ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে যা যা করবেন
ছবি:সংগৃহীত
বর্তমানে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের মতো। যদিও আক্রান্তদের অর্ধেকেরও বেশি রোগটি সম্পর্কে জানেন না। প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর 'বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস' পালন করা হয়। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ডায়াবেটিস সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করাই এই দিবসের প্রধান লক্ষ্য। সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হলো, ডায়াবেটিস রোগীরা নিজেদের আক্রান্তের ব্যাপারটি যেমন জানেন না, তেমনি আক্রান্ত হওয়ার পরও অনেকেই নিয়মও মানেন না।
ডায়াবেটিস একটি বিপাকজনিত রোগ। যার প্রভাবে শরীরে ইনসুলিন কমে যায় অথবা ইনসুলিন শরীরে কাজ করতে পারে না। তখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগটি সাধারণত কয়েক ধরণের হয়ে থাকে, টাইপ-১, টাইপ-২, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও অন্যান্য।
এ দেশে টাইপ-১ রোগীর সংখ্যা কম। মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধরা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও যাদের ওজন বেশি এবং যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, তাদেরও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কারা আক্রান্ত হন
যাদের বাবা, মা, ভাই-বোন বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়–স্বজনদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের এই রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যাদের হৃদরোগ, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা এই রোগে আক্রান্ত হন। এ ছাড়া অনেক বেশি জাঙ্কফুড খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালোরি ও ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর কারণে তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, মানসিক চাপে যারা থাকেন, তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
লক্ষণসমূহ
১. ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা।
২. বেশি বেশি পিপাসা।
৩. ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া।
৪. চোখে ঝাপসা দেখা।
৫. ওজন কমে যাওয়া।
৬. ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা।
৭. শরীরের বিভিন্ন অংশের কাঁটাছেড়া সহজে সেরে না ওঠা।
৮. হাত-পায়ে ব্যথা বা মাঝে মাঝে অবশ হয়ে যাওয়া।
ডায়াবেটিস নির্ণয়
ডায়াবেটিস রোগটি নির্ণয়ের জন্য অনেকগুলো পদ্ধতি আছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে গ্লুকোজ সহনশীলতা পরীক্ষা (glucose Tolerance test)। এর জন্য রোগীকে সকালে খালি পেটে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খেয়ে ২ ঘণ্টা পর রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। এই টেস্টের মাধ্যমে সঠিকভাবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস নির্ণয় করা যায়।
ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস শরীরে নানা প্রকার জটিলতা তৈরি করে। ডায়াবেটিস সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না হলে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, যৌন অক্ষমতা, অন্ধত্ব অথবা চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো রোগ হতে পারে।
চিকিৎসা
ডায়াবেটিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৪টি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১. শৃঙ্খলা: ডায়াবেটিস রোগীদের সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা ও সঠিক সময়ে ঘুমানো প্রয়োজন। এ ছাড়া নিয়মিত হাঁটাহাঁটিও করতে হবে।
২. খাবার: ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার নিমন্ত্রণ করতে হবে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। খাদ্য তালিকা থেকে শর্করা বা মিষ্টিজাতীয় খাবারকে পরিহার করতে হবে।
৩. ঘুম: ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ঘুম খুব জরুরি। প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার কম ঘুম হলে ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. ওষুধ: নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে। ডায়াবেটিসের ওষুধ মূলত দুই ধরণের। খাবার ট্যাবলেট ও ইনসুলিন ইনজেকশন। বিভিন্ন কারণে যখন কোনো রোগীকে খাবার ওষুধ দিয়ে ডায়াবেটিস বা রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না, তখন ওষুধের সঙ্গে ইনসুলিন ইনজেকশনও নিতে হয়।
প্রতিরোধ
১. ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও সুষম খাদ্য গ্রহণ খুব জরুরি।
২. নিয়মিত হাঁটতে হবে।
৩. শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৪. অতিরিক্ত তেল, মসলাজাতীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
৫. শাকসবজি, ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
৬. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৭. ধূমপান পরিহার করতে হবে।
লেখক: মেডিকেল অফিসার, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল