মার্কিন সহায়তা বন্ধে সংকটে রোহিঙ্গারা, প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের ওপর
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ বেশ কিছু সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার ফলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও উন্নয়ন সহযোগীরা। বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তাদের কর্মসূচি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়। স্বাধীনতার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, গণতন্ত্র ও সুশাসন, মৌলিক শিক্ষা এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বড় প্রকল্পগুলোতে ইউএসএআইডির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায়ও যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ২৫০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা প্রদান করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ ২১০ কোটি ডলার।
তবে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচিগুলো আমেরিকান স্বার্থ ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং তা বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করছে। এ কারণে বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচির কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়ন ও প্রয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
নির্বাহী আদেশে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, সহায়তার ব্যয় এবং প্রভাবের বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন কোন প্রকল্প চালু থাকবে, কোনটি বন্ধ হবে। এরই অংশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকেও বেরিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, ডব্লিউএইচওতে যুক্তরাষ্ট্র ছিল অন্যতম বড় অর্থদাতা। দেশটির এই সিদ্ধান্তে ডব্লিউএইচও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, যার প্রভাব বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছেন। প্রতিটি নীতি ও সহায়তার ক্ষেত্রে তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে-এটি কি যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ, শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ করবে? রুবিও আরও বলেন, “আমাদের কার্যক্রমে উদ্ভাবনী এবং মনোযোগী হতে হবে। এর জন্য কিছু অগ্রাধিকার পুনর্বিন্যাস এবং পুরনো কিছু অনুশীলন বাদ দেওয়া জরুরি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ছিল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অংশীদার। যদি এই সহায়তা দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ থাকে, তবে সংকট সমাধানে বাংলাদেশের এককভাবে দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে পড়বে।