বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৬ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

১০ বছরের শাসনে নাগরিক চোখে 'অযোগ্য' কিম

২৭ বছর বয়সী কিম জং উন উত্তরসূরী হিসেবে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় আসেন, তাও ১০ বছর হলো। নেতা হিসেবে তিনি কেমন হবেন সে পরীক্ষা তাকে দিতে হয়নি। কিম জং ইলের পর তিনিই রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় আসবেন সেটা নির্ধারিতই ছিল। কিম জং উন তার ১০ বছরের শাসনকালে নানাভাবে হয়েছেন খবরের শিরোনাম। 

৬৯ বছর বয়সী কিম জং ইল মারা যান ২০১১ সালে। উত্তর কোরিয়ার মিডিয়া তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে ১৯ ডিসেম্বর। ২৭ বছর বয়সেই তথাকথিত নেতা হিসেবেই পরিচিতি পান বিশ্ব জুড়ে। বিশ্বের বহু দেশের নেতা ভেবেছিলেন তিনি দেশকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। তবে এই ১০ বছরে কিম জং উন শুধু নিজের অবস্থানই শক্ত করেননি। 'কিম জং-ঐক্যবাদ' নামে নতুন এক যুগের সূচনা করেছেন।

ক্ষমতায় আসার পর কিম তার বিরোধীতা করা কয়েক শত মানুষকে হত্য করেছেন। পারমানবিক পরীক্ষা করিয়েছেন। শতাধিক ব্যালাস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছেন। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ব মিডিয়ার নজর কেড়েছেন। পারমানবিক অস্ত্রে বলীয়ান হওয়ার মূল্য এখন দিতে হচ্ছে উত্তর কোরিয়াকে, কোরিয়া এখন আগের চেয়ে বেশি গরীব আরও বেশি বিচ্ছিন্ন একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

কিমকে নিয়ে যা বললেন তারা-

কিম জং ইল যেদিন মারা যান কিম জিউম-হিউক তখন ছাত্র ছিলেন। তিনি চীনে পড়ালেখা করতেন। উত্তর কোরিয়ার অভিজাত পরিবারের সন্তান তিনি। উত্তর কোরিয়ার অল্প কিছু ভাগ্যবানদের একজন, যিনি দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, যেদিন কিম জং ইল মারা যান, সেদিন তিনি পার্টি করেছিলেন। এ কাজের জন্য তার মৃত্যুও হতে পারতো। তিনি ভেবেছিলে কিম শাসনের অবসান হলো এবার। আর নতুন শাসক কিম জং উন যেহেতু ইউরোপে পড়ালেখা করেছেন। তাই তার দৃষ্টিভঙ্গী হবে আমাদের মতো। আমি ভেবেছিলাম নতুন যুগের সূচনা হবে উত্তর কোরিয়ায়। চীন বিশ্ব সম্পর্কে আমার চোখ খুলে দিয়েছে।

কিম জিউম-হিউক আরও বলেন, তবে চীনে থাকাকালীন দেশ সম্পর্কে বিশ্ব মিডিয়া, ইন্টারনেটে যে সব তথ্য পেয়েছি, তাতে আমার বিশ্বাস ছিলো পশ্চিমার মিথ্যা বলছে। তবে আমার বিশ্বাস ভঙ্গ হয়, দেশে ফিরে এসে, আমার দেশের ২৫ মিলিয়ন মানুষ জানে না বিশ্ব তাদের সম্পর্কে কীভাবছে। উত্তর কোরিয়ার মানুষ এভাবেই নিজ দেশে অবরুদ্ধ। এদেশের মানুষকে শেখানো হয়েছে,তাদের নেতা প্রতিভাবান, বিশ্বস্ততা পাওয়া যোগ্য।

