ভারতের অরুণাচলে ‘গ্রিনফিল্ড এয়ারপোর্ট’ উদ্বোধন
ভারতের অরুণাচল প্রদেশে আজ শনিবার (১৯ নভেম্বর) প্রথম ‘গ্রিনফিল্ড এয়ারপোর্ট’ বা সবুজ ভূমির মধ্যে বিমানবন্দর উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্থানীয় নাম ‘দোনি পোলো এয়ারপোট’। অবস্থান ইতনানগরের হোলোঙ্গিতে।
সবুজ পাহাড়ের ভেতরে বিমানবন্দরের রানওয়ে তৈরি করা হয়েছে। পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে মানুষের আয় বাড়ানো, তাদের জীবনমান উন্নয়ন ও বিমানযোগাযোগের উন্নত সুবিধাকে হাতের কাছে নিয়ে আসার বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
দেশটির সরকার আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে জানায়, অরুণাচলের তৃতীয় বিমানবন্দর এটি। দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিতে প্রথম বিমানবন্দর তৈরি করা হয়েছে ১৯৪৭ সালে। ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে মোটে ৯টি বিমানবন্দর আছে। মোদী সরকার এখানে মোট সাতটি বিমানবন্দর তৈরি করেছে।
২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি সাবেক তেজু এয়ারপোর্টকে আধুনিকায়ন করে একটি সবুজবান্ধব বিমানবন্দরে রূপদানের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর কাজের আনুষ্ঠানিক শুরু হয়। তবে বিমানবন্দরটির জন্য অরুণাচল রাজ্য সরকার ২০০৭ সালে রাজধানী ইতনানগর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বান্দেরদেভাকে নির্বাচন করেছিলেন। তবে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএএ) প্রকল্পটি বাতিল করে অবস্থানগত কারণে।
২০১১ সালে তারা বিকল্প স্থান হোলোঙ্গিকে নির্বাচন করেন। তাদের পরামর্শ ছিল, অপারেশনাল নিরাপত্তার জন্য এই জায়গাই ভালো, কম খরচে তৈরি করা যাবে ও ভবিষ্যতে বিস্তৃত করা সহজ হবে। কেননা, হোলোঙ্গি সমতল ভূমি, খারাপ আবহাওয়ায়ও সহজে এবং তুলনামূলকভাবে আরও অনেক ভালোভাবে ব্যবহারযোগ্য হবে, আর নির্মাণকাজ এবং বিস্তৃতিরও সুযোগ থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ২০১২ সালে হোলোঙ্গি সাইটকে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেন।
সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, হোলোঙ্গি বিমানবন্দরের টার্মিনাল মোট চার হাজার ১০০ স্কয়ার কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। প্রতি ঘণ্টায় ২০০ জন যাত্রী অবস্থান করতে পারবেন। বিমানবন্দরটি ভারতের উত্তরপূবাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচলের প্রথম সবুজের মধ্যে ও সবুজবান্ধব বিমানবন্দর হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। পুরো বিমানবন্দরটি ৩২০ হেক্টরের বেশি জমিতে অবস্থিত। ২৩ মিটার রানওয়ে আছে। একটিই টার্মিনাল আছে। আনুমানিক ৫ হাজার ১০০ স্কয়ার মিটার বা ২৩০০ মিটার জুড়ে তৈরি করা হয়েছে। হালকা বিমানগুলো চলাচলের জন্য উপযুক্ত। বিমানবন্দরটিতে একত্রে দুটি এ৩২১ এয়ারবাস ওঠানামা করতে পারবে।
বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি হোটেল আছে। একটি কনভেনশন সেন্টার আছে। আছে একটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) টাওয়ার। একটি টেকনিক্যাল ব্লক আছে। একটি ফায়ার স্টেশন আছে। দুটি ট্যক্সিওয়ে আছে।
রাতে বিমান অবতরণের সুবিধা রাখা হয়েছে। আছে ল্যান্ডিং সিস্টেমস প্রযুক্তিগত সুবিধা।
এয়ারপোর্ট টার্মিনালে একটি আধুনিক ভবন আছে। সেখানে বিমানের সব ধরনের জ্বালানি সুবিধা প্রদান করা যাবে। নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিমানবন্দরের নানা সুবিধা পরিচালিত হবে। আমাদের বর্জ্যসম্পদগুলো পুনঃব্যবহারযোগ্য করার সুবিধা আছে।
এই বিমানবন্দরের নামটিতে ফুটে উঠেছে অরুণাচল প্রদেশের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক সম্পদ। নামের মধ্যে দোনালির মাধ্যমে রাজ্যের আদিবাসীদের তাদের সূর্যদেবতা (দোনালি) ও চন্দ্রদেবতা (পোলো)’র প্রতি তাদের প্রণাম এবং জীবনযাপনে তাদের অবদানকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। ফলে নামটি রেখেছেন রাজ্য সরকার দোনালি পোলো এয়ারপোর্ট।
প্রদেশের তৃতীয় বিমানবন্দর হলেও ২৩শ মিটার আয়তনের এটিই প্রথম। এখানে ‘বোয়িং ৭৪৭’ নামের বিশ্বের অন্যতম বড় যাত্রীবাহী বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের সব সুবিধা আছে।
এ বছরের ১৮ অক্টোবর ইন্ডিগো এয়ারলাইস নামের একটি সংস্থা সফলভাবে তাদের বিমান পরিচালনার মাধ্যমে বিমান অবতরণ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ফলে বিমানবন্দরের মাধ্যমে ৭৫ বছরের মধ্যে ভারতের উত্তরপূবাঞ্চলীয় পাঁচটি রাজ্য—মিজোরাম, মেঘালয়, সিকিম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল বিমানের উড্ডয়ন দেখল।
ওএফএস/আরএ/