কানাডায় নেওয়া যাবে না বাবা-মা ও দাদা-দাদিকে, স্পনসরশিপ বন্ধ ঘোষণা
ছবিঃ সংগৃহীত
কয়েক দশক ধরে কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দারা বাবা-মা এবং দাদা-দাদি স্পনসরশিপ (পিজিপি) কর্মসূচির আওতায় স্থায়ী বসবাসের (পিআর) জন্য বাবা-মা এবং দাদা-দাদিকে দেশটিতে নেওয়ার জন্য স্পনসর করতে পারতেন। কিন্তু বহুল জনপ্রিয় এই সুযোগ আর থাকছে না।
দেশটির অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী মার্ক মিলারের জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান আবেদনের ব্যাকলগ দ্রুত শেষ করার দিকে মনোনিবেশ করায় বাবা-মা এবং দাদা-দাদির জন্য স্থায়ী বসবাসের স্পনসরশিপের নতুন আবেদন গ্রহণ করা সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে কানাডা।
কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব (আইআরসিসি) বিভাগ ঘোষণায় বলেছে, তারা চলতি বছরে এই কর্মসূচির আওতায় আর নতুন কোনও আবেদন গ্রহণ করবে না। কানাডার সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে অনেক বাংলাদেশি পরিবারও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছেন।
বিষয়টি পরিষ্কার করে আইআরসিসি বলেছে, তারা ২০২৪ সালে জমা দেওয়া আবেদনগুলোর প্রক্রিয়াকরণ চালিয়ে যাবে। চলতি বছরে পিজিপি কর্মসূচির আওতায় কোনও নতুন আবেদন গ্রহণ করা হবে না। অতীতে এই কর্মসূচির আওতায় কানাডার স্থায়ী বাসিন্দারা দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য তাদের বাবা-মা এবং দাদা-দাদিকে নিয়ে যেতে পারতেন।
অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে ২০২৫ সালে আইআরসিসি ২০ শতাংশ পিআর সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বছরের শুরুতেই প্রভাব পড়েছে পিজিপি প্রোগ্রামের ওপর। আগের আবেদনের ভিত্তিতে পিজিপি প্রোগামে এ বছর সাড়ে ২৪ হাজার মানুষকে কানাডায় স্থায়ীকরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আইআরসিসি।
অভিবাসনে কড়াকড়ি
বিগত বছরগুলোতে কানাডা অভিবাসন নীতিতে উদার থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, বর্তমানে কানাডা অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে চায়।
অভিবাসনের ব্যাপারে কঠোর নীতির ফলে ২০২৫ সালে পিআর প্রোগ্রামের বাইরে কানাডায় বসবাসকারী অস্থায়ী ১২ লাখ বিদেশি দেশত্যাগে বাধ্য হতে পারেন- এমন তথ্য উঠে এসেছে টরন্টোভিত্তিক বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
এখন থেকে প্রতি বছর পিআর সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইআরসিসি। বিগত সময়ে প্রতি বছর পাঁচ লাখ পিআর দেওয়া হলেও এখন সেটি কমিয়ে ২০২৫ সালে ৩ লাখ ৯৫ হাজার অভিবাসীকে পিআর দেবে বলে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। এ সুবিধা ২০২৬ সালে কমিয়ে ৩ লাখ ৮০ হাজার এবং ২০২৭ সালে আরও কমিয়ে ৩ লাখ ৬৫ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০২৫ সালে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ৯৪ হাজার ৫০০ ফ্যামিলি অর্থাৎ পারিবারিক ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত আইআরসিসির। এর মধ্যে ৭০ হাজার ভিসা পাবে স্থায়ীভাবে দেশটিতে বসবাসকারীদের স্ত্রী-সন্তানরা।
ট্রুডো সরকার কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধি থামানোর প্রয়াস হিসেবে এই নীতি গ্রহণ করেছে। ২০১৫ সাল থেকে উদারনীতির আওতায় বিগত এক দশকে কানাডায় অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। এতে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন সুবিধা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তাই অভিবাসনের ওপর কড়াকড়ি আরোপে অটুট থাকছে দেশটির সরকার।
কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে ১ লাখের বেশি বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ৬০-এর দশক থেকে কানাডায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের বসবাস শুরু হলেও ৮০’র দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত দুই দশকে কানাডায় বাংলাদেশির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
এতদিন কানাডায় বাংলাদেশিদের কাজ পাওয়া কিংবা পিআর সুবিধার জন্য কোনো বেগ পেতে না হলেও দিন দিন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে। এর ওপর পিজিপি সুবিধা বন্ধ হওয়ায় যারা পিআর পেয়েছেন, পরিবার নিয়ে তারাও পড়েছেন বিপাকে।