পদোন্নতির জন্য শিক্ষক হয়ে শিক্ষক হত্যা জঘন্য: অ্যাটর্নি জেনারেল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদকে খুন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড.মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের এই অধ্যাপককে হত্যা করা মহিউদ্দিন তারই এক সময়কার ছাত্র।
পদোন্নতির জন্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটান মহিউদ্দিন। এই ঘটনাকে দেশের ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। রায়ের পর এমন মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আজকের রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন তিনি।
মহিউদ্দিন প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শুধুমাত্র একটা পদোন্নতি লাভের জন্য একজন মানুষকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে, কোনোভাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা ঘৃণ্য কাজ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আজকের বিচারের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলো। অন্যদের কাছে বার্তা যাবে যে এ ধরণের কাজ করলে আদালতের কাছ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ রায় প্রকাশের পর রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করতে পারবেন আসামিরা। আপিল বিভাগ আবেদনটি খারিজ করলে রাষ্ট্রপতির মার্জনা চেয়ে আবেদন করতে পারবেন তারা। রাষ্ট্রপতি সে আবেদন নাকচ করলে তাদের দণ্ড কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেয়। রায়ে খালাস চেয়ে আসামিদের আপিল এবং যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করা হয়।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুইজন হচ্ছেন, কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে অধ্যাপক ড. এস তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ এবং মেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১৬ মার্চ শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ এপ্রিল দিন রেখেছিল আপিল বিভাগ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। তাদের সঙ্গে ছিলেন, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল ও মোহাম্মদ সাইফুল আলম। আর আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান।
প্রসঙ্গত ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরের বছর ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।
বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত ৪ জনকে ফাঁসির আদেশ ও ২ জনকে বেকসুর খালাস দেয়। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত ২ আসামি হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।
২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয় হাইকোর্ট।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলেন- মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম।
এমএ/কেএফ/