উত্তর কোরিয়ায় এ কথাও ফিসফিসিয়ে লোকমুখে শোনা যায় যে, কিম জং উন যোগ্য উত্তরসূরী নন, তিনি বিশেষভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত; বলেছেন উত্তর কোরিয়ার সাবেক কুয়েত বিষয়ক রাষ্ট্রদূত রিউ হিউর-উ। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ানরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাধিকারের শাসন দেখতে দেখতে। বিশেষ করে অভিজাতরা। তারা নতুন কিছু চাইছেন। কিমের পরিবার ১৯৪৮ সাল থেকে শাসন করে আসছে। নাগরিকদের শেখানো হয় যে, কিমের বংশের রক্তধারা পবিত্র, দেশ শাসনের জন্য উপযুক্ত, আমাদের এই প্রিয় দেশকে সঠিকভাবে শাসন একমাত্র এ বংশের রক্তই করতে পারবে। তিনি প্রশ্ন করেন, ২৭ বছর বয়সী একজন দেশ শাসন সম্পর্কে কিজানে? কিবুঝে?

২০১২ সালে নতুন নেতা উন দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন,'কোরিয়ানদের আর কখনওই শক্ত বাঁধনে বাঁধা হবে না।' দেশের মানুষ ভাবতে শুরু করলো, নতুন নেতা তাদের ভোগান্তির অবসান ঘটাবে। ১৯৯০ সাল থেকে উত্তর কোরিয়াতে দুর্ভিক্ষ চলছে, হাজার হাজার মুনুষ না খেয়ে মারা গেছে। খাদ্য ঘাটতি দূর করবে নতুন নেতা। খাদ্যের মজুদ বাড়াবে। এটা ছিলো একটি অসাধারণ মুহূর্ত; কথাগুলো বলেছেন পূর্ব-উপকূলীয় প্রদেশের গাড়ি চালক ইয়ু সিওং-জু। তিনি বলেন,পররাষ্ট্র কর্মকর্তাতের নির্দেশ দেয়া হয় বিদেশি বিনিয়োগ সৃষ্টির সুযোগ করে দিতে এবং দেশে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছিল। সুপার মার্কেটগুলোতে পণ্য সরবরাহ বেড়ে ছিলো। আমাদের দেশের পণ্যের মান চীনের পণ্যের থেকে সবদিক থেকে উন্নত ছিলো। আসলে এটা ছিলো আমাদের গর্বের। আমাদের অহংকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলো।

তবে সিংহাসনের জন্য যে বা যারা হুমকি স্বরূপ তাদের প্রতি কিমের সুনজর স্থায়ীত্ব পায়নি। চীন সীমান্ত এলাকার এক ব্যবাসায়ী চোয়ি না-রাই বলেন,যাদেরই কিম হুমকি মনে করেছেন তাকেই হত্যা করেছেন। তরুণ নেতা এভাবেই তার ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। নিজের চাচাকেও সে ছাড় দেয়নি। কুকুরের চেয়েও খারাপ পরিণতি হয়েছে তার। উনের চাচা জ্যাং সং-থায়েক মিত্রদের নিয়ে উনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন দেশ শাসন করার যোগ্য। তিনি যদি ক্ষমতায় আসতে পারতেন তবে দেশে অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন আসতো। যদিও আমরা যা ভাবছিলাম সেটা করা সহজ ছিলো না। তবে আমরা এমনটাই আশা করছিলাম। আর এমন কথা যখন প্রচার পেয়েছিলো তখনই চাচা জ্যাং সং-থায়েককে চরম পরিণতি ভোগ করতে হলো। দলের ঐক্যে ফাঁটল ধরিয়েছেন জ্যাং সং-থায়েক, এমন অভিযোগ এনে কিম ফাঁসিকে ঝুলিয়ে হত্যা করলেন চাচাকে।

