রিকাউন্টিংয়ে তিনি এক ভোটে জিতেছিলেন। আরেকবার ড. কামাল হোসেন ও টিএইচ খান বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেবারও রিকাউন্টিংয়ের আবেদন হয়েছিল। তবে ওই আবেদন রিজেক্ট হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ও ১৬ মার্চ দুই দিনব্যাপী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ মার্চ বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোট গণনা করা হয়। গণনায় অনানুষ্ঠানিক যোগফলে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) কিছুটা এগিয়ে ছিলেন। তবে নষ্ট হওয়া কিছু ভোট গণনার সময় রুহুল কুদ্দুসের পক্ষে যায় বলে অভিযোগ ওঠে।
ওই সময় সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের কাছে আবেদন জানান আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলাল। এর পরিপ্রেক্ষিতে হট্টগোল শুরু হয়। হৈচৈয়ের মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ চান। আবার কেউ কেউ আপত্তিকর মন্তব্য করে অশালীন আচরণও করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির দক্ষিণ হলে তখন অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামানসহ অন্যরা। এক পর্যায়ে ভোট গণনার স্থান থেকে বেরিয়ে যান আহ্বায়ক।
যাওয়ার আগে তিনি জানান, সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে করা আবেদন দুই পক্ষের উপস্থিতিতে ১৮ মার্চ বিকাল ৩টায় নিষ্পত্তি করা হবে। তবে ১৮ মার্চ এ ওয়াই মসিউজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, ‘স্বাস্থ্যগত কারণে ১৭ মার্চ রাতে সমিতির বিদায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে আমি পদত্যাগপত্র দিয়ে দিয়েছি। এরপর প্রায় এক মাস কেটে গেলেও নির্বাচনের কোনো পদের ফলাফলই আর ঘোষণা হয়নি।
এই অবস্থায় সম্পাদক পদে ‘ফ্রেশ কাউন্টিং’ চেয়ে আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গনে নিয়মিত মিছিল-সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কিছু আইনজীবী।
এর মধ্যে গত ৩০ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩তম জরুরি সভা থেকে সিদ্ধান্ত হয়, ৭ দিনের মধ্যে সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকগণ একত্রে বসে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করবেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ৬ জন সভাপতি ও ১১ জন সাধারণ সম্পাদক ফল ঘোষণা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে করণীয় ঠিক করতে বৈঠক করেন।
গত ৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস (কাজল) একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়, ‘সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭ এপ্রিল দুপুরে সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, এএম আমিন উদ্দিন ও সাবেক সম্পাদক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচন সাব-কমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গত ১৭ মার্চ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকালে সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। সেই সাথে ফলাফল ঘোষণা সংক্রান্ত বাকী কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাকে অনুরোধ জানান। এরই প্রেক্ষিতে অ্যাডভোকেট এওয়াই মসিউজ্জামান শীঘ্রই ফলাফল ঘোষণার বাকি কাজ সম্পন্ন করতে সম্মত হন।’
তবে এরপর আনুষ্ঠানিক কোনও ফল ঘোষণা ছাড়াই ১২ এপ্রিল রাতে ফেসবুকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত আইনজীবীরা বিভিন্ন পদে নেমপ্লেট লাগানের ছবি পোস্ট করেন। যেখানে ‘নির্বাচিত’ বলে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানানো হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ফেসবুক একাউন্টে পরেরদিন ১৩ এপ্রিল প্রতিবাদ জানান সভাপতি পদে অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে এগিয়ে থাকা মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। তিনি লিখেছেন, 'প্রতিবাদ গতকাল ১২ এপ্রিল ২০২২ রাতে আমার অজান্তে কে বা কারা নিয়মবহির্ভূতভাবে আমার নাম ফলক সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে টানিয়ে দেয়। আমি এ সকল বেআইনি কাজের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।'
এমএ/এসআইএইচ
