বাছিরের ৮০ লাখ টাকা জরিমানা স্থগিত

আট বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন উচ্চ আদালত। তা ছাড়া তার ৮০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (১৩ এপ্রিল) এ আদেশ দেন। এ ছাড়া বিচারিক আদালতের যাবতীয় নথি তলব করেছেন আদালত।
পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার মামলায় বিচারিক আদালতে এই দণ্ড পেয়েছিলেন বাছির। এই একই মামলায় তিন বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত মিজানুর রহমানও তার সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন হাইকোর্টে।
প্রসঙ্গত, এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় ২০১৯ সালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মিজানুরকে। পরে তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক; সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান কমিশনের তৎকালীন পরিচালক এনামুল বাছির।
ওই বছর ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন মিজানুর। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপোকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন তিনি। মিজানুর রহমান এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে দাবি করেন তিনি।
প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দায়ের করেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে। অন্যদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার ডিআইজি মিজানকে এ মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ মামলায় রায় দেন। রায়ে এনামুল বাছিরকে আট বছর ও মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
রায়ে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মিজানুরকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বাছিরের দুটি দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে তাকে পাঁচ বছর দণ্ড ভোগ করতে হবে।
তবে দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় উভয়ে দোষী সাব্যস্ত হলেও একই ধরনের অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ায় এ ধারায় কাউকেই সাজা দেওয়া হয়নি।
পরে ৩ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী শুনানি করেন।
অপরদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাছিরের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
এমএ/টিটি
