মারা গেছেন শূকরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা মার্কিন সেই নাগরিক
অস্ত্রোপচারের ৪০ দিন পর মারা গেছেন দেহে শূকরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা মার্কিন নাগরিক লরেন্স ফসেট। চিকিৎসাশাস্ত্রের লিখিত ইতিহাসে বিশ্বের দ্বিতীয় হিসেবে নিজ দেহে শূকরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করিয়েছিলেন মার্কিন এই নাগরিক । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) মারা যান তিনি। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার দেহে জিনগতভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা শূকরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপিত করা হয়েছিল। ২০ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের পর প্রথম কিছু দিন তিনি সুস্থ থাকলেও সম্প্রতি হৃদযন্ত্রের কাজে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। অস্ত্রোপচারের পর দেড় মাস বা ছয় সপ্তাহ তিনি সুস্থ থাকলেও সোমবার মারা যান।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর ফসেটের শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হয়েছিল। ফিজিক্যাল থেরাপির পাশাপাশি সময় কাটাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। স্ত্রী অ্যানের সঙ্গে তাসও খেলছিলেন। সম্প্রতি তার দেহে প্রতিস্থাপিত হৃদযন্ত্র প্রাথমিকভাবে প্রত্যাখ্যানের নির্দেশ পাঠাতে শুরু করে। এই প্রতিকূলতা চিরাচরিত মানবঅঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও থাকে। চিকিৎসকদের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি মারা যান।
প্রবীণ নৌ সেনা ফসেট ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের সাবেক ল্যাব টেকনিশিয়ান। শারীরিক প্রতিকূলতার জন্য তার দেহে চিরাচরিত হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি। হার্ট ট্রান্সপ্লান্টেশনের আগেও হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল দুই সন্তানের বাবা ফসেটের ক্ষেত্রে।
তার স্ত্রী অ্যান বলেন, জানতাম আমাদের সঙ্গে তিনি অল্প সময়ের জন্যই রয়েছেন। অন্যদের জন্য কিছু করার এটাই তার কাছে শেষ সুযোগ। উনি যে এতদিন জীবিত থাকবেন, সেটি নিজেই কোনোদিন আশা করেননি।
চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায়, মানবদেহে প্রাণীদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন। প্রতিস্থাপনের জন্য মানবঅঙ্গের সংকট ক্রমাগত লেগেই থাকে। সেক্ষেত্রে জেনাট্রান্সপ্লান্টেশনকে বিকল্প পথ হিসেবে ভাবা হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া প্রতিবন্ধকতায় পূর্ণ। কারণ মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি অন্য প্রাণীর প্রতিস্থাপিত অঙ্গকে প্রত্যাখ্যান করতে থাকে। বিজ্ঞানীদের আশা, একদিন জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন সংক্রান্ত সমস্যা দূর হবে।