বিএসএমএমইউ’র গবেষণা
করোনায় আক্রান্তদের ৮২ শতাংশ অমিক্রন
দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৮২ শতাংশ অমিক্রন এবং ১৮ শতাংশ ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত। সংক্রমণের প্রায় ৩ সপ্তাহ পর তথ্য বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা।
বিএসএমএমইউ’র শহীদ ডা. মিল্টন হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জিনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক (সুপারভাইজার) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগী এবং বর্হিবিভাগের রোগীর মধ্যে অমিক্রন ধরন ৮২ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ ডেল্টা ধরন পেয়েছি। এ সময়ে অমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিএ.১, বিএ.১.১, বিএ.২ পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিএ.২ বেশি সংক্রামক।
এদিন কোভিড-১৯ এর ৯৩৭টি জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার ফলাফল প্রকাশ বিএসএমএমইউ।
ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছরের ২৯ জুন থেকে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে। গবেষণায় বাংলাদেশের সব বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করা হয়। মোট ৯৩৭টি কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর ন্যাজোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয় এবং জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সঙ্গে রোগীর তথ্য-উপাত্তের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়। বিএসএমএমইউ-এর গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বয়স পর্যন্ত রোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে বর্তমানে ৩০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী রোগীদের সংখ্যা বেশি। শিশুদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমণ পাওয়া গেছে। পুরুষ ও নারীদের আক্রান্তের হার প্রায় সমসংখ্যক। ৪৯ শতাংশ পুরুষ ও ৫১ শতাংশ নারী আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের কো-মরবিডিটি রয়েছে, যেমন ক্যান্সার উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস তাদের রোগের প্রকটতা বেশি।
ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে দেখা যায়, মোট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ ছিল ভারতীয় ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট। ১ শতাংশ হয়েছিল সাউথ আফ্রিকান বা বেটা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ, ১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আমরা পেয়েছি মরিসাস ভ্যারিয়েন্ট বা নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৯৯ দশমিক ৩১ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট, একটি করে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন—আলফা বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এবং বেটা বা সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এবং অন্য একটি স্যাম্পল শনাক্ত হয় ২০বি ভ্যারিয়েন্ট, যা সার্স-কোভ-২ এর একটি ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট। গবেষণায় প্রধাণত ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ডেলটার ৮টি সাব-ভ্যারিয়েন্ট পর্যবেক্ষিত হয়েছে। সেগুলো হলো—এওয়াই.১২২, এওয়াই, এওয়াই.১৩১, এওয়াই.২৬, এওয়াই.২৯, এওয়াই.৩০, এওয়াই.৩৯, এওয়াই.৪।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরও বলেন, ডেল্টা ধরনের চেয়ে অমিক্রন অনেক বেশি সংক্রামক। অমিক্রন ধরন জিনোমের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশির ভাগ ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে হয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বেশির ভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়ে থাকে। স্পাইক প্রোটিনের গঠনগত বদলের জন্যই প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও অমিক্রন সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।