সাংবাদিক মনির হত্যা: যে কারণে দণ্ডিত আসামির সাজা কমলো
বরিশালের মুলাদী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন রাঢ়ী হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ড পেয়েছিলেন রাসেল রাঢ়ী। তবে তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
রবিবার (২৭ মার্চ) হাইকোর্ট থেকে দেওয়া এই রায় নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে চলছে নানামুখী আলোচনা। অনেকেই জানতে চাইছেন, উচ্চ আদালত কী কারণে সাজা কমিয়েছে আসামির।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, আইনজীবী রিমি নাহরিন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, 'কী কারণে আসামির দণ্ড কমিয়েছেন উচ্চ আদালত, তা লিখিত পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে বোঝা যাবে। তবে হাইকোর্টে আসামির পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, এটি পূর্ব পরিকল্পিত কোনো হত্যাকাণ্ড নয়, এটি ঠাণ্ডা মাথার খুন নয়। বাড়ির একটি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক
মনিরের সঙ্গে তর্কে জড়ান আসামি। তর্কের একপর্যায়ে রাসেল মনিরের মাথায় কোপ দেন। এই যুক্তি দেখিয়ে তার দণ্ড কমানোর আবেদন করা হয় উচ্চ আদালতে।
বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত। আর রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী ছিলেন লিগ্যালএইডের প্যানেল আইনজীবী রিমি নাহরিন।
আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত জানান, ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিলের শুনানি শেষে আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে জেল আপিল আংশিক মঞ্জুর করে আসামি রাসেল রাঢ়ীকে মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও করা হয়েছে তার।
মামলার আরেক আসামি রাসেলের বাবা আলাউদ্দিন রাঢ়ী কারাগারে মারা যাওয়ায় তার নাম আপিল শুনানি থেকে বাদ যায়।
২০১৬ সালে বরিশালের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সুদীপ্ত দাস মামলাটিতে দুই আসামির ফাঁসির রায় ঘোষণা করেছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুইজন সম্পর্কে বাবা-ছেলে।
দণ্ডপ্রাপ্ত আলাউদ্দিন রাঢ়ী নিহত সাংবাদিক মনির রাঢ়ীর চাচাতো ভাই। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আলাউদ্দিনের ছেলে সোহাগ রাঢ়ীকে খালাস দিয়েছেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তরা মুলাদী পৌর এলাকার বাসিন্দা।
২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর মুলাদী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দলিল উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেনের বাড়ির চলাচলের পথ বন্ধ করতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছিল আলাউদ্দিন রাঢ়ী ও তার ছেলেরা। প্রতিবেশীরা চলাচলের পথ বন্ধ করার বিষয়টি সাংবাদিক মনির রাঢ়ীকে জানান। মনির প্রতিবেশীদের চলাচলের পথে প্রাচীর নির্মাণ না করতে আলাউদ্দিনকে অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলাউদ্দিন ও তার সন্তানরা মনিরের সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে আলাউদ্দিনের নির্দেশে রাসেল মনিরের মাথায় কোদাল দিয়ে কোপ দেন। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনার পথে মৃত্যু হয় তার।
এমএ/আরএ/