ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা, নিহত ১৭
ফাইল ছবি
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনের ভিড়ে আবারও নৃশংস হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ১৭ জন ফিলিস্তিনি। এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন।
এর আগে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের সংখ্যা ১২ বলে জানানো হয়েছিল। ইসরায়েল এর আগেও কয়েক দফায় গাজায় সাহায্যপ্রার্থীদের ওপর এই ধরনের হামলা চালিয়েছে। রোববার (৩১ মার্চ) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার আল কুয়েত গোলচত্বরে হামলায় নিহতের সংখ্যা ১২ জন থেকে বেড়ে ১৭ জনে পৌঁছেছে। হামলায় আরও প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনিরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজার ওই মোড়ে জড়ো হচ্ছে এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তারা একের পর এক ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছে।
এর আগে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট বলেছিল, গত শুক্রবার একই গোলচত্বরে সাহায্য বিতরণের সময় বন্দুক হামলায় পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। সেসময় হাজার হাজার মানুষ সেখানে ময়দা এবং অন্যান্য সরবরাহ বহনকারী ট্রাকগুলোর আসার অপেক্ষায় জড়ো হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ত্রাণ বিতরণের তত্ত্বাবধানকারী গাজাবাসীরা ফাঁকা গুলি চালায়, তবে ওই এলাকায় ইসরায়েলি সৈন্যরাও গুলি চালায় এবং কিছু চলন্ত ট্রাক খাবার নেওয়ার চেষ্টা করা লোকেদের আঘাত করে। এতেই হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে।
এদিকে হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা মেডিক্যাল টিম এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের সহায়তার হতাহতদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার সংগ্রামের ‘বেদনাদায়ক দৃশ্য’ বর্ণনা করেছেন। এমনকি হামলার পর কিছু আহত লোক মাটিতেও পড়ে ছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এর আগে খাদ্য ও সহায়তা সরঞ্জাম সরবরাহকারী ট্রাকের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর একাধিক বার বড় পরিসরে হামলা চালিয়েছে এবং এতে বহু সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা অবশ্য আরও বেশ কয়েকটি আক্রমণের তথ্য সামনে এনেছে। সংস্থাটি বলছে, সালাহ আল-দিন স্ট্রিটের ওয়াদি গাজা সেতুর কাছে ইসরায়েলি হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগাজি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা এবং মধ্য গাজার আল-বুরেজি শরণার্থী শিবিরে কামানের গোলাবর্ষণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ইসরায়েলি আর্টিলারি জাবালির পূর্বের রাস্তায় পাশাপাশি উত্তর গাজার বেত হানুনেও আঘাত করেছে। এদিকে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এবং দক্ষিণে খান ইউনিসে বিমান হামলা এবং কামান হামলা চালিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটির সংবাদদাতারা বলেছেন, দেইর আল-বালাহের আল আকসা শহীদ হাসপাতালের আশপাশ থেকে ভারী গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে গাজার মিডিয়া অফিস বলেছে, গাজার এই চিকিৎসা অবকাঠামোটিতে ইসরায়েলি অভিযান হয়নি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বিভিন্ন অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি প্রাণ হারান।
এরপর ওইদিন থেকেই গাজায় বর্বর হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৩৩ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় এক লাখ মানুষ।
৭ অক্টোবর ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি আরও ২৫০ জনকে ধরে গাজায় নিয়ে আসেন হামাসের যোদ্ধারা। যারমধ্যে ১০৫ জনকে গত নভেম্বরে এক সপ্তাহব্যাপী চলা যুদ্ধবিরতিতে ছেড়ে দেয় তারা।
ইসরায়েলের বিশ্বাস হামাসের কাছে এখনো ১৩০ জিম্মি রয়েছে। যারমধ্যে ৩৩ জন ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন।