গাজায় ক্ষুধা-অপুষ্টির নিষ্ঠুরতায় ভুগছে হাজার হাজার মানুষ: জাতিসংঘ
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।
এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজায় হাজার হাজার মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টির নিষ্ঠুরতায় ভুগছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। একইসঙ্গে গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবিও জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে খাদ্য বিতরণ বন্ধ করার পরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘গাজার হাজার হাজার মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টির নিষ্ঠুরতায় ভুগছেন এবং যখন তাদের সহায়তা বাড়ানো দরকার তখন সাহায্য বিতরণ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
এছাড়া গত সোমবার ডব্লিউএফপি এবং জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের একটি যৌথ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গাজার উত্তরে পরিস্থিতি ‘বিশেষ করে খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে’।
ডব্লিউএফপি বলছে, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে, দুই বছরের কম বয়সী ১৫ শতাংশেরও বেশি শিশু তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ২৯ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে ডেনিস ফ্রান্সিস লিখেছেন, ‘আমি আমার নিজের এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির জন্য আবারও দাবি করছি। যুদ্ধবিরতি হওয়াটা এখন নিষ্পাপ শিশুদেরসহ সাধারণ মানুষের জীবন ও মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার গাজার উত্তরাঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। আর এরপরই গাজার মানুষের দুরাবস্থা নিয়ে সরব হলেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি।
গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘লাইভ-সেভিং’ খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়ে ডব্লিউএফপি বলেছে, ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণে তাদের সহায়তা কনভয়গুলো সম্পূর্ণরূপে বিপর্যয় এবং সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, এই সিদ্ধান্তটি সহজভাবে নেওয়া হয়নি। তাদের সদস্যরা ব্যাপক ভিড়, বন্দুকযুদ্ধ এবং লুটপাটের সম্মুখীনও হয়েছেন।
এছাড়া জাতিসংঘ গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলে আসছে। ডব্লিউএফপি বলেছে, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে এই ভূখণ্ডে ‘ক্ষুধা ও রোগের দ্রুত ছড়িয়ে’ পড়ার প্রমাণ রয়েছে।
গত মাসে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, অন্তত ৩ লাখ মানুষ এখনও উত্তর গাজায় রয়েছেন যারা বেঁচে থাকার জন্য তাদের সহায়তার ওপর নির্ভর করছেন।
মূলত তীব্র সংঘাতের কারণে গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ হয়ে থাকে খুবই কম। এছাড়াও অল্প পরিমাণে যে সহায়তা বিতরণ হয় সেটিও আবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা ছাড়পত্রের ওপর নির্ভরশীল।