শীতে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ছে? যা করতে পারেন
ছবি সংগৃহিত
শীত অনেকেরই প্রিয় ঋতু। কিন্তু শারীরিক সমস্যা এই ঋতুতেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশির বাইরেও বেশিরভাগ মানুষ এই ঋতুতে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সেরোটোনিনের মতো নিউরোকেমিক্যালের তারতম্য ঘটে। এই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে শীতে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। এছাড়াও ঠান্ডা আবহাওয়ায় নার্ভ এবং ব্লাস ভেসেলগুলোতেও নানা সমস্যা তৈরি হয়। এটাও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
মাইগ্রেনের সমস্যায় ক্রমাগত এবং অসহ্য মাথার যন্ত্রণা হয়। এটি একটি স্নায়ুবিক রোগ। মাইগ্রেনের প্রধান উপসর্গগুলি হল স্থায়ী মাথাব্যথা, মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা হওয়া, আলো ও শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং বমি বমি ভাব। মাইগ্রেনের সমস্যায় মাথার একদিকে মারাত্মক যন্ত্রণা হয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই মাইগ্রেনের যন্ত্রণা শুরু হলে বসে থাকা কষ্টকর হয়ে যায়। এই শীতে মাইগ্রেনের সমস্যা এড়াতে বিশেষ কিছু টিপস মেনে চলুন।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা
শীতে মানুষের মধ্যে জল কম খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। শরীরে জলের অভাব মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শরীর হাইড্রেটেড থাকলে মাইগ্রেনের ঝুঁকি কমে যায়। তাই শীতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। দিনে তিন থেকে চার লিটার জল পান করুন।
শরীর গরম রাখুন
অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমে গেলে শরীরকে গরম রাখা জরুরি। কারণ ঠান্ডা আবহাওয়া মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই শীতবস্ত্র ব্যবহার করুন। এছাড়াও আপনি গরম স্যুপ, গরম পানীয় পান করতে পারেন। এতে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকবে এবং মাইগ্রেনের সমস্যা এড়াতে পারবেন।
ঘুম জরুরি
সময়ের পরিবর্তনের কারণে এবং শীতে সূর্যালোকের কারণে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে মাথার যন্ত্রণা বেড়ে যায়। তাই ঘুম যেন ভাল হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
রোদের আলোর সংস্পর্শে থাকা
শীতকালে স্বাভাবিকভাবেই রোদের আলো পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে যায়। তবে যখনই রোদের দেখা পাওয়া যাবে, চেষ্টা করতে হবে রোদের আলো পোহানোর জন্য। মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ার জন্য রোদের আলো তথা ভিটামিন – ডি এর অভাব সবচেয়ে বেশি দায়ী। শীতের মধ্যে যথাযম্ভব ভিটামিন-সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং শীতকালীন সবজি ও ফল রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোন বেলায় খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না। গবেষণা সুপারিশ করে, খাবার না খাওয়ার ফলে মাইগ্রেনের ব্যথা তীব্র আকারে দেখা দেয়।
নিজেকে রাখতে হবে অ্যাকটিভ
শীতকালে যদিও কম্বল মুড়ি দিয়ে থাকতে ভাল লাগে, কিন্তু সেই অভ্যাস যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। নিজেকে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক কাজের সঙ্গে জড়িত রাখার চেষ্টা করতে হবে। সেটা হতে পারে হাঁটাচলা, সাইকেল চালানো কিংবা দড়িলাফ দেওয়া।
সোডিয়াম গ্রহণ থেকে দূরে থাকা
শীতকালে গরম পানীয় ও স্যুপ খেতে দারুণ ভালোলাগে। শীতকালীন সবজী ও মুরগীর মাংসের স্যুপ ধোঁয়া ওঠা স্যুপ যেমন সুস্বাদু, তেমনই স্বাস্থ্যসম্মত। তবে খেয়াল রাখতে হবে টেস্টিং সল্টের বিষয়ে। সোডিয়াম ও MSG অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করা হলে মাইগ্রেনের ব্যথা বেড়ে যায়।
শরীরচর্চা করুন
শীতে অলসতা আসে। কিন্তু, শরীরচর্চা না করলে আপনি মাইগ্রেনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন না। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে শরীরচর্চা করুন। এতে আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং শরীরও সুস্থ থাকবে।
যে সমস্ত খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে-
* ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত ও আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক
* বিভিন্ন ফল বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে
* সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়
* হার্বাল টি; হার্বাল টির মধ্যে বেছে নিতে পারেন গ্রিন টি।
* ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
* তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম রয়েছে
* আদার টুকরো বা রস দিনে ২ বার পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন।
কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন
* চা, কফি, কোমলপানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন টমেটো ও টকজাতীয় ফল খাবেন না।
* গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি
* আপেল, কলা ও চিনাবাদাম
যদি এই সব মেনে চলার পরও মাথা যন্ত্রণা আটকানো না যায়, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।কারও মাইগ্রেন থাকলে, শীতের আগেই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিলে ভাল।