কিমের নৃশংস হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে চীন সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চেষ্টা করে। তারা শরনার্থী হয়ে সেখানে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। সেটা ঠেকাতে সীমান্তে পাহারা আরও জোরদার করে কিম। কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয় সীমান্ত এলাকা ঘিরে। হা জিন-উ, তিনি একজন দালাল, উত্তর কোরিয়া থেকে ১০০ জনকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি বলেন,'সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো, যাকেই সীমান্ত পেরুতে দেখবে,দেখামাত্র গুলি করবে। তাদেরকে এ কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে না। আমি প্রথম যখন এ কাজ শুরু করি তখন আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম। তবে আমি দায়িত্ব মনে করে আমার কাজটি করেছি, বলেন হা জিন-উ। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার মনে কেবলই প্রশ্ন আসতো আমি কেন এদেশে জন্ম নিলাম। একটা প্রাণির যে স্বাধীনতা আছে আমার সে স্বাধীনতা নেই। তাই আমি এ ঝুঁকি নিলাম। তবে পরিণতিতে আমাকে দেশ ছাড়তে হলো। আমার মাকে আটক করা হলো। তাকে জেলখানায় এমন নির্যাতন করা হলো যে, তিনি পক্ষাঘাত গ্রস্ত হয়ে পড়লেন। এ ঘটনা তাকে এখনও কষ্ট দেয়।

ভিন্নমতাদর্শী হয়েও কিম জং উন তার বাবার চেয়েও আরও বেশি গ্রহণযোগ্য আরও বেশি আধুনিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মানসিকতা প্রমাণ করতে চেষ্টা করছিলেন। কিম রি সোল-জু নামে এক গায়িকাকে বিয়ে করেন। স্ত্রীকে সাথে নিয়ে তিনি বিভিন্ন শহর ও গ্রাম ঘুরে বেড়ালেন, স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা থেকে ঘোড়ায় চড়া, রোলার কোস্টরে উঠছেন, প্রসাধনী কারখার পরিদর্শন করছেন, এসব ছবি প্রচার করেছেন কিম নিজেকে আধুনিক মানুষ হিসেবে দেখাতে। তবে দেশের সাধারণ নাগরিকের জন্য এ সবই ছিলো নিষিদ্ধ। ইউন মি-সু নামে একজন বলেন, আমি আধুনিক জীবন যাপন করতে চাই। আমি ট্রেন্ড ফলো করতে চাই। তবে আমাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিলো। আমি জিন্স পরতে চাইতাম। অলঙ্কারও পরতে চাই। আমি তাই করলাম। কিন্ত দেশের আইন না মানার জন্য আমাকে তিরস্কার করা হলো জনসম্মুখে। আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো।

হিউন-ইয়ং একজন গায়ক বলেন, তাকে গান গাইতে হবে কিমের প্রশংসা করে। সে অস্বীকৃতি জানালো, আর সে কারণে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হলো। তিনি আরও বলেন, একজন শিল্পী হিসেবে আমি যা করতে চাই তা কখনও করতে পারিনি। অনেক নিয়ম, কঠোর বিধি। কোরিয়ার একজন গায়ক হিসেবে আমি অনেক বেশি ভুক্তভোগী। সব কিছুই সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। সব কিছুতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ এটা প্রমাণ করে যে,তারা আত্মবিশ্বাসী নন। এমনকি তারা বিদেশী প্রভাবকেও ভয় পায়। শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়ার কে-পপ ভিডিও দেখার কারণে এই ১০ বছরে কমপক্ষে ১০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আর বিদেশি কোন কিছুর প্রভাবে কিম 'দুষ্টু ক্যান্সার' নাম দিয়েছেন।

প্রতিটি ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা আন্তর্জাতিক শিরোনাম হয়েছে। তবে দেশের মধ্যে গৌরব ধরে রাখতে পরেনি কিম। জনগণ বলে,তাদের রক্ত আর ঘাম শুষে এই পারমানবিক অস্ত্র বানানো হচ্ছে। এমনটাই বললেন উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়া চলে যাওয়া এক ব্যক্তি।

উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়া চলে যাওয়া অপর এক ব্যক্তি বলেন,আমরা এটাকে বিজয় বলছি না। আমরা যা আয় করছি সেটা আমরা মিসাইল পরীক্ষায় ব্যায় করছি। তাই এ কাজকে 'ওয়াও' বলে বাহবা দিতে পারি না।

