বিশ্বে সবচেয়ে দামি ও বিপদজনক রক্তের গ্রুপ কোনটি?
ছবি সংগৃহিত
আমরা সবাই জানি, রক্তের চারটি গ্রুপ-এ, বি, ও, এবি। এরপর রয়েছে আরএইচ ফ্যাক্টর। মানে নির্দিষ্টি গ্রুপের রক্তের পজিটিভ ও নেগেটিভ। তবে এসবের বাইরে আরেকটি বিশেষ গ্রুপ রয়েছে। সেটি হচ্ছে ‘গোল্ডেন ব্লাড’ বা ‘সোনালি রক্ত’।
আপনি জানেন কি এমন একটি রক্তের গ্রুপ রয়েছে যা প্রতি ৬০ লাখ জনের মাঝে মাত্র ১ জনের শরীরে রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে এটিই হল বিশ্বের বিরলতম গ্রুপের রক্ত। আর রক্তের এই গ্রুপটিকে বলা হয় গোল্ডেন ব্লাড। বর্তমানে বিশ্বে মাত্র ৪৩ জনের দেহে এটি রয়েছে। অবশ্য কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন, এই সংখ্যা ৪৯। সর্বোপরি বলা যায়, ৫০ জনেরও কম মানুষের এই গ্রুপের রক্ত আছে। যাদের শরীরে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত রয়েছে যেমন, ও-নেগেটিভ, এবি নেগেটিভ, বি-নেগেটিভ ইত্যাদি; বিপদে পড়লে বা মেডিকেল ইর্মাজেন্সির সময় এসব গ্রুপের রক্ত খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হয়।
‘গোল্ডেন ব্লাড’ কী?
সাধারণত রক্ত পজিটিভ নাকি নেগেটিভ হবে, তা নির্ভর করে আরএইচ প্রোটিনের ওপর। এটি থাকলে রক্ত পজিটিভ, অন্যথায় নেগেটিভ। তবে ১৯৬০ সালে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে বিশেষ রক্তের খোঁজ পাওয়া যায়। যার আরএইচ প্রোটিন এমন ছিল যে, সেটিকে পজিটিভ বা নেগেটিভ কোনও গ্রুপেই ফেলা যাচ্ছিল না। পরে চিকিৎসকরা এই রক্তের নাম দেন ‘গোল্ডেন ব্লাড’ বা ‘সোনালি রক্ত’। একে আরএইচ-নুলও বলা হয়।
যে কারণে রক্ত এমন হয়
মূলত জিনগত কারণে কারও রক্ত সোনালি হয়। আগের প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে এই ধারা প্রবাহিত হতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়। কয়েক প্রজন্ম পর হঠাৎ একজনের শরীরে তা দেখা যেতে পারে।
যাদের থেকে রক্ত নিতে পারবেন এই গ্রুপের মানুষ
শুধু এই ধরনের মানুষের রক্ত পেতে পারেন তারা। অন্য কারও রক্ত নিলে শরীরে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে।
সবচেয়ে দামি রক্ত
এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও দুর্লভ রক্ত। কারণ, গোল্ডেন ব্লাডের অধিকারী মানুষ বিশ্বের যেকোনও মানুষকে রক্ত দিতে পারেন। বেশ কয়েকটি বিরল রোগের চিকিৎসায় সোনালি রক্ত কাজে লাগে। তাই প্রকৃতপক্ষেই এটি গোল্ডেন ব্লাড।
সর্বপ্রথম ১৯৬১ সালে এক অস্ট্রেলিয়ার নারীর দেহে এ ধরনের রক্তের গ্রুপের দেখা মিলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে রক্তের মধ্যে RH ফ্যাক্টর এর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। এরপর দেখা হয় এটি এবি নাকি ও-গ্রুপের রক্ত।
মানুষের শরীরে ৬১ রকম RH এন্টিজেন থাকে। RH এন্টিজেন থাকবে কি থাকবে না বা কি পরিমানে থাকবে সেটি অনেকটা নির্ভর করে জিনগত কারণে উপরে। আগের প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে এটি প্রবাহিত হতে পারে।
বিরল কিছু চিকিৎসায় এ রক্ত কাজে আসতে পারে। কাজেই এটিকে গোল্ডেন ব্লাড বা সোনালী রক্ত বলা হয়। বিগত ৫৮ বছরের মাত্র ৪৩ জন ব্যক্তির শরীরে বিরল রক্তের গ্রুপ পাওয়া যায়। ৪৩ জনের মধ্যে মাত্র ৯ জন নিয়মিত রক্ত দান করে থাকেন। তারা রক্ত দিতে পারলেও সবার থেকে রক্ত নিতে পারেন না। রক্ত নিলে শরীরে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে। এজন্য তাদের সাবধানে জীবনযাপন করতে হয়।