আসাদের পতন, সিরিয়ায় ‘নতুন যুগের সূচনা’
ছবি: সংগৃহীত
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের এক দশকেরও বেশি সময় পর রোববার (০৮ ডিসেম্বর) দামেস্কে প্রবেশ করে বিদ্রোহীরা। এর পরপরই ৫৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ শহরটি ছেড়ে বিমানে করে পালিয়ে যান। দীর্ঘ সময় ধরে দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের সমাধানে তার পাশে ছিলো রাশিয়া এবং ইরানের মতো শক্তিশালী মিত্ররা। তবে, শেষ মুহূর্তে মিত্রদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা বা পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রোববার দামেস্ক থেকে একটি অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে উড়ে গেছেন। দুই সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, বিদ্রোহীরা রাজধানীতে প্রবেশের সময় তারা কোনো সেনা সদস্য দেখেনি। সিরিয়ার বিদ্রোহীরা বলেছে যে দামেস্ক "এখন আসাদ মুক্ত"।
মূলত গত মাসের শেষে হঠাৎ করেই দেশটির পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করে। ২৭ নভেম্বর দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের আক্রমণ শুরু হয়। গত রোববার (০১ ডিসেম্বর) আলেপ্পোর কুর্দি যোদ্ধাদের দখলে থাকা কিছু সংখ্যাগরিষ্ঠ কুর্দি জেলা ছাড়া, বাকি অংশ নিজেদের দখলে নেয় বিদ্রোহীরা। পরে বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহর হামা দখলে নেয় তারা। শুক্রবার (০৭ ডিসেম্বর) সরকার নিয়ন্ত্রিত রাজধানী দামেস্ক ঘেরাও করার জন্য অভিযান শুরু করে তারা। এর মধ্যে রোববার (০৮ ডিসেম্বর) সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসের নিয়ন্ত্রণ দখল করার ঘোষণা দেয় বিদ্রোহীরা।
বাশার আল-আসাদের পালানোর খবর সামনে আসার পর সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহীরা বলছে, আসাদ শাসনের অবসান সিরিয়ার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “বাথিস্ট শাসনের অধীনে ৫০ বছরের নিপীড়ন এবং ১৩ বছরের অপরাধ, অত্যাচার এবং বাস্তুচ্যুতি এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পরে, সব ধরণের দখলদার বাহিনীর মোকাবেলা করে, আমরা আজ ঘোষণা করছি, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ সেই অন্ধকার যুগের সমাপ্তি এবং নতুন যুগের শুরু হলো। এটি সিরিয়ার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা”।
সশস্ত্র বিদ্রোহীরা ঘোষণা দিয়েছে, "নতুন সিরিয়া" হবে "শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের" জায়গা। যেখানে ন্যায়বিচারের জয় হবে এবং সব সিরিয়ানদের মর্যাদা রক্ষা করা হবে। অপর এক বিবৃতিতে বিদ্রোহীরা বলেছে, "আমরা অন্ধকার অতীতের পাতা উল্টে, ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবো।" বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস প্রধান আল-জুলানিসহ বিরোধী নেতারা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জোর দিয়ে বলেছিলেন, যে তারা সাম্প্রদায়িকতা এবং আল-কায়েদার সাথে পূর্ববর্তী সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ দূর করার প্রয়াসে সব সিরিয়ানদের জন্য একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্য সামনে রেখে এগোচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলেছে, হাজার হাজার মানুষ গাড়িতে এবং পায়ে হেঁটে কেন্দ্রীয় দামেস্কে জড়ো হয়ে, স্লোগান দিচ্ছেন, "স্বাধীনতা!" অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওগুলো উমাইয়াদ স্কোয়ারে বেশ কিছু লোককে একটি পরিত্যক্ত সামরিক ট্যাঙ্কের উপর দাঁড়িয়ে বিজয় উদযাপনের গান গাইতে দেখা গেছে। ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে আল জাজিরা।
এদিন দামেস্কে ঢুকেই রাজধানীর পাবলিক রেডিও এবং টেলিভিশন ভবন দখল করে নেয় বিদ্রোহীরা। পাবলিক রেডিও এবং টিভি ভবন সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দুই প্রতিষ্ঠান। দামেস্কের কেন্দ্রস্থলে থাকা এই ভবনটি সিরিয়ার ১৯৫০ এবং ৬০ এর দশকে ধারাবাহিক অভ্যুত্থানের সময় নতুন সরকার ঘোষণা করতে ব্যবহৃত হয়। বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর থেকে সরকারী বাহিনীও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।