২০১৬ সালের দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রদূত রাইউকে নতুন নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার কেন পারমানবিক অস্ত্র দরকার সে বিষয়ে ব্যাখা করতে এবং এটা এটাকে বৈধতা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। আশাকরা হয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোরিয়ার পারমানবিক পরীক্ষাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করতে। তবে যা ধারণা করা হয়েছিল, সে মতো কোন কিছুই হয়নি। উত্তর কোরিয়ার পারমানকিব পরীক্ষা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের শেষ হয় কিম আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বৈঠকের মধ্য দিয়ে বলে ধারণা করা হচ্ছি। এ বৈঠক ছিল একটি প্রদর্শনী মাত্র। সিঙ্গাপুরে বৈঠকে বসা দুই নেতার হ্যান্ডশেক করা ছবি ব্যাপক সাড়া ফেলে। গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। তবে পারমানবিক অস্ত্র বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা সেখানে কিম খুব সামান্যই সরে আসেন। ফলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় কোরিয়ার ওপর।

উত্তর কোরিয়ার ব্যবসায়ী চোই না-রায়ে বলেন,ট্রাম্প আর কিমের ওই বৈঠক সম্পর্কে ব্যাখ্যার কিছু ছিলো না। ওই বৈঠক কিভাবে পরিস্থিতি উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে সে বিষয়ে কাল্পনিক কিছু ভাবা যেতে পারে আর কি। কোন চুক্তিই আর হলো না। উত্তর কোরিয়া কখনই পরমানু অস্ত্র সমৃদ্ধকরণ থেকে সরে আসবে না। উত্তর কোরিয়া মনে করে এ অঞ্চলে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরমানু অস্ত্রে সমৃদ্ধ হতে হবে।

জু সিওং নামে উত্তর কোরিয়ার এক গাড়ি চালক জানান, ২০২০ সালে প্রতিবেশি চীনে যখন কোভিড হানা দিলো। তখন উত্তর কোরিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দিলো। শুধু সীমান্ত নয় ব্যবসাও বন্ধ রাখা হলো। কোরিয়ার ৮০ শতাংশেরও বেশি পণ্য চীন সীমান্ত দিয়ে আসে। ফলে দেশটি চরম সঙ্কটে পড়লো। খাদ্য সঙ্কট দেখা দিলো। অর্থনীতি সঙ্কুচিত হলো, জিনিসপত্রের দাম বাড়লো। পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকলো। কিম জং উন এ পরিস্থিতিকে 'চরম দুর্দশা' বলে বর্ণনা করলেন।

কিম সাং-হিউ নামে সাবেক এক চিকিৎসক বলেন, বেশিভাগ ওষুধ কালোবাজারে চলে গেলো। বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে অস্ত্রপচার করা কঠিন হয়ে পড়লো। চিকিৎসা সামগ্রীর চরম অভাব দেখা দিলো। কোভিড মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিলো না উত্তর কোরিয়া। করোনায় জনস্বাস্থ্যের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা অজানা,যোগ করেন তিনি।

বর্তমানে চলতে থাকা পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় চলে যাওয়া কিছু মানুষ এত বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন যে তারা অভ্যুত্থান চান। আদূর ভবিষ্যতেও উত্তর কোরিয়ায় অভ্যুথানের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।কিম যুগের আবসানের যত ভবিষ্যৎ বাণী সবই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কিমের পারিবারিক শাসন উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। প্রায় ৭০ বছর ধরে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়া। এই প্রতিবেদন তৈরির সময় যাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই একই আশা, উত্তর কোরিয়া সীমান্ত খুলে দেবে, জনগণ স্বাধীনভাবে চলতে শিখবে, কারও কারও শুধু এতটুকুই প্রত্যাশা, তারা যেন তাদের পরিবারের সঙ্গে আবার মিলিত হতে পারেন।

কিম জং উনের শাসনকালে তারা কথা বলার অধিকার হারিয়েছে, গায়ক হায়ুন-হাঙ এমনটাই জানান। আমার নিজের জন্য গান করার অর্থ দাঁড়ায় আমি আমার জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি। যারা উত্তর কোরিয়া যারা ছাড়ছেন, তারা তাদের মনকে কবর দিয়ে তবেই দেশ ছাড়ছেন।

