দুদকে ফিরতে শরীফের রিটের শুনানি ১০ এপ্রিল
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন চাকরি ফিরে পেতে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। ওই রিটের ওপর শুনানির জন্য আগামী ১০ এপ্রিল দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) আদেশ দেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।
এদিন শরীফের পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী মো. সালাহউদ্দিন দোলন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
গত রবিবার (১৩ মার্চ) চাকরি ফিরে পেতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন মো. শরীফ উদ্দিনের আইনজীবী।
রিটে দুদকের ৫৪(২) ধারায় তাকে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। একই সঙ্গে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। শরীফ উদ্দিনের পক্ষে রিটটি করেন মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। রিটে দুদকের সচিব ও চেয়ারম্যান, আইন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বিবাদী করা হয়।
আইনজীবী মিয়া মো. ইশতিয়াক বলেন, দুদকের ৫৪(২) ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না এবং শরীফ উদ্দিনের চাকরি কেন পুনর্বহাল হবে না এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
এর আগে চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য দুদকে রিভিউ আবেদন করেছিলেন শরীফ উদ্দিন। ২৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর তিনি এ আবেদন করেন।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক আইনের ৫৪(২) ধারায় চাকরিচ্যুত করা হয় শরীফ উদ্দিনকে। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ সই করা আদেশে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২)-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দিন (উপ-সহকারী পরিচালক) দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যক্রম, পটুয়াখালীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো।
ওই দিন থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি এবং এই বিধির ক্ষমতাবলে চাকরিচ্যুতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ১৩ মার্চ রিটটি করেন শরীফ।
এরপর এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন শরীফ উদ্দিনের সহকর্মীরা। পরে তারা ৫৪(২) ধারা বাতিলের দাবিতে দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন।
এর আগে চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালে ২০২১ সালের ১৬ জুন ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন শরীফ উদ্দিন। একই বছর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে সংলগ্ন কলাতলী বাইপাস রোড এলাকায় পিবিআই অফিস তৈরির জন্য এক একর জমি অধিগ্রহণে জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসে শরীফ উদ্দিনের তদন্তে।
কক্সবাজারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জমি অধিগ্রহণের দুর্নীতিতে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে মামলাও করেন তিনি। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে নামে দুদক। পরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার ও বেশ কয়েকটি মামলাও করেছিলেন শরীফ উদ্দিন।
রিটটি শুনানিতে আইনজীবী মো. সালাহউদ্দিন দোলন বলেন, চাকুরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা চেয়ে শরীফ দুদকে পনের দিন আগে আবেদন করেন। এর ফলাফল এখনো জানানো হয়নি। তবে কতদিনের মধ্যে পুর্নিবেচনার আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে, সে বিষয়ে নির্ধারিত কোনো সময়ও নেই। এজন্য ৩০ দিন পরে শুনানি করতে চাই। কেননা তাহলে অপরপক্ষ (দুদক) বলতে পারবে না যে, যৌক্তিক সময় দেওয়া হয়নি। এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সময় দেওয়া না দেওয়া আদালতের বিষয়। পরে আদালত বলেন, অবকাশ শেষে আদালত খোলার (৩ এপ্রিল) এক সপ্তাহ পরে আসবে। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হলো।
প্রসঙ্গত শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতি ঘিরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ অনুসন্ধানে ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে নির্দেশনা চেয়ে ১০ আইনজীবীর করা অপর রিটটি উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরসহ সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী ওই রিটটি করেছিলেন। এর ওপর ১০ মার্চ শুনানি শেষে একই বেঞ্চ আজ আদেশের জন্য দিন রেখেছিল।
পরে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হিসেবে শরীফ নিজেই রিট করেছেন। তাই জনস্বার্থে ১০ আইনজীবীর করা রিটটি আমাদের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ করে দিয়েছেন।
এমএ/আরএ/