হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়ে কেন ?
ছবি সংগৃহিত
নাকের প্রধান কাজ হলো শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া। হঠাৎ নাক থেকে রক্ত পড়তে দেখলে স্বাভাবিকভাবেই ভয় পায় মানুষ। নাক দিয়ে রক্ত পড়াকে বলা হয় এপিসট্যাক্সিস। এটি নিজে কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণমাত্র। যেকোনো বয়সের নারী বা পুরুষ এ সমস্যায় পড়তে পারেন। এটি নাকের এক পাশ অথবা উভয় পাশ দিয়ে হতে পারে।
কারও কারও হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। ভয় না পেয়ে বরং কিছুক্ষণ নিয়ম মেনে নাক চেপে ধরে রাখলে সাধারণত রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। তবে রক্তপাতের কারণ খুঁজে বের করা উচিত। কারণ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে রক্ত পড়ার আশঙ্কা অনেকাংশে থাকে না। নাকে অনেক রক্তনালি থাকে, যা নাকের ঝিল্লি আবরণে এমনভাবে থাকে একটু আঘাত লাগলেই রক্তপাত হতে পারে। সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়ায় এ সমস্যা বেশি হতে পারে।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা এপিসট্যাক্সিস সমস্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ সমস্যা হলেও অনেক সময় এটি জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। একে মেডিকেল ইমারজেন্সি হিসেবে দেখা হয়। সাধারণত ৬০ শতাংশ মানুষ জীবনে কোনো না কোনো সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যার সম্মুখীন হয়।
কেন নাক দিয়ে রক্ত পড়ে ?
কোনোভাবে নাকে বা নাকের ভেতরে আঘাত পেলে, নাকের বা সাইনাসের সংক্রমণ অথবা নাকের বিভিন্ন টিউমার; ইনফেকশন, ট্রমা, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, নন-অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাদক সেবন ও বংশগত কিছু রক্তের সমস্যাও নাক থেকে রক্ত পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি করে। তবে এসব ক্ষেত্রে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য উপসর্গ থাকে। নাকের ঝিল্লি শুকিয়ে গেলে, ফেটে গেলে বা সেখানে শক্ত আবরণ সৃষ্টি হলে স্বাভাবিকভাবেই নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে। রক্ত জমাটবাঁধা দূর করার ওষুধ গ্রহণ করলে নাক থেকে রক্ত নির্গত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আবার বৃদ্ধ বয়সে রক্তনালির সংকোচন প্রসারণশীলতা কমে যাওয়ার কারণেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
অন্যান্য যেসব কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়ে ?
⊲ ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
⊲ উচ্চ রক্তচাপ।
⊲ রক্তনালির কিছু জন্মগত ত্রুটি।
⊲ মাসিকের সময় এবং গর্ভাবস্থায় জটিলতা।
⊲ জন্ডিস বা লিভার প্রদাহ, লিভার সিরোসিসের মতো লিভারের বিভিন্ন অসুখ।
⊲ রক্তের রোগ, যেমন অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, হিমোফিলিয়া, থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, পারপুরা ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা :
কী কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে সেটি নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হয়। নাকের সামনের দিক থেকে রক্তপাত হলে খুব দ্রুত তা বন্ধ করা যায় কিন্তু পেছন বা ভেতরের দিক থেকে রক্তপাত হলে বহুক্ষেত্রে তা বন্ধ করতে অনেক সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, নাকের এন্ডোস্কপির দরকার পড়ে।
প্রতিরোধ :
১। নাক খুঁটবেন না। এতে হুট করে নাক থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়।
২। ঊর্ধ্ব-শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, অর্থাৎ সর্দি-কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। নাকের হাড় বাঁকা থাকলে তারও চিকিৎসা নিন। সময়মতো এসবের চিকিৎসা না করালে হঠাৎ করে নাক থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়।
৩। শিশুদের খেয়াল রাখুন। ঘন ঘন এক নাকে দুর্গন্ধযুক্ত সর্দি হওয়া এবং এর সঙ্গে রক্ত যাওয়া, কোনো ওষুধে ভালো না হওয়া মানে হলো, শিশু সবার অলক্ষ্যে নাকে কিছু ঢুকিয়েছে।
৪। বয়স্ক ব্যক্তিরা নিয়মিত রক্তচাপ মাপান, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং নিয়মিত ওষুধ খান। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ নাক দিয়ে রক্ত আসার অন্যতম কারণ। তাই যখনই এমন হবে, আগে রক্তচাপ মেপে নিতে হবে।
৫। যাঁদের নাকের ভেতর শুকিয়ে যায় বা ময়লা জমে, তাঁরা খোঁচাখুঁচি না করে দিনে তিন থেকে চারবার নরসল ড্রপ চার থেকে পাঁচ ফোঁটা করে উভয় নাকের ছিদ্রে দিয়ে অথবা ভ্যাসলিন ব্যবহার করে নাক আর্দ্র রাখতে পারেন।
লেখক : নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, রেজিস্ট্রার, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।