রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পথে
রাহুল গান্ধী। ভারত তথা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম তার। বাবা রাজীব গান্ধী, দাদি ইন্দিরা গান্ধী এবং প্রমাতামহ জওহরলাল নেহরু ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি মোদী পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের সাজা দিয়েছেন দেশটির আদালত। এর পরদিনই শুক্রবার (২৩ মার্চ) কংগ্রেসের এই সাবেক সভাপতিকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে লোকসভা সচিবালয়।
এ মুহূর্তে ভারতের রাজনীতির অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। আপাত মনে হচ্ছে রাহুল গান্ধী রাজনীতির মাঠে ভীষণ চাপে পড়লেন। তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোচ্ছে, তা নিয়ে হিসাবনিকাশ শুরু হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুলের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকলে আগামী ৮ বছর ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না তিনি। দেশটির জনপ্রতিনিধি আইনে এমনটাই বলা আছে। আইন অনুযায়ী দুই বছর জেলে কাটানোর পরও ৬ বছরের জন্য ভোটে লড়তে পারবেন না। সেই হিসাবে ২০৩১ সালের আগে ভোট করতে পারবেন না তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ আদালতে রাহুলের ভাগ্যে কী রয়েছে, তা নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। অবশ্য দেশটির উচ্চ আদালতে অনেক গুরুতর মামলায়ও সাংসদদের সাজা স্থগিত করার নজির আছে।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, রাহুলকে লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেওয়া হলো কি না। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা হলো কি না, এমন কথাও উঠেছে।
এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লোকসভায় রাহুল গান্ধীর অযোগ্যতা ঘোষণা শেষ পর্যন্ত আশীর্বাদ হতে পারে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে এটি। তাদের দাবি, ভারতের অনেক শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক বিভিন্ন সময় মামলায় দণ্ডিত হলেও রাহুলের ঘটনাটি ভিন্ন। তিনি দুর্নীতি বা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের মামলায় দণ্ডিত হননি। এ মামলাটির সঙ্গে বাকস্বাধীনতার সম্পর্ক রয়েছে। ফলে তাকে অপরাধী হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে না বিজেপি সরকার। অন্যদিকে রাহুলের সাজার ঘটনায় বিজেপির কুমতলব দেখছেন দেশটির বিরোধীরা। তারা এ রায়ের কড়া সমালোচনা করছেন।
রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য ও সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে। উচ্চ আদালত সাজার মেয়াদ না কমালে বা সাজার উপর স্থগিতাদেশ জারি না করলে কোনো নির্বাচনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না রাহুল গান্ধী।
রাহুল কিন্তু ভেঙে পড়েননি। লোকসভার সিদ্ধান্তের পর তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘আমি ভারতের কণ্ঠস্বর রক্ষার জন্য লড়াই করছি। এজন্য আমি যে কোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত।’
এদিকে রায়ের পর কংগ্রেস জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে তারা দমে যাবে না। বরং নতুনভাবে রাজনৈতিক এবং আইনিভাবে লড়াই করবে তারা। আর এরই মধ্যে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা হয়েছে মামলা। আবেদনকারীর দাবি, এভাবে কোনো অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার পদ খারিজ করে দেওয়া সাংবিধানিকভাবে বেআইনি। জানা গেছে, আবেদনকারী একজন পিএইচডি পড়ুয়া।
রাহুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের প্রতিবাদে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে সরব হয়েছে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো। তৃণমূল, সিপিএম, আম আদমি পার্টি, আরজেডির মতো বিরোধী দলগুলো রাহুলের পক্ষ নিয়েছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে যা আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।
উচ্চ আদালতের রায়ে এ যাত্রায় যদি রাহুল বেঁচেও যান- তারপরও বিজেপি তাকে এত সহজে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না। কেননা তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রয়েছে আরও একাধিক মামলা। আর এ সব মামলার সিংহভাগই দায়ের করেছে বিজেপি-আরএসএসের কোনো নেতা, কর্মী কিংবা সংগঠন।
আরএ/