শাসনামলের ১০ বছর পালন করতে চলেছেন কিম, তার কাছে কয়েক ডজন পারমানবিক অস্ত্র আছে, তবে তার দেশের মানুষ রয়েছে অনাহারে। কিম তার আঙ্গুলের এক ইশারায় একজন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারেন। সে ক্ষমতা তার আছে। উত্তর কোরিয়ার ২৫ মিলিয়ন মানুষ বিশ্ব থেকে আগের চেয়েও বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছে। আর এ অবস্থা থেকে মুক্তির কোন আশা আদূর ভবিষ্যত দেখা যাচ্ছে না। এখানে যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ছিলে, তারা দেশ ছেড়ে দক্ষিণ কোরিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

কেএফ/জেডএকে

Header Ad
Header Ad

প্রথম আরব নেতা হিসেবে সিরিয়া সফরে কাতারের আমির

ছবি: সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো কোনো আরব নেতা সিরিয়া সফরে গেলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় তিনি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে পৌঁছান। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের পর এই প্রথমবার কোনো সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান দেশটি সফর করলেন। বর্তমানে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আহমেদ আল-শারা। সফরের সময় দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে কাতারের আমিরকে স্বাগত জানান তিনি।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, নতুন সিরীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাতার মাঠপর্যায়ে কাজ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে সিরিয়ার জনগণের জন্য চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা করা, ইসরায়েলি দখলদারিত্ব প্রতিহত করা এবং সিরিয়ার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সহায়তা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

বিশ্লেষকদের মতে, কাতারের আমিরের এই সফর মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এই সফর দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

শহীদ ইয়ামিনকে হত্যা করল কে? পুলিশের তদন্তে নতুন বিতর্ক

ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে এই প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত কর্মকর্তারা পুলিশের দায় এড়াতে পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দিয়েছেন এবং ইয়ামিনকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

সমালোচকরা বলছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে পুলিশের নৈতিক অবক্ষয় এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে গণঅভ্যুত্থানের পরও তারা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারেনি। বরং, কঠিন চাপে থেকেও পুলিশের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড মাঝে মাঝেই প্রকাশ পাচ্ছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশের দাবি, ইয়ামিন এপিসি (সাঁজোয়া যান) কারে উঠলে বাইরে থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি ছোঁড়ে, যা তাকে আহত করে। এরপর এএসআই মোহাম্মদ আলী তাকে নামানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তার হাতে ব্যথা থাকায় ফসকে পড়ে যান ইয়ামিন। পুলিশ আরও জানায়, জনগণের কাছে হস্তান্তরের জন্য তাকে রোড ডিভাইডারে রাখা হয়, যাতে কেউ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারে।

তবে এই বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুলিশের সদস্যরা নীল রঙের এপিসি কারের ওপর ইয়ামিনকে ফেলে রেখে টহল চালায় এবং ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। কিছুক্ষণ পর এপিসি কারটি সাভারের রানা প্লাজা ও ভ্যাট অফিসের মাঝামাঝি এলাকায় আসে। এরপর এপিসির ভেতর থেকে এক পুলিশ সদস্য দরজা খুলে দেয় এবং আরেকজন ইয়ামিনকে টেনে-হিঁচড়ে রাস্তায় ফেলে দেয়।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ ইয়ামিন তখনও জীবিত ছিলেন। প্রচণ্ড কষ্টে নিশ্বাস নিতে দেখা যায় তাকে। তার পরনে ছিল নেভি ব্লু ট্রাউজার ও খয়েরি রঙের জামা। এপিসি থেকে ফেলে দেওয়ার পর তার দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে যায় এবং একটি পা এপিসির বাঁ দিকের চাকার সঙ্গে আটকে থাকে। মৃত ভেবে পুলিশের সদস্যরা তার পায়ে আর গুলি না করে রাস্তার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেয়। এরপর আরও দুই পুলিশ সদস্য নেমে এসে তাকে সার্ভিস লেনে ফেলে রেখে চলে যায়।

