পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনে এককভাবে লড়বে মমতা
ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের হাত ধরেই লোকসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে চাইছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু সেই লক্ষ্যে বার বার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর তৃণমূল সরকার বিরোধী মন্তব্য। এবার জোটের জট কাটাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব।
বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকে আসন রফার সময়সীমা নিয়ে বার বার মতানৈক্য হয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূলের। গত বছর ডিসেম্বরে দিল্লিতে জোটের বৈঠক শেষ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আসনরফা করার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু এআইসিসি নেতৃত্ব তাতেও কর্ণপাত না করায় বেজায় ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য জনসভা থেকেই পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনে একক ভাবে লড়াই করার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন। তবে হাল না ছেড়ে লালু ও অখিলেশ উভয়ই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার বিষয়ে ফোন করে মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন। কংগ্রেসের নতুন করে পাঁচ আসনের দাবির কথাও তাঁরা তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রীকে জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মত, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে জোট গঠনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি আন্তরিক আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ ও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ। বিহারে ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার ছেড়ে নীতীশ কুমারের এনডিএ জোটে ফিরে যাওয়ার পরেই লালু বিরোধী জোট গঠনের বিষয়ে বেশ সাবধানী হয়ে পড়েছেন। বিহারে কংগ্রেস, আরজেডি ও বামপন্থী দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা হওয়ার খুব একটা দুষ্কর বিষয় নয়। আর উত্তরপ্রদেশে ১৭টি আসন কংগ্রেসকে ও একটি আসন তৃণমূলকে ছেড়ে ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন অখিলেশ। এ বার তাঁরা জোট ইন্ডিয়ায় মমতাকে ধরে রাখতে চেষ্টা শুরু করেছেন। তাই তাঁরা কংগ্রেসের পাঁচ আসনের প্রস্তাবকে পুনর্বিবেচনা করতে বলেছেন মমতাকে। রাজ্যের সব আসনে লড়াই করার পাশাপাশি, জোট ইন্ডিয়া সিপিএমের কথা মতো চলছে বলেই অভিযোগ করেছিলেন মমতা। তাই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট অসম্ভব বিষয় বলেই মনে করছেন বাংলার রাজনীতির কারবারিরা।
গত ডিসেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাহুল গান্ধী ও এআইসিসি সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে। সেখানেই রাজ্য নেতারা ৮-১১টি আসনে লড়াই করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতার কাছেও সেই মর্মেই জোটের বার্তা পাঠিয়েছিলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু এ রাজ্যের কংগ্রেস দু’টির বেশি আসন জেতার জায়গায় নেই বলে প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়ে একক লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে তৃণমূল। অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস আবার তৃণমূলের তুলনায় বামেদের সঙ্গে জোটে আগ্রহী। বেশির ভাগ নেতাই সে কথা শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন। এমন অনিচ্ছুক নেতৃত্বের সঙ্গে জোট গড়তে আগ্রহী নন তৃণমূলের রাজ্য নেতারা।
তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের কথায়, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বহরমপুরে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এমন কথা বলার পর কি এআইসিসির কোনও নেতা অধীরের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন?’’ তাঁদের আরও বক্তব্য, ‘‘অধীর প্রকাশ্যেই বলছেন তিনি বামেদের সঙ্গেই জোট করতে বেশি আগ্রহী। আর ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে বহরমপুর লোকসভাতেই তৃতীয় শক্তি কংগ্রেস। তাই এ রাজ্যে এখন কংগ্রেস একটিও লোকসভা আসনের দাবি করার জায়গায় নেই। তৃণমূল কিন্তু ৪২টি আসন লড়াই করার পাশাপাশি সব আসনেই জয়ের জায়গা তৈরি করতে পারবে। তাই আমাদের কোনও জোটের প্রয়োজন নেই।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয় বার সরকার গঠনের থেকে রুখতে মরিয়া লালু ও অখিলেশ তাই বাংলাতেও কংগ্রেস-তৃণমূল জোট চান। কিন্তু বাংলার বাস্তবের মাটি অনেক কঠিন। তাই জাতীয় নেতারা উদ্যোগী হলেও, কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছে জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।