ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ
অনাহারে মরতে বসেছে গাজার চিড়িয়াখানার পশুপাখিরা
ছবি: রয়টার্স
টানা প্রায় তিন মাস ধরে চলা ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ নৃশংস হামলায় দেখা দিয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। অঞ্চলটিতে খাদ্যের এতটাই সংকট দেখা দিয়েছে যে এক টুকরো শুকনো রুটিও খুঁজে পাওয়া যেন কষ্টসাধ্য। খাদ্য সংকটে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে অঞ্চলটির বাসিন্দা। সাথে অনাহারে মরতে বসেছে চিড়িয়াখানার অবুঝ প্রাণীরাও। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে একটি চিড়িয়াখানার পশুপাখির দুর্বিষহ অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ফিলিস্তিনের গাজায় ১২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের হামলা চলছে। উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে। প্রায় ২২ হাজার মানুষ নিহতের পাশাপাশি বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার বলতে গেলে সবাই। বেশিরভাগ মানুষ এখন দক্ষিণে মিশর সীমান্তের কাছে রাফাহ শহরের দিকে ছুটছে।
রাফাহ শহরের রাস্তাঘাট বা মাঠ, কোথাও আর খালি জায়গা নেই। এমনকি গাজার নানা প্রান্ত থেকে এসে অনেকে রাফাহর একটি চিড়িয়াখানায় আশ্রয় নিয়েছেন। খাঁচার ভেতর ক্ষুধার্ত বানর, সিংহ ও তোতা পাখিরা অনাহারে খাবারের জন্য ডাকাডাকি করছে। ওই খাঁচাগুলোর পাশেই এক লাইনে প্লাস্টিকের তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ।
চিড়িয়াখানাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। গোমা নামে একটি পরিবারের সদস্যরা এর দেখাশোনা করে। ওই পরিবারের এক সদস্য আদেল গোমা বলেন, ‘যুদ্ধে অনেক পরিবার পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। আমাদের পরিবারের সবাই এই চিড়িয়াখানার ভেতর বসবাস করছে।’
চিড়িয়াখানাটির মালিক আহমেদ গোমা জানান, চারটি বানর এরইমধ্যে মারা গেছে। আরেকটি এতটাই দুর্বল যে, খাবার সামনে পেলেও সে নিজে নিয়ে আর খেতে পারে না। দুটি সিংহ শাবকের বেঁচে থাকা নিয়েও দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
আহমেদ বলেন, ‘আমরা ওদের বাঁচিয়ে রাখতে শুধু শুকনো রুটি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়াচ্ছি। আর কিছু দিতে পারছি না। এখানকার পরিস্থিতি সত্যিই খুব করুণ। সিংহ শাবক দুটির মা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগে প্রতিদিন মুরগির মাংস খেত। এখন সপ্তাহ ধরে অনাহারের পর শুধু শুকনো রুটি পাওয়া যাচ্ছে।’
রাফাহ চিড়িয়াখানার পশুচিকিৎসক সফিয়ান আবদীন জানান, প্রতিদিনই পশুপাখিরা মারা যাচ্ছে বা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। পুরো জনগোষ্ঠী অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। কারণ ইসরায়েলের অবরোধের জন্য যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় সব ধরনের খাবার, ওষুধ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এখন ইসরায়েলি বাহিনীর অনুমতি নিয়ে কেবল ত্রাণের গাড়ি গাজায় প্রবেশ করতে পারে। তাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। গাজার অনেক ফিলিস্তিনি এখন প্রতিদিন একবেলা খাবারও খেতে পান না।