পুলিশের এই প্রতিবেদনকে ‘চরম পক্ষপাতদুষ্ট’ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, তদন্ত কর্মকর্তারা শুধু পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য নিয়েছেন, অথচ কোনো প্রত্যক্ষদর্শী, সংবাদকর্মী বা সাধারণ মানুষের সাক্ষ্য নেননি। এ কারণে তদন্ত প্রক্রিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিশ্বাস্য বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এক প্রতিবেদনে পুলিশের আচরণকে ‘ভয়ংকর বর্বরতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির তিন পুলিশ সদস্য দায়িত্বে চরম অবহেলা করেছেন এবং অপেশাদারসুলভ আচরণ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখাকে সুপারিশ করা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ নীল এপিসি কার থেকে ইয়ামিনের গুলিবিদ্ধ দেহ রাস্তায় ফেলে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। ঘটনাটি ঘটে সাভারের আশুলিয়া এলাকায়। কোনো ময়নাতদন্ত বা আনুষ্ঠানিক মৃত্যুসনদ না দিয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইয়ামিনের লাশ হস্তান্তর করে।

ঢাকা ও সাভার রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ইয়ামিনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা না করার জন্য পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়। পরে, পরিবার তাকে সাভারের তালবাগে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান বাধা দেন। শেষ পর্যন্ত ব্যাংক টাউন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ দায় মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু ভিডিও ফুটেজের ভয়ংকর দৃশ্যগুলো ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার সঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের কোনো মিল নেই। তাহলে, শহীদ ইয়ামিনকে হত্যা করল কে? পুলিশের তদন্তে যদি সত্য প্রকাশ না পায়, তবে স্বাধীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পুনরায় এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি উঠেছে। নিহত ইয়ামিনের পরিবার এবং আন্দোলনকারীরা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

Header Ad
Header Ad

রংপুর থেকে গ্রেফতার সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান

ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও একাধিক হত্যা মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ৯টায় রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডের পোস্ট অফিসের গলির এক বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ শিবলী কায়সার।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্টের পর থেকে মোহাম্মদ নুরুজ্জামান আত্মগোপনে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দীর্ঘদিনের নজরদারির পর অবশেষে তাকে গ্রেফতার করা হলো।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

প্রথম আরব নেতা হিসেবে সিরিয়া সফরে কাতারের আমির
শহীদ ইয়ামিনকে হত্যা করল কে? পুলিশের তদন্তে নতুন বিতর্ক
রংপুর থেকে গ্রেফতার সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান
কোটা পদ্ধতি পুনরায় পর্যালোচনার নতুন ৩ সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের
আমরা কারও কাছে চাঁদা চাইনি, চাইবোও না: জামায়াত আমির
নওগাঁ বারের নির্বাচনে সব পদে বিএনপি প্যানেলের জয়
আরব আমিরাতে চাঁদ দেখা গেছে, পবিত্র শবে বরাত ১৪ ফেব্রুয়ারি
ডিপসিকের চেয়েও কার্যকর নতুন এআই আনার দাবি আলিবাবার
প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন ও গুণগত পরিবর্তনই আমাদের মূল লক্ষ্য: গণশিক্ষা উপদেষ্টা
বাণিজ্য মেলায় সংঘর্ষ, আহত ১৬
শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের বিচার দাবিতে আমরণ অনশনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা
পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে নিজেই জানিয়ে দিবো: তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
সাত কলেজের জন্য হচ্ছে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’
ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নিতে বলেছে ইইউ: ইসি সচিব
রংপুরের টানা চতুর্থ হার, প্লে-অফের দৌড়ে টিকে রইলো খুলনা
চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'জয় বাংলা' স্লোগান, আটক ৫
প্রধান উপদেষ্টার উদ্বোধনে শুরু হচ্ছে একুশে বইমেলা
সুইডেনে পবিত্র কোরআন পোড়ানো সেই যুবককে গুলি করে হত্যা
বাংলাদেশ পুলিশে ১৬টি শূন্য পদে নিয়োগ, আবেদন শুরু ২ ফেব্রুয়ারি