তোপের মুখে ওয়াক্ফ আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত
ভারতে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করা সংশোধিত ওয়াক্ফ আইন কার্যকরে আপাত বিরতি দিল দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আইনটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারার কার্যকারিতা স্থগিত রাখার আদেশ দেয়।
এই আদেশের ফলে আপাতত নতুন করে কোনো সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ ঘোষণা করা, বোর্ডে সদস্য নিয়োগ এবং ওয়াক্ফ সম্পত্তির মালিকানায় পরিবর্তন আনা যাবে না। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, পূর্বে ‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসা জমির মালিকানা সম্পর্কিত অবস্থান পরিবর্তন করা যাবে না।
বুধবার থেকে সংশোধিত ওয়াক্ফ আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল হওয়া ৭৩টি আবেদনের শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টে। এর মধ্যে পাঁচটি আবেদন প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, বাকি আবেদনগুলোর নিষ্পত্তি এই শুনানির মাধ্যমে ধরে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “শত বছর আগে গড়ে ওঠা ওয়াক্ফ সম্পত্তির মালিকানা প্রমাণে লিখিত কাগজপত্র না থাকাও বাস্তবতা। কিন্তু তাই বলে পূর্ববর্তী আদালতের স্বীকৃতি কি নতুন আইনে বাতিল হয়ে যাবে?”
সংশোধিত আইন অনুযায়ী, সরকারি জমি বা বিরোধপূর্ণ জমিকে ওয়াক্ফ হিসেবে ঘোষণার সুযোগ থাকছে না। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধান যুক্ত হওয়ায় ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে মুসলিম সমাজে।
প্রধান বিচারপতি সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, “আপনারা কি হিন্দু দেবোত্তর বোর্ডে মুসলিম সদস্য নিয়োগ করবেন?”—এই প্রশ্ন আদালতের উদ্বেগের গভীরতাকে স্পষ্ট করে তোলে।
আদালতে প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল ও অভিষেক মনু সিংভি জানান, ভারতে অন্তত আট লাখ ওয়াক্ফ সম্পত্তির অর্ধেকই ‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ আওতায় পড়ে। নতুন আইনে এই সম্পত্তিগুলো হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতের কাছে সময় চেয়ে জানান, ওয়াক্ফ বোর্ড ও কাউন্সিলের সদস্য নিয়োগ সংক্রান্ত ধারা আপাতত স্থগিত রাখা হবে। আদালত তার আবেদনে সাড়া দিয়ে সরকারের লিখিত ব্যাখ্যার জন্য এক সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করে।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হন। ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যে আইন কার্যকর না করার ঘোষণা দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি এই অবস্থানকে ‘ধর্মীয় তোষণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে, সিপিআইসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সংগঠন যেমন জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দ ও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এই আইন বাতিলের দাবি তুলেছে। কেউ কেউ আইনটির সম্পূর্ণ রদ চাইলেও অনেকে বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
সবশেষে, আদালত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে সিদ্ধান্ত নেবে— আদালতের রায়ে স্বীকৃত ওয়াক্ফ বাতিল হবে কিনা, বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বৈধতা এবং বিতর্কিত জমিকে ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য করার সুযোগ থাকবে